পাঠকের কথা

আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আমাকে নতুন জীবণ দান করেছেন–মো: হাসানুজ্জামান, এসপি কক্সবাজার

ঝিনাইদহের চোখ-

একটা আনপ্রেডিক্টেবল রোগ এটি। মানসিক এবং শারীরিভাবে বেশ দুর্বল করে দেয়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে ঝুঁকি নাই। তবে রোগটি নিয়ে হেলাফেলা করলে জীবন বিপন্ন হয় এটা সবারই জানা। মানসিকভাবে যদি শক্ত থাকা যায় তাহলে ঝুঁকি কম। এরোগে আমার অবশ্য শরীরের তাপমাত্রা কখনোই ৯৯ ডিগ্রীর উপর উঠে নাই। কৃএিম অক্সিজেনও আমার প্রয়োজন পড়ে নাই। তবে বেশ কয়েকদিন মুখে কোন রুচি ছিলনা এবং স্বাদ/ গন্ধ পেতাম না।

কৃতজ্ঞতা জানাই কক্সবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এর অধ্যাপক ডাক্তার অনুপম বড়ুয়া, যিনি ছিলেন আমার প্রধান চিকিৎসক। আমি ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু তিনি আমার শারীরিক অবস্থা দেখে বললেন যে, কক্সবাজারে আপনার চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হবে না। কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই একই হাসপাতালের তরুণ কিন্তু Covid চিকিৎসায় অত্যন্ত দক্ষ ডাক্তার ইয়াসির আরাফাতের প্রতি। চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা তিনি।

আমার প্রতি এত যত্ন নিয়েছেন, পাশাপাশি সাহস এবং মনোবল যুগিয়েছেন যা আমি কখনই ভুলতে পারব না। আমি মূলত: এখানকার একটি প্রাইভেট হাসপাতাল (ইউনিয়ন হাসপাতাল) ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি।একটানা প্রায় ২০ (বিশ)দিন ছিলাম ওখানে।

হাসপাতালের চেয়ারম্যান জনাব আরিফ মাওলা ও এমডি জনাব নুরুল হুদা সম্পর্কে সম্পর্কে দুটি কথা না বললে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব। সকাল, বিকাল, রাত তিন বেলা উনারা আমাকে দেখে যেতেন। চিরসবুজ মনের অধিকারী এই দুটি মানুষ নিজেদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে আমার পাশে এসে বসে থাকতেন এবং গল্প করতেন। এতে কিছুটা সময় আমার কাটত এবং কষ্টটাও কিছু লাঘব হতো। হাসপাতালের ডিউটি ডক্টরস, ম্যানেজার , নার্স, আয়া, থেকে শুরু করে প্রতিটি সদস্যই আমার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এবং যত্নশীল ছিলেন। নিজের পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে আমি সরকারি বাংলোয় না থেকে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলাম।

কৃতজ্ঞতা জানাই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাদের সাথে আমার এখনো তেমন/ আনুষ্ঠানিক পরিচয় হয়নি, তারাও আমাকে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন। সরাসরি হাসপাতাল এসে আমাকে দেখার জন্য ভিড় করেছেন।

অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম(বার), মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের প্রতি, COVID আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আমার শারীরিক অবস্থাার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম(বার), পিপিএম( বার), মাননীয় ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ মহোদয় এর প্রতি, তিনি প্রতিদিন দুইবার করে আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন। রেঞ্জ অফিসের অন্য দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি মহোদয় নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিয়েছেন।

আমার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জনাব খন্দকার লুৎফুল কবির, মাননীয় পুলিশ কমিশনার, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ মহাোদয়ের প্রতি। অশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান,বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)স্যারের প্রতি। শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় শিফট করতে হলে যা যা সহযোগিতা লাগবে সে বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেছিলেন তিনি।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মাননীয় অতিরিক্ত আইজিপি এপিবিএন মহোদয়ের প্রতি। ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক জনাব আতিক স্যার কে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাসপাতালে এসে বেশ কিছুক্ষন সময় আমার পাশে বসে ছিলেন এবং আমার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছেন ও সাহস যুগিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা জানাই, আমার পুলিশ ব্যাচমেট, বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশ সহকর্মীগণ, জনাব সরোজ কুমার নাথ, জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ মহোদয়, সকল শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু এবং পরিচিতজনদের। তারা আমাকে ফোন করে, মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আমার জন্য দোয়া করেছেন।

এবার আসি আমার পূর্ববর্তী কর্মস্থল ঝিনাইদহ জেলার মানুষের কথা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি ফোন এসেছে তাদের কাছ থেকে। সেখানকার মসজিদে আমার রোগ মুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয়েছে। উক্ত জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ, সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ আমার ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছেন। মাননীয় পাঁচজন সংসদ সদস্য একাধিকবার আমাকে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আরোগ্য কামনা করেছেন।

আমার শুভানুধ্যায়ী এবং অতি আপনজন শৈলকুপার কৃতিসন্তান প্রখ্যাত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার অলোক সাহা, তিনি কয়েকবার আমাকে ফোন করেছিলেন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর। আমি তখন বেশ অসুস্থ কারো ফোনই রিসিভ করি না। হঠাৎ দেখি একদিন তিনি সশরীরে কক্সবাজারে হাসপাতাল কক্ষে হাজির। আবেগে আপ্লুত হয়ে সেদিন আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। ঘন্টাখানেক তিনি আমার কক্ষে অবস্থান করেছিলেন। চির কৃতজ্ঞ আমি এই অমায়িক ব্যবহারে অধিকারী ব্যক্তিত্বের প্রতি।

এমনকি ঝিনাইদহ থেকে একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি সরাসরি আমাকে দেখার জন্য গত ২২/১০/২০২০ ইং কক্সবাজারে আমার বাসায় এসে চলে এসেছিলেন । আমি অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার সম্মানে দুপুরে একসাথে খাবার গ্রহণ করেছি, তার থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। আসলে আবেগের তাড়নায় এই কথাটি না বলে পারলাম না । আজকে বাসায় ঝিনাইদহের স্বনামধন্য তরুণ চিকিৎসক ডাক্তার জাকির তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন আমাকে দেখার জন্য।

কৃতজ্ঞতা ডাক্তার জাকির এর প্রতি, আমার করোনা আক্রান্তকালীন তিনি প্রতিদিন আমাকে অন্তত একবার করে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার পর্যায়(প্রয়োগকৃত ঔষধ ও ইনজেকশন ) নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার যে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

একইসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই কারণে যে, অনেক নিকটজন, পরিচিতজনের ফোন আমি রিসিভ করতে পারি নাই।

হে সম্মানিত ঝিনাইদহবাসী!!

আমি আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
আমি আপনাদেরই লোক।
এই পরিচয় আমার সদাই হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button