কালীগঞ্জক্যাম্পাসটপ লিড

টাকা নেই তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত ইমনের

সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াই মেধাবী ইমনের পরিবার পড়েছে এক ধরনের বিপাকে।

কারন তার বাবা ভক্তদাস সেলুনে কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালান। যে রোজগারে পবিরবারের সদস্যদের ঠিকমত খাবার জোগাড়ই হয় না। সেখানে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ ঢাকা শহরে রেখে লেখাপড়ার খরচ কিভাবে জোগাবেন এমন মহাচিন্তায় পড়েছেন তার হতদরিদ্র মা বাবা। ইমন দাসের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।

ইমন এ বছর শহরের সরকারী মাহতাব উদ্দীন ডির্গ্রী কলেজ থেকে এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখন সে অনার্সে ভর্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্ত বাড়ি থেকে ঢাকার মত ব্যয়বহুল শহরে থেকে কিভাবে খরচ যোগাবে তার পরিবার সে চিন্তায় পড়েছে।

সরেজমিনে মেধাবী ছাত্র ইমনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাত্র ২ শতক জমির মাটির ওপরে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা টিনের ছাউনির ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। এখান থেকে লেখাপড়া করেই এ পর্যন্ত তার শিক্ষাজীবনের সবকটি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছে।

মেধাবী ইমন দাস জানায়, আমার বাবা মা খুব বেশি লেখাপড়া জানেন না। তারপর তারা আমাদের দু,ভাইয়ের লেখাপড়া শেখাতে যে কষ্ট করেন তা দেখে আমার নিজেরই কষ্ট লাগে।

বাবা ভক্ত দাস জানান, ৬ সদস্যের সংসারে মা ক্যনসারের রোগী। একমাত্র আমিই সংসারের উপার্জনশীল ব্যক্তি। নিজে সারাদিন কাজ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসারই ঠিকমত চালাতে পারি না। এরমধ্যে শত অভাবের মাঝেও ইমন আর শিমন দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছি। ছোট ছেলে শিমন এস,এসসি পরীক্ষার্থী। আর ইমন জেএসএসসি, এসএসসি ও এইচ এসসি সকল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে এবছর অনার্সের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এখন ভর্তিসহ যাবতীয় খরচের টাকা জোগাড় করাটা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। ছেলে একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও ভর্তির টাকা জোগাড় করতে না পারাটা একজন বাবা হয়ে কষ্টকর ব্যাপার আর হতে পারে না।

ইমনের মা উষা রানী দাস জানান, অভাবের সংসারে দু’ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে সব সময় হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় সংসারের খাবার না কিনেও সন্তানদের লেখাপড়ার সামগ্রী কিনে থাকেন। কিন্ত এতোদিন একটা পর্যায়ে ছিল এখন কিভাবে ইমনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও খরচের টাকা জোগাড় করবেন সে কারনে তাদেরকে সব সময় চিন্তা করতে হচ্ছে। তিনি জানান, এতোদিন শিক্ষকেরা ও অনেক প্রতিবেশী ইমনকে ভালোবেসে সাহায্য করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গল্প যখন করা হচ্ছে তখন আমাদের মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকছে।

ইমনের প্রতিবেশি আব্দুস সামাদ জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির ভক্ত দাসের ছেলে এক অদম্য মেধার অধিকারী। তার আচার আচরন অন্য শিক্ষার্থীর জন্য বেশ অনুকরনীয়। তিনি আরও বলেন,ভক্ত দাস আসলেও একজন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। তারপরও তার ঘরে যে মেধাবী ছেলের জন্ম হয়েছে ঠিক যেন ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button