পাঠকের কথা

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা !–সবুর মিয়া

ঝিনাইদহের চোখঃ

ব্যবস্থাপনা কথাটি প্রত্যেকটা  ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে জড়িত । আমরা বলি, যে কাজে ভালো বা দক্ষ ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান,সেই কাজ অধিক সফল। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কত ভালোভাবে সফলতার সাথে পরিচালিত হবে তার পূর্ব ও প্রধান মানদন্ড ব্যবস্থাপনা কত দক্ষ ও উন্নত।  দক্ষ ও উন্নত, ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, একটা প্রতিষ্ঠান উন্নতির সর্বোচ্চ আসনে উপনীত হয়। দুধ ছাড়া যেমন দই কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া সফলতা অর্জন অনেকাংশে অসম্ভব।

বাংলাদেশের বহুবিধ প্রতিষ্ঠান দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, ব্যবস্থাপনার কি বেহাল দশা। ব্যবস্থাপনা সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দিয়েছে! ব্যবস্থাপনার কোন চেইন অফ কমান্ড আছে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে।

আমাদের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হল চিকিৎসা। হাসপাতালগুলোর বাস্তব চিত্র দেখলে মনে হয় এখানে কি আসলেই সুচিকিৎসা কামনা সম্ভব। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন সুস্থতার আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হাসপাতালে গেলে দেখা যায় কি বেহাল দশা! মিডিয়ার কল্যাণে জাতি জানতে পেরেছে বিভিন্ন নামী দামী ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলোতে রিপোর্টের আগেই ডাক্তার সাইন করে রাখে। ল্যাবে মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যাল এর ব্যবহার, অদক্ষ টেকনিশিয়ান।  আমাদের দেশের ডাক্তারেরা বহু গুণে গুণান্বিত, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সব রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বা দিতে সক্ষম। নার্সদের দৌরাত্ম্য দেখলে মনে হয় সেবা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো রোগীর পকেট। ফার্মেসী গুলোতে মেয়াদ উত্তীর্ণ , নকল ওষুধ তো নিয়মিত দৃশ্য। চিকিৎসার মত  গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কি ব্যবস্থাপনা অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শুধু ব্যবস্থাপনায় নয়, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি পরায়ন মনোভাব ও নতুন নতুন ব্যক্তিস্বার্থ কুট- ব্যবসা অনুপ্রবেশ করেছে, যার কাছে সাধারন রোগী ও রোগীর স্বজনেরা জিম্মি।

শিক্ষা, আমরা বলি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।  শিক্ষাকে আজ  ব্যাবসায়িক রূপ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মত শিক্ষা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। শিক্ষার গলা চেপে ধরা হয়েছে। মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। আজকাল ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষার আগের রাতে পড়ালেখার পরিবর্তে ফেসবুকে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়  অনুসন্ধান করে পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া তাদের একমাত্র আশা। পরীক্ষার আগের রাত্রে কিংবা পরীক্ষার দিন সকালে  যদি প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র উভয় মিলে, তাহলে জিপিএ-৫ ঠেকায় কে ? এই হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ডের কাছে জাতি আজ হতাশ! ঠিক একই সাথে শিক্ষা নিয়ে যে গবেষণা হওয়া দরকার সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে না। আমাদের দেশের ছাত্ররা দেশের বাইরে গিয়ে যে সফলতা অর্জন করছে আমরা প্রচলিত কারিকুলাম ও শিক্ষা পদ্ধতি দিয়ে প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছি। শিক্ষকরা আজ রাস্তায়, শিক্ষকরা আজ সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়নের স্বীকার। দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকলে শিক্ষকরা জাতির সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতো আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হতো সত্যি কারের মেরুদন্ড তৈরীর কারখানা।

ভূমি অফিস গুলোর দিকে দৃষ্টি দেখলে দেখা যায় ভূমি অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই অন্ধ। কেউ চোখে দেখে না। আপনার জমির একটা কাগজ কিংবা জমি সংক্রান্ত কোন তথ্য নেওয়ার জন্য ভূমি অফিসে যান দেখবেন সবাই অন্ধ কিন্তু  টাকা দিলে অন্ধত্ব ভালো হয় কাগজ কিবা তথ্য বের হয়। এই প্রযুক্তির যুগে ভালো ব্যবস্থাপনা কি অপরিহার্য নয় ?

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং সেক্টর  সম্পর্কে মন্তব্য করার কোন অবকাশই নেই কারণ গণমাধ্যমের নিয়মিত পাঠক দর্শক ও জনসাধারণের প্রতিদিনের খোরাক যোগাচ্ছে। আমাদের দেশের সকল সেবা সেক্টরগুলো অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতার বৃত্তে আবদ্ধ।
বাংলাদেশের কিছু সচেতন মানুষ ওয়াসা কে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী সুরে দেখিয়ে দিয়েছে। ওয়াসা ওয়াসা কি উপলব্ধি করেছে? আসলেই কি তাদের ব্যবস্থাপকীয় দক্ষতা আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ নাম শুনলে মনে হয় এই বছর আবেদন করলে পরের বছর আবেদনকৃত সেবাটি পাব। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিপত্তির অধিকারী। চেয়ার থেকে উঠতেই অনেক কষ্ট লাগে, কোমরে ব্যথা,  উদাহরণস্বরূপ আপনার বিল্ডিং এর নতুন সংযোগ নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করুন দেখবেন কত জোড়া জুতা স্যান্ডেল ক্ষয় হয়। তাদের যুক্তি, দর্শন,গ্রাহককে বোঝানোর ক্ষমতা অপরিসীম, শুধু কাজের ক্ষেত্রে খুবই অসহায়। মনে হয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরা খুব অসহায় ও ভিন্ন গ্রহের মানুষ।

খাদ্য সেক্টর, খাদ্য আমাদের জীবন ধারণের উপকরণ। খাদ্য খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। খাদ্য আজ বিষে পরিণত হয়েছে, প্রশাসন নির্বাক! কখনো কখন ভেজাল বিরোধী অভিযানের সফলতা আছে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যাদেরকে দেখা যাচ্ছে খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে, ফরমালিন দিচ্ছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খাওয়াচ্ছে।  তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের জরিমানা হচ্ছে , দুষ্কৃতিকারী ব্যবসায়ীরা আবার তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। জানতে চাচ্ছেন কারন? দক্ষ ব্যবস্থাপনা মনিটরিংয়ের সীমাহীন অভাব।

যতক্ষণ না সরকার দক্ষতার সাথে সেবা সেক্টরগুলো পরিচালিত করবে পারবে, ততদিন এই জাতিকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে, কবে আমরা সত্যি কারের নাগরিক সেবা পাব, সেদিনই আমরা সত্যি কারের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করব।

মোঃ সবুর মিয়া
E-mail: sabur2050@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button