টপ লিডমহেশপুর

ঝিনাইদহের সুস্বাদু কাঁঠাল সারাদেশের চাহিদা মেটাচ্ছে

#মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের কাঁঠাল সারা বাংলাদেশে এক নামে পরিচিত।

ঝিনাইদহের মাটি এ ফল উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়, যা প্রতি মৌসুমে সারা দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে।

এ জেলা থেকে প্রতিদিন কোটী টাকার কাঠাল রপ্তানী হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে দেশের কৃষি অর্থনীতে বিশাল ভূমিকা রাখছে ঝিনাইদহের কাঁঠাল। কাঠাল চাষীরা কাঁঠাল প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।

এখানে জমে উঠেছে কাঁঠালের পাইকারি হাট। শহরের পবহাটি, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ ও মহেশপুরে কাঠালের বিশাল হাট বসে। ভেসে আসে কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ। কৃষকরা মৌসুমে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কাঁঠাল বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকেন।

কাঁঠাল চাষীরা জানান, গ্রামাঞ্চালের প্রতিটি কৃষক পরিবারে বসতবাড়ির আশপাশে কম বেশি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। একটি বড় গাছ হতে শতাধিক কাঁঠাল পাওয়া যায়। কৃষকেরা মৌসুমে তারা নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো বিক্রির মাধ্যমে পয়সা আয় করে থাকেন।

কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর থেকে আসা কাঁঠাল বিক্রেতা লিয়াকত শেখ জানান, নিজের গাছের কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করতে এনেছেন। মাঝারি গোছের কাঁঠাল প্রতিটি ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট গ্রামের কৃষক আব্দুল হক জানান, তার নিজের শতাধিক কাঁঠাল গাছ রয়েছে। প্রতিবছর তিনি ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করে থাকেন।

মহেশপুর উপজেলার সাব্দারপুর গ্রামের কৃষক আজিজ জানান, প্রতি বছর তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করে থাকেন। প্রতি মৌসুমে এ এলাকার উৎপাদিত কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররা কিনে নিয়ে যান।

শৈলকুপা উপজেলার বেড়বাাড়ী গ্রামের স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী ইউনুস জানান, ১৫বছর ধরে কাঠালের ব্যবসা করেন। কাঁঠালের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁঠাল ক্রয় করে ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি কাঁঠাল হাটে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।

কাঠাল ব্যবসায়ীরা জানান, ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় তিনটি হাট শহরের পবহাটি, কালীগঞ্জ ও মহেশপুরের কাঠালহাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক কাঠাল বিভিন্ন জেলায় যায়। প্রতি ট্রাকে দেড় লক্ষ টাকার কাঠাল থাকে। এতে প্রতিদিনি কোটী টাকার কাঠাল ক্রয় করে থাকেন বলে তারা জানান।

পটুয়াখালী থেকে মহেশপুরে কাঁঠাল কিনতে আসা ব্যাপারী আজিম উদ্দীন জানান, ঝিনাইদহে ২০ বছর ধরে কাঠালের ব্যবসা করে আসছেন। কাঁঠালের মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে কাঁঠাল কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বাউফল, শরীয়তপুর, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

কাঠাল চাষীরা জানান, এ অঞ্চলে কাঁঠাল প্রসেসিং প্ল্যান্ট না থাকায় কাঁঠাল ফল ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া এখানে কাঁঠাল প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপিত হলে বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। ঝিনাইদহের কাঁঠাল সারা বাংলাদেশে এক নামে পরিচিত তাই অবিলম্বে কাঁঠাল প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তারা জোর দাবী জানান।

ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, ঝিনাইদহ অঞ্চলের স্থলভাগ অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় স্থায়ী কোনো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না। যে কারণে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে কাঁঠাল বাজারে কাঠাল এসেছে প্রচুর পরিমাণে। কৃষকেরা মৌসুমে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো বিক্রির মাধ্যমে টাকা আয় করে থাকেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button