ক্যাম্পাস

ইবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ২১ পেলেই চান্স!

নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করতে পারায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটে ভর্তিতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

পূর্বের শর্ত অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর নির্ধারণ করা হয় ৪০ শতাংশ। কিন্তু ভর্তিচ্ছুরা (৪০ শতাংশ) ৩২ নম্বরের পরিবর্তে এখন ২১ নম্বর পেয়ে ভর্তি হতে পারবেন। একই সঙ্গে পোষ্য কোটায় ভর্তিতে শর্ত শিথিল করে ১৮ নম্বর করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় শর্ত শিথিলের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় মোট ৮০ নম্বরের মধ্যে পাসের শর্ত রাখা হয় ৪০ শতাংশ অর্থ্যাৎ ৩২ নম্বর।

এ বছর প্রথমবারের মতো ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউয়ের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। যেখানে ভর্তিচ্ছুকের লিখিত পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর নির্ধারণ করা হয় ৭।

ভর্তিচ্ছুকে পাস করতে হলে অবশ্যই লিখিত ২০ নম্বরের মধ্যে ৭ পেতে হবে। না হলে তার এমিসিকিউ খাতা মূল্যায়ন করা হবে না বলে শর্তারোপ করে কর্তৃপক্ষ।

‘বি’ ইউনিটে ১ হাজার ৩৫টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২১ হাজার ২০৮ জন ভর্তিচ্ছু।পরীক্ষার্থীদের লিখিত অংশ থেকে মূল্যায়ন করা হয়। পরীক্ষার প্রশ্ন অত্যধিক কঠিন এবং প্রশ্নের অধিকাংশই সিলেবাসবহির্ভূত হওয়ায় ন্যূনতম পাস নম্বর পেতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি ভর্তিচ্ছুদের।

বি ইউনিটে ভর্তিচ্ছু সাইফুল আলম বলেন, ‘প্রস্তুতি ভালো থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা ভালো দিতে পারিনি। প্রশ্ন খুবিই কঠিন এবং আনকমন ছিল।’

ভর্তি পরীক্ষায় যে পাসের শর্ত দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী ‘বি’ ইউনিটের মোট আসন সংখ্যাও পূর্ণ হয়নি বলে জানায় একটি সূত্র।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাসের শর্ত শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। তাছাড়া লিখিত পরীক্ষায় পাশের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় আমার দেখা ১৬০টি উত্তরপত্রে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পাস নম্বর ৭ (সাত) পেয়েছে।’

ফল বিপর্যয়ের কারণে আসন পূর্ণ করতে পাসের শর্ত শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী, ৮০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২১ নম্বর পেতে হবে ভর্তিচ্ছুকে। এর মধ্যে এমসিকিউতে ৬০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৮ এবং লিখিত ২০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩ পেতে হবে।

তবে কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৬ এবং লিখিত পরীক্ষায় নূন্যতম ২, মোট ১৮ নম্বর পেতে হবে বলে জানিয়েছে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন এবং ভর্তিচ্ছুদের লেভেল অনুযায়ী না হওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনকে উল্টো পথে হাঁটতে হয়েছে বলে মনে করেন একাধিক শিক্ষক।

স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে প্রশ্ন করা হয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মানের। ফলে অধিকাংশ ভর্তিচ্ছুই ভর্তির শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই না করে শিক্ষকরা নিজেদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েছেন বলে মনে করেন একাধিক শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের লেভেল বিবেচনা করে প্রশ্ন করার উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী যেন ইনজাস্টিসের স্বীকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। একই সঙ্গে যদি কোনো কম্পিটিশন পরীক্ষায়, যেখানে পাস মার্ক নির্ধারণ করা থাকে। সেক্ষেত্রে পাস নম্বরের দিকে লক্ষ্য রেখে ছাত্রদের লেভেল এবং প্রশ্নের মানের দিকে অবশ্যই সূক্ষ্মভাবে খেয়াল রাখা উচিত।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘প্রশ্ন খুব হার্ড হয়েছে। ফলে প্রত্যাশিত পরিমাণে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় আমরা কিছুটা শর্ত শিথিল করেছি। যাতে করে কোনো আসন ফাঁকা না থাকে। প্রশ্নপত্র আরো সুচিন্তিতভাবে করলে ভালো হতো। আমরা ভর্তি পরীক্ষা কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে বলেছি। আশা করি, আগামীবার আর সমস্যা হবে না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button