অন্যান্য

১০ বছর ধরে কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে

ঝিনাইদহের চোখ:

পার হয়েছে দীর্ঘ ১৮ বছর। কিন্তু এখনও রোগীবান্ধব পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে পরিণত হয়নি দেশের কিডনি রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১৬ শয্যার জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। সে সময় সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন, অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি কিডনি রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করবে। এ হাসপাতালে কিডনি আক্রান্ত রোগী বিশেষ করে দরিদ্র রোগীরা অপেক্ষাকৃত কম খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের একাধিক প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ বলেন, দেড় যুগ পরও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডু) হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে ওঠেনি।

তারা বলেন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা– এ তিন বিষয় সমান্তরাল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে একটি ইনস্টিটিউট পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। কিন্তু কিডনি ইনস্টিটিউটে কিডনির পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয় না। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ইনস্টিটিউটে কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ রয়েছে। সরকারি এ ইনস্টিটিউটে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বেসরকারি হাসপাতালের মতো একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অতিরিক্ত ফি গুণে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের দলাদলিতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হাসপাতালের নামে বেসরকারি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইনস্টিটিউটটির যাত্রা শুরুর কয়েক বছর পর ২০০৯-১০ সালের দিকে কিডনি প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম ও তার টিমের অধীনে ৩০/৩২ রোগীর সফল কিডনি প্রতিস্থাপনও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে তাকে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে তিনি চাকরি ছেড়ে শ্যামলীতে প্রাইভেট ক্লিনিক খুলে কিডনি রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানই রাজধানীর অন্যতম কিডনি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র বলে জানা গেছে।

এ ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফিরোজ খান বলেন, পরিচালক থাকার সময় অধ্যাপক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ও কামরুল ইসলামকে বদলি করা হলে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে কেন বন্ধ হয়ে গেল সে সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত লোকাল হেলথ বুলেটিনের ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হাসপাতালের আউটডোরে এক লাখ নয় হাজার ৮৭২ রোগী চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ছেলে ৯৭৫ ও মেয়ে ৮৭৭ জন এবং পাঁচ বছরের ওপর ছেলে ৭৪ হাজার ৪১৫ ও মেয়ে ৩৬ হাজার ৬০৫ রোগী রয়েছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন সাত হাজার ৪১৫ রোগী। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৪৯ জন। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট দুই হাজার ২৮১টি (মেজর ৮৮১টি ও মাইনর এক হাজার ৪০৮টি) অস্ত্রোপচার হয়।

কিডনি ডায়ালাইসিস বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করানো হচ্ছে- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে একটি প্রতিষ্ঠান ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছে। কিডনি রোগীরা যাতে দ্রুত সময়ে উন্নতমানের ডায়ালাইসিস সেবা পেতে পারেন সে কারণে তাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। রোগীপ্রতি সরকারের খরচ হচ্ছে দুই হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু সরকার রোগীর কাছ থেকে মাত্র ৪০০ টাকা নিচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।

জাতীয় ইনস্টিটিউটে কেন গত ১০ বছরেরও বেশি সময় কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময়ে দেশে কিডনি পাচার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে কিডনি দান সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে কিডনিপ্রাপ্তিতে জটিলতা দেখা দেয়ায় হয়তো বন্ধ হতে পারে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. নুরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

তার পরামর্শ অনুযায়ী ডা. মো. নুরুল হুদার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সুত্র: জাগো নিউজ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button