অন্যান্য

কাল চালু হচ্ছে না ই-পাসপোর্ট

#ঝিনাইদহের চোখঃ

সোমবার (১ জুলাই) থেকে সর্বাধুনিক ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেল ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন কার্যক্রম। আবেদনকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে জুলাই মাসের যেকোনো একদিনই চালু হতে যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট।

আধুনিক ই-পাসপোর্ট বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ পাসপোর্ট বলেই পরিচিত। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি প্রক্রিয়ায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিলেও জুলাই মাসের মধ্যে যেকোনো মূল্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে গ্রাহকদের।

এ বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে দেয়া শুরু হবে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট। এর আগেই ই-পাসপোর্টের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করা হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ আজহারুল হক বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট ১ জুলাই থেকে চালু হচ্ছে না। তবে ইনশাআল্লাহ জুলাই মাসের মধ্যে চালু করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’

এ বিষয়ে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তিনি দেশে থাকবেন না। উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে ইনশাআল্লাহ জুলাই মাসেই বাংলাদেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট হাতে পাবে।’

জুলাই মাসের ১ তারিখে পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই দিনে মোট ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট করতে সক্ষম হবে অধিদফতর।

সাইদুর রহমান খান বলেন, ফ্যাক্টরি তৈরির কাজ শেষ। প্রথমদিন থেকেই সবাই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ই-পাসপোর্টের ফি’র প্রস্তাব গেছে। তারা ফি নির্ধারণ করবে। উদ্বোধনের পর ফুল সেট-আপের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে। পুরোপুরি প্রস্তুত হলে দিনে ২৫ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্টের যুগে নাগরিকরা চাইলে এমআরপিও করতে পারবেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে।

এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্ট দিয়ে দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হওয়ার মেশিন ই-গেট বসানো হয়েছে। সম্প্রতি জার্মানি থেকে এগুলো দেশে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় আনতে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। ই-গেটে দ্রুততম সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্ট রিডার ও ক্যামেরার সাহায্যে চিপযুক্ত পাসপোর্ট যাচাই, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। ভেরিফিকেশনে ব্যক্তির সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে ই-পাসপোর্ট গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এ ব্যবস্থায় ভ্রমণকারীর পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা অধিকতর কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করা যাবে।

অধিদফতর আরও জানায়, ই-পাসপোর্ট ই-গেটের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাহকের পরিচয় নিশ্চিত করবে। নির্দিষ্ট নিয়মে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ভ্রমণকারী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবে।

তবে ই-গেটে কোনো তথ্যবিভ্রাট ঘটলেই লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন।

এদিকে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনও এর ফি চূড়ান্ত করা হয়নি। এ জন্য অধিদফতরের সবাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে জানা গেছে, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ন্যূনতম ছয় হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ছয় হাজার টাকা দিলে একজন নাগরিক ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাবেন। এছাড়াও সাত দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার এবং একদিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটাবেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করার কাজ কঠিন হবে বলে দাবি করছে অধিদফতর। পৃথিবীর ১১৯টি দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির কোম্পানি ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন। এরপর ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে অধিদফতর। নির্বাচনের আগ দিয়ে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে ১০ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। ‘মাত্র দুই আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হতে পারে’, তাই এ প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না পাসপোর্ট অধিদফতর। এ নিয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। এটাও ই-পাসপোর্টের বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button