মাঠে-ময়দানেসাক্ষাৎকার

খেলোয়াড় হবো : ক্ষুদে ফুটবলার রহিমা ।। অনেক দূর যেতে চাই : প্রান্তি নাহার

#এলিস হক, ঝিনাইদহের চোখঃ

স্থান : বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম।
এ্যাসাইনমেন্ট : বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা’১৯। ইভেন্ট : উপজেলা পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

পোড়াহাটী ইউনিয়ন। এখানেই অবস্থিত ৭২ নম্বর রূপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই দলটি সেমিফাইনালে খেললো। সেমিফাইনালে রূপদাহ সপ্রাবি দল জিতে ফাইনালে উন্নীত হলো।

গায়ের জার্সি নাম্বার ২। রক্ষণভাগের কিশোরী খেলোয়াড়। যদিও তিনি খেলাচ্ছলে উপরে উঠে যান। হঠাৎ হঠাৎ গোল পেয়েও যান। কাঁচা হলেও তার দুই পায়েই কিন্তু ভাষার অনুবাদ বলে দ্যায়…চৌকস। আবার নিচে নেমে আসেন তিনি। দূর্গ আগলে রাখেন। বল পেলেই প্রতিরোধ করেন…প্রতিহত করেন।

আরেকজন জার্সি নাম্বার ৯। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। বল যখন প্রতিপক্ষের শিবিরে আসে তখনই তিনি সুযোগ পান। শারীরিক গঠনে খর্ব হলেও দারুণ দৌড়াতে এবং ভালো শট করতে পারেন। চোখের অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় তাদের লক্ষ্যই হলো-গোলপোস্ট তাক করে বল মারা। মাঝে মধ্যে তারা সফল হন। আবার মিস করলে তারা হতাশ হন।

সেই দুইজন কিশোরীরা হলেন- ২ নম্বর জার্সিধারী রহিমা এবং আরেকজন ৯ নম্বর জার্সিধারী প্রান্তি নাহার।

আরেকটু সময় পেলে হয়তো বা নিজেদের শুধরে নেয়ার সুযোগ পেতেন। তারা সময়ের অভাবে তারা সেভাবে মেলে ধরাতে পারেননি। ফুটবল অনুশীলনে তার দুরন্তপনাই বলে দিয়েছে-তারা দুইজন যথেষ্ট প্রতিভাবান খেলোয়াড়।

খেলা শেষ হলো। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের পশ্চিমে তাঁবুতে গিয়ে বলা হলো-রহিমা কে? প্রান্তি নাহার কে? উপস্থিত কিছু খেলোয়াড়েরা জ্যেষ্ঠ আঙ্গুল তুলে দেখায়-এই যে রহিমা। ঐ প্রান্তি নাহার।

লাজুক ভঙ্গিতে তারা এগিয়ে এলেন।

বললাম-‘নাম কী?’

ক্ষীণস্বরে তার উচ্চারণ-‘রহিমা।’

-‘বাহ্ বেশ সুন্দর নাম তো? আর আপনি?’

-‘আমার নাম প্রান্তি নাহার…।’

-‘আচ্ছা রহিমা আপনি আজ একটা সুন্দর গোল দিয়েছেন?’

-‘আচ্ছা আপনি কি লেখাপড়া শেষ করে কী হতে চান?’

এক কথায় রহিমা বললেন-‘আমি লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে খেলোয়াড় হতে চাই’।

-‘খেলতে খেলতে অনেক দূরে যেতে চাই আমরা’-বললেন প্রান্তি নাহার।

-‘আচ্ছা প্রান্তি -আপনি তো দারুণ দৌড়াতে পারেন…আজকে আপনার খেলা দেখলাম। একটা দর্শনীয় গোলও দিয়েছেন আপনি।’

শুনে প্রান্তি নাহার কিছুটা ঈষ্যৎ হাসি হাসলেন। মলিন মুখে একটা কথাই বললেন-‘চেষ্টা করছিনি তাই হইসেনে..।’

পাদটীকা :

রহিমা-প্রান্তির মতো অসাধারণ খেলোয়াড় এই ঝিনাইদহ শহরে বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাওয়া যাবে। সন্ধান করলেই এই খবর আসবে।

রহিমা-প্রান্তি যখন খেলেন তখন তিনি অন্যরকম হয়ে যান। আর মাঠের বাইরে চলে গেলে এই রহিমা-প্রান্তি আগের সেই রহিমা-প্রান্তি আর থাকেন না। কী তাজ্জব ব্যাপার তাই না!

খেলার প্রথমার্ধের শুরুতে রহিমার দেয়া গোলে নৈহাটী সপ্রাবির বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে প্রথম গোল দেন। তিনি এর আগের বছরে বঙমাতা ফুটবল খেলেছেন। রহিমা পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থিনী। এবারই তিনি শেষ বঙমাতা খেলা খেললেন।

আর প্রান্তি নাহার দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রান্তি নাহার আরেকটি গোল দিয়ে দলকে ফাইনালের দরজায় নিয়ে যান। এর আগের বছরেও তিনি বঙমাতা ফুটবল খেলেছেন। প্রান্তি এবার চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থিনী। পরের বছর তিনি খেলার সুযোগ পাবেন।

এই দুইজনকে নিয়ে গর্ব করতেই পারেন পোড়াহাটী ইউপি তথা রূপদাহের গ্রামবাসীরা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।

(ছবিতে বামে বিজয়িনী রূপদাহের দুই গোলদাতা রহিমা এবং ডানে প্রান্তি নাহার)….

এলিস হক
ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button