অন্যান্য

শপথের দিনে বহিষ্কারের মুখে মোকাব্বির!

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শপথ নিলেন সিলেট-২ আসনে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শেষ পর্যন্ত সুলতান মনসুরের ন্যায় শপথ নিলেন মোকাব্বির। মোকাব্বিরের শপথকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গণফোরাম গণফোরাম থেকে তাকে বহিষ্কার করার জোর দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সংসদে গিয়ে শপথ নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারায় তার বহিষ্কার দাবি জানিয়েছে দলটির শরিক দলগুলো। তবে মোকাব্বিরের এমন শপথ নেয়ার বিষয়ে তার দল গণফোরামের সায় রয়েছে কিনা সেটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা।

শপথ নেওয়ার আগে মোকাব্বির বলেছেন- দলের প্রধান ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত নিয়েই তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী সভাপতি বলছেন- ভিন্নকথা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে- একাদশ নির্বাচন বর্জন ও এই সংসদে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় গণফোরাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে মোকাব্বিরকেও সুলতান মনসুরের পরিণতি বরণ করতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন গণফোরামের দুই শীর্ষ নেতা।

এদিকে দলীয় প্যাড চুরি করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের এ বিষয়ে কোনো মতামত নেই। মোকাব্বিরের শপথে তার ব্যক্তিগত সায় রয়েছে।

তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও এ নিয়ে প্রচুর চাপে রেখেছে গণফোরামকে। পরিস্থিতি সামলাতে মোকাব্বিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা ছাড়া গণফোরামের সামনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। না হয় গণফোরামের রাজনীতিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নেতারা আরও দাবি জানান, যেই দোষে সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে, একই ‘অন্যায়’ করে মোকাব্বির যদি পার পেয়ে যান, তবে দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সেই সুযোগ গণফোরাম দেবে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গণফোরামের প্যাডেই মোকাব্বির চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেই প্যাড ব্যবহারের অনুমতি ও অধিকার রয়েছে কেবল সাধারণ সম্পাদকের। তিনি নিজে বা তার অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ওই প্যাড ব্যবহার করতে পারবেন। মোকাব্বির খান দলের সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে যেভাবে ওই প্যাড ব্যবহার করেছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি বেআইনি কাজ করেছেন।

এদিকে মোকাব্বিরকে বহিষ্কার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, তিনি (মোকাব্বির খান) দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছেন। আমরা এখন বসে সিদ্ধান্ত নেব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কারণেই আমরা সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করেছি। একই ঘটনা তিনিও ঘটিয়েছেন। তার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা জানতে সামনের বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বহিষ্কারের সেই সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের সাধারণসভা ও ২৬ এপ্রিল কাউন্সিল রয়েছে। মোকাব্বির খান সাধারণসভা ও কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কারও তোয়াক্কা না করে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে পড়ে। তার এ কাজ দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের শামিল।

এদিকে গতকাল সোমবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার মতিঝিলের চেম্বারে যান মোকাব্বির খান। উদ্দেশ্য শপথের আগে ড. কামালের আশীর্বাদ কামনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মোকাব্বির খান জানান, ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথগ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন।

মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, দলীয় ফোরামে মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথগ্রহণ করে থাকে, সেটি তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, আগে ৭ মার্চ শপথ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির খান। দলীয় চাপের মুখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে ওই দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ শপথ নেন গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোকাব্বির খান। তিনি সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। এই আসনে প্রথমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার মনোনয়ন বাতিল হলে মোকাব্বিরকে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button