টপ লিডমহেশপুর

২০ কিঃমিঃ ঘুরতে হয় ঝিনাইদহের একটি ব্রীজের অভাবে

মমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহের চোখ-
একটি ব্রীজের জন্য ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে ১২ থেকে ১৩ মাইল ঘুরে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়। একই ব্রীজের এক পাড়ের মানুষদের অন্য পাড় থেকে কৃষিপন্য আনতে নিদারুন কষ্ট করতে হয়। ব্রীজটির অবস্থান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা কুদলা নদীতে।

নদীর পূর্ব পাশে মাটিলা, লেবুতলা, যাদবপুর ও কানাইডাঙ্গা। পশ্চিম পাশে রয়েছে মকরধ্বজপুর, দরবেশপুর, রুলি, বৈরবা, মোমিনতলা, গোপালপুর, কুটিপাড়া, বাশবাড়িয়া, সামান্তাসহ প্রায় ১০টি গ্রাম। আর দক্ষিণে সামান্য দূরেই ভারতীয় সীমান্ত রেখা। তবে ওই এলাকায় ভারতীয়দের কোনো তার কাটার বেড়া নেই। ফলে ওই এলাকাটি বহুকাল ধরে চোরাকারবারী ও মানব পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ব্রীজটি না থাকায় বছরের বেশির ভাগ সময়ই এলাকাটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা সম্মুখিন হন। তাদেরও এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে এক কিলোমিটারের পথ প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত টহলের কাজ করতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের সমস্যার অন্ত থাকে না বলে জানালেন বিজিবি জোয়ানরা। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে একটি পাকা ব্রীজ ছিল। এই ব্রীজের সূত্র ধরেই নদীর দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে কৃষি ও ব্যবসা বানিজ্য গড়ে উঠে। তবে দেশ স্বাধীনের আগেই ব্রীজটি ভেঙ্গে যায়। ফলে নদী পাড়ের দু’পাশের মানুষ দূর্ভোগে পড়ে।

দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরে এখানে ব্রীজ না হওয়ায় নদী পাড়ের মাটিলা গ্রামের কয়েকটি পরিবার অপর পাশে থাকা প্রায় দুইশত বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ বাঁশের সাকো। আর সুষ্ক মৌসুমে হেটে পানি পার হয়ে তাদের প্রয়োজনী কাজ সম্পন্ন করতে হয়। সম্প্রতি স্থানীয়দের উদ্যোগে নদীর মাঝামাঝি বাঁশের ছোট্ট একটি সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। সাঁকোর দুই পাশ মাটি দিয়ে বাধিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন বর্ষা মৌসুমে সহজে পায়ে হেটে বাঁশের সাঁকো হয়ে পার হওয়া যায়। ব্রীজটি করার জন্য ভুক্তভোগি দু’পাশের মানুষ বহুবার জনপ্রতিনিধি ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন কিন্তু কেউ তাদের কথা রাখেনি।

ব্রীজের পূর্ব পাশের গ্রাম মাটিলার বাসিন্দা বয়বৃদ্ধ ওয়াজেদ আলী বীরযোদ্ধাকে জানান, আমাদের গ্রামের তরফদার পরিবারের নদীর ওই পাশে একশত বিঘা জমি ছিল কিন্তু চাষ করার পর বাড়িতে আনতে অসুবিধার কারণে সে সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। নদীর পশ্চিমপাশে মাত্র চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে রুলি মাধ্যমিক স্কুল ও শহিদুল ইসলাম কলেজ এবং ফাজিল মাদরাসা রয়েছে। যেখানে আমাদের এলাকার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে। বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরে স্কুল কলেজে যেতে হয়। এছাড়া এই নদীটি দু’পাশ এখন নদী খেকোরা দখল করে নিচ্ছে। ফলে মরে যেতে বসেছে নদীটি। অথচ এই নদী দিয়েই বর্ষা মৌসুমে অত্র অঞ্চলের ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের পানি ভারতের দিকে চলে যায়।

ব্রীজের পশ্চিম পাশের গ্রাম মকরধ্বজপুর গ্রামের বাসিন্দা খেলাফত মন্ডল, দেলোয়ার হোসেন ও হবিবর রহমান বীরযোদ্ধাকে জানান, ব্রীজটি করা একান্ত প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে দু’পাশের মানুষের কোনো যোগাযোগ থাকে না। ফলে লেখাপড়া, কৃষি ও ব্যবসা বানিজ্যসহ সকল কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

তারা আরও জানান, এখানে ব্রীজ না থাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের টহল কাজে বিঘ্ন ঘটে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চোরকারবারীরা কোদলা নদী রুট ধরেই গরু, মাদক ও মানব পাচার করে থাকে।

ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম শাহীদুল ইসলাম নদী পাড়ের মানুষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বীরযোদ্ধাকে জানান, ব্রীজটি করার জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

মহেশপুর ৫৮বিজিবি’র মাটিলা ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার সোহরাব হোসেন জানান, কোদলা নদীর প্রস্তাবিত এই ব্রীজটির পূর্ব পাশে অবস্থিত মাটিলা বিজিবি ক্যাম্প। নদীর পার হয়ে ও পাশে (পশ্চিম) আমাদের আরো ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত মাটিলা বিওপির আওতায় রয়েছে। যখন নদীতে পানি থাকে, তখন নদীর পশ্চিম পাশে কোনো সমস্য হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। অথচ ব্রীজটি নির্মিত হলে আধা কিলোমিটারের কম পথ পাড়ি দিলে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছানো যাবে। ব্রীজটির কারণে আমাদের সীমান্ত টহলে যেমন সমস্যা হচ্ছে, ঠিক তেমন স্থানীয় বসবাসকারীদের যাতায়াত ও কৃষি কাজে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান এই বিজিবি’র বিওপি ক্যাম্প নায়েক।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রীজটি না হওয়ায় কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের দূর্ভোগ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে আমরা ব্রীজটি তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। পাশ হলে তৈরির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button