ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এক সময় মানুষের মৌলিক চাহিদার অত্যতম বাসস্থান হিসাবে মাটির তৈরী ঘরের ব্যাপক প্রচলন ছিল।

উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর, জামাল, কোলা, নিয়ামতপুর, মালিয়াট, রায়গ্রাম, শিমলা-রোকনপুর, ত্রিলোচনপুর, রাখালগাছি, কাষ্টভাঙ্গা বারোবাজারসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চোখে পড়ত মাটির তৈরী ঘর। কিন্তু এখন আর এগুলো চোখে পড়েনা। যুগের পরিবর্তনের সাথে শহরের পাশাপশি গ্রামের মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। জীবনযাত্রর মান উন্নয়ন আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম থেকে হারিয়ে গেছে এ মাটির ঘর।

দু’যুগ আগেও গ্রামে প্রায় ৬০ ভাগ ঘর ছিল মাটির। বসবাসের জন্য প্রাচীন মাটির ঘর ব্যবহার হতো। শীতকালে যেমন গরম অনুভব হতো তেমনি গ্রীষ্মকালেও মাটির ঘরে থাকতো শীতল অনভূতি। যা বর্তমানে যুগের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মতোই আরামদায়ক।

এই ঘর তৈরী করার জন্য প্রয়োজন হতো এঁটেল বা দো-আঁশ মাটি। ঘর তৈরী করার জন্য তেমন খরচ হতো না। কৃষক-কৃষাণী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা মিলে অল্প কয়েক দিনের মধ্য তারা এই ঘর তৈরী করে ফেলত। যে মাটি দিয়ে ঘর তৈরী করা হবে সেই মাটি কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে ঝুর-ঝুরে করে নেওয়া হতো। তার পর তার সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাঁদা করে নেয়া হতো। তার পর সেই কাঁদামাটি দিয়ে তৈরী করা হতো মাটির ঘর। অল্প-অল্প করে মাটি বসিয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচু করে এবং সেই কাঁদায় ২৫/৩৫ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরী করা হতো।

এ দেয়াল তৈরী করতে বেশ সময় লাগতো। কারণ এক সাথে বেশি উঁচু করে তৈরী করা যেতো না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত উঁচু করা যেতো। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরী করা হতো। এভাবে দেয়াল তৈরী করা হলে কিছু দিন রোদে শুকানো হতো। তারপর এই দেয়ালের উপর বাঁশের চাল তৈরী করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হতো। একটি মাটির ঘর তৈরী করতে ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতো।

বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শত বছর পর্যন্ত টিকে থাকতো। যারা এলাকার প্রবাবশালী বা ধনী লোকের বাড়ীতে থাকতো দু’তালা আর মধ্যবিত্তদের থাকতো একতালা ছোট আকারের ঘর বা টিনের ছাউনির পাকা ঘর।
এ ব্যাপরে কালীগঞ্জ সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির এক শিক্ষার্থী বলেন, কখনো মাটির ঘর দেখিনি। তবে দাদা ও বাবার কাছে মাটির ঘরের কথা শুনেছি। এক সময় গ্রামের অনেকেই মাটির ঘরে বসবাস করতো। এটা দেখতে নাকি খুবই সুন্দর।

কালীগঞ্জ উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মো. জালাল উদ্দিন (৭৫) বলেন, ২০/৩০ বছর আগেও মাটির ঘর ছিল। এক সময় আমার বাড়ীতে ২টা মাটির ঘর ছিল। তিনি আরো বলেন, বর্তমানের মাটির ঘরের স্থান করে নিয়েছে পাকা ঘরগুলো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই নানা বাহারী রকমের পাকা ঘর তৈরী করছে। এখন মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একদিন মাটির ঘরের কথা বাংলার মানুষের মন থেকে হারিয় যাবে। মাটির ঘর রূপকথার গল্প, কবিতার ছন্দ, সাহিত্যর পাতায় বা যাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button