কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে ময়নার পাশে কে দাঁড়াবে ?

দুই হাত না থাকা ময়নার ভবিষ্যৎ কি
‘আম্মু এই যে আমার হাত, বলো আমার হাত আছে না’। প্রতিবেশি শিশুরা ময়নার আঙ্গুল ছাড়া হাত নিয়ে যখন মজা করে, তখন সে ছুটে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে এভাবে তার কষ্ট প্রকাশ করে। কখনও কান্নাকাটি করে আবার কখনও লজ্জায় ঘরের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই দুই হাতের একটিও আঙ্গুল নেই মাত্র তিন বছর বয়সের শিশু ময়নার।

তার বাবা-মাও বলতে পারে না এই শিশুটির হাত ভালো করার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না। তবে কষ্ট দেখে ইতিমধ্যেই বাবা-মা পাশাপাশি প্রতিবেশিদেরও নয়নের মনি হয়ে উঠেছে শিশুটি। সকলের এখন একটাই প্রশ্ন শিশুটির ভবিষ্যৎ কি?

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের ইসলাম আলীর কন্যা ময়না (৩)। ইসলাম জানান, তিনি পেশায় কৃষি শ্রমিক। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান। তিনি আরো জানান, ৫ বছর হয়েছে পাশ^বর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলার বড়-বামনদাহ গ্রামের শুকুর আলীর কন্যা সবুজা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর তাদের ঘরে জন্ম হয় একটি শিশুর। যার নাম রাখেন ময়না। কিন্তু জন্ম গ্রহনের পর তারা দেখতে পান শিশুটির দুইটি হাতের কানুই এর নিচের অংশ নেই। একটি পাঁয়ের আঙ্গুলেও সমস্যা রয়েছে। এই অবস্থায় শিশুটি বেড়ে উঠতে থাকে। ১০ মাস হলো ইভা নামে তাদের ঘরে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে।

সবুজা খাতুন জানান, মেয়ের সব কিছুই তাকে করে দিতে হয়। সারাক্ষন এ-বাড়ি, ও-বাড়ি ঘুরে বেড়াই। সবাই তাকে খুব ভালো বাসে। তবে প্রতিবেশি বাচ্চারা তার হাত নিয়ে কিছু বললে ছুটে বাড়ি চলে আসে। আড়িতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে নানা কথা বলে। কখনও দেখায় এই যে আমার হাত। আবার কখনও ঘরের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। তিনি জানান, তারা এখনও বুঝতে পারছেন না এই অবস্থা থেকে ভালো হবার কোনো উপায় আছে কি না। তাই এখন থেকেই শিশুটিকে ওই হাত দিয়েই নিজের কাজগুলো করানো অভ্যাস করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সে পানির গ্লাস হাতে ধরে খেতে শিখেছে। আশা করছেন পাঁ দিয়ে খেলা শেখাবেন।

ইসলাম আলী ও সবুজা খাতুন জানান, ময়না তাদের নয়নের মনি। শুধু তাদের নয় প্রতিবেশিরাও তাকে খুব ভালো বাসে। ময়না যখন অন্যের হাতের দিকে চেয়ে থাকে তখন প্রতিবেশিরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু কিছুই করার নেই তাদের। তিনি প্রশ্ন করেন জন্ম থেকে এই অবস্থা যে শিশুটির তার কি ভালো হওয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। তাহলে শিশুটির জীবন কাটবে কিভাবে।

ইসলাম আলী জানান, তিনি দরিদ্র হওয়ায় বড় কোনো চিকিৎকের কাছে ময়নাকে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে স্থানিয় কয়েকজন চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন এটা ভালো হওয়া সম্ভব কিনা তা তারা বলতে পারছেন না। ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখালে তারা সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button