জানা-অজানা

রমজানে সুস্থ থাকতে খাদ্য তালিকায় যা রাখবেন

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্কঃ

রোজার মাসের খাবার অন্যান্য মাস থেকে একটু আলাদা হওয়া উচিত। যতটা সম্ভব সহজপাচ্য ও স্বাভাবিক খাবারই খাওয়া উচিত। কিন্তু সারা দিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারে মুখরোচক অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছে করে। এ সময় ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার খেলে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

তাই সুস্থ শরীরে ও দেহের ওজন না বাড়িয়ে পুরো রোজার মাস ভালো থাকার জন্য একটা ব্যালেন্স ডায়েট বা সুষম খাবারের দরকার। দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখেই এ সময় খাদ্য নির্বাচন করা দরকার।

এবারের রোজা হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের সময়ে। তাই শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পানি, মৌসুমি ফল ও সবজির জুস বা স্মুদি এ ধরনের তরল, ঠাণ্ডা খাবার ও আঁশজাতীয় খাবার রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত জুস বা খাবার না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে এনার্জি নেয়াই ভালো।

এই মাসে চা, কফি পানের মাত্রা কমাতে হবে। তা না হলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই এসব যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

এ সময় অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। তৈলাক্ত খাবার খেলে লিপিড প্রোফাইল খারাপ হয়ে যেতে পারে, মানে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে। যারা রোজায় চর্বিজাতীয় খাবার মেনে চলবেন, তারা এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এমনকি যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে, এ নিয়ম মেনে চললে তারা ভালো হয়ে যেতে পারেন।

খাবার পরিমিত খেলে রোজায় সুস্থ থাকা যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই খাবার গ্রহণে সচেতন থাকবেন। কারণ যাদের কিডনি রোগ বা গেটে বাত (ইউরিক অ্যাসিড) আছে, তাদের ডালজাতীয় খাবার পরিমাণে খুব কম খাওয়া বা একেবারেই না খাওয়া উচিত।

রোজার সময় অনেকের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। এটি সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের জন্য হয়। তাই তারা চাইলে রোজ ইফতারে দই-চিড়া খেতে পারেন। কারণ দই রয়েছে প্রোবাওটিক, যা পেটের গাট ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে।

এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল, সেহেতু এই সময়কে ফলের জন্য মধুমাস বলা হয়ে থাকে। তাই মৌসুমি ফল খেলে রোজায় হাইড্রেটেড থাকা যাবে খুব সহজেই। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় রোজায় না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে এনার্জি নেয়াই শ্রেয়। চিনির পরিবর্তে মধু খেলে উপকার বেশি পাবেন। যারা ডায়াবেটিকসের রোগী তাদের খাবার গ্রহণ এবং ইনসুলিন ব্যবহারে সচেতন থাকবেন।

যারা অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি তাদেরও খাবার ব্যালান্স করতে হবে। তাদের যেহেতু এসিডিটির সমস্যা থাকতে পারে, সেহেতু তারা এই সময় সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ করবেন আর প্রচুর পানি বা ডাবের পানি গ্রহণ করবেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের শারীরিক অবস্থা বুঝে খেতে হবে।

এই সময়ে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে। ইফতার ও সাহরিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। গ্লাস গুনে পানি খেতে অসুবিধা হলে সমপরিমাণ পানি বোতলে ভরে রাখুন এবং ইফতার থেকে সাহরির সময়ের মধ্যে তার পুরোটা পান করুন।

দিনভর রোজা রাখায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই তৎক্ষণাৎ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। এমন খাবারের মধ্যে আছে- আঙুর, খেজুর, ফলের রস। এগুলো যেমন শরীরে সহজে শক্তি আহরণে কাজে লাগে, তেমনি শরীরের পানি ও খনিজের প্রয়োজনও মেটায়। মিষ্টি শরবত, মিষ্টান্নজাতীয় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার বর্জন করা ভালো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button