কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

ধুঁকছে ঝিনাইদহের তাঁত শিল্প

ঝিনাইদহের চোখ-

ইতিহাস ঐতিহ্যের এই তন্ত বয়ন বা তাঁতশিল্প অনেক বড় ভুমিকা রেখেছিল ভারত বর্ষের ঐতিহ্যে। এদেশের অর্থনৈতিক খাতেও রেখেছিল অনেক বড় ভুমিকা। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের অনুপমপুরের এই তাঁতিরা এক সময় ছিল আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ ও স্বাবলম্বী।

কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এই ঐতিহ্য। অনেকটা ক্ষোভ আর লজ্জায় তারা ত্যাগ করছে তাদের এই আদি পেশা। সুতা রঙ্গিন হলেও তাদের জিবন রঙ্গিন নয়। কালীগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পথ গেলেই এই অনুপমপুর। সেখানে আজও মুখরিত হয় সেই তাঁত বুননের শব্দে।

অনুপমপুরের এক সময়কার স্বচ্চল তাঁত মালিক জামাত আলির অধিনে চলত ১০ টি তাতঁ। পারিবারিক ভাবে ছিল তার এ ব্যবসা, পরিবারের সদস্য সহ আশেপাশের লোকজন নিয়ে তার এইখানেই বুনন হতো শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা, ধুতি সহ নানান ধরনের পরিধেয় বস্ত্র।

এখন মাত্র ৪টি তাঁত নিয়ে চলছে তার এ ব্যবসা। তার পরিবারের অনেকেই আজ ত্যাগ করেছে এ পেশা। অনুপমপুরের এই সম্প্রদয় এখন টিকে আছে জরাজীর্ন হালে। এই গ্রামে এখন ১৮ টি পরিবারের মধ্যে এ তাঁতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখনওতারা চেষ্টা করছে চরকার চাকা ঘুরিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল রাখতে।

রফিকুল ইসলাম নামের আরো একজন জানান, তার আছে ২ টা তাঁত। পারিবারিক ভাবে স্ত্রী,পুত্র ও পুত্রবধু নিয়ে এই কাজই করছেন। একটি তাঁতে প্রতিদিন ৪ থানে গামছা হয় ৮ টা, যার পাইকারি মুল্য ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। এই গামছা তৈরীর সুতা আনতে হয় কুষ্টিয়ার বিত্তীপাড়া থেকে। নিজেদের পরিশ্রম, সুতা, রং,চরকা,মাকুর খরচ দিয়ে পোশানো অনেক কষ্টের। পৈতৃক কাজ ছাড়তে পারছেন না বলেই তারা এ ব্যবসা আজও ধরে রেখেছেন।

একই গ্রামের তাজুল রহমান জানান, এখন শাড়ীর কাজ হয়না বললেই চলে, কারন শাড়ীর খরচ পুুশিয়ে মুল্য পাওয়া কষ্ট। তাঁতের একটি শাড়ী তৈরীতে সময় লাগে প্রকারভেদে এক থেকে দুই দিন। খরচও লাগে প্রকার ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। যা বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা। তাঁতের শাড়ী থেকে মেশিনে তৈরী শাড়ীর চাকচিক্য থাকে বেশি। সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে ব্যবসায়ীক ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন। যা তাঁত শিল্পীরা পাচ্ছেন না। এ পেশার সাথে জড়িত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই।

পরিবর্তিত রুচি ও পছন্দের সাথে সংগতি রেখে তাঁত বস্ত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ তাঁতী সমাজের কাছে নেই, ফলে তারা সনাতন পদ্ধতিতে সেই সনাতনী মানের কাপড় উৎপাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন এই অবস্থায় তাঁতশিল্পের বিকাশের পথে প্রধানতম অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারী সহায়তা ও কম সুদে ঋণ পেলে তাদের এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে পারবে। যান্ত্রিকতার এই যুগে আজ অসহায় হয়ে পড়েছে অনুপমপুরের তাঁতী শিল্প।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button