শৈলকুপা

ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান সামিয়া জামান

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শৈলকুপার কৃতি সন্তান সামিয়া জামান। সামিয়া জামান, সংবাদ পাঠিকা হিসেবে এদেশের মানুষের কাছে যার ব্যাপক পরিচিতি। পাশাপাশি তিনি একজন অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তবে তার আসল পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই গুণী মানুষটি পৈত্রিক সূত্রে শৈলকুপার কৃতি সন্তান।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ধাওড়া গ্রাম তার পৈত্রিক বাড়ী। পিতার চাকরি সূত্রে ১৯৬৬ সালের ১৭ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে তাঁর জন্ম। পিতা অধ্যাপক মোঃ মসিউজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক, বিসিএসআইআর এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। মাতা নাজিয়া বেগম একজন গৃহিণী।

শিক্ষাজীবন:
শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরী স্কুলে। তিনি এখান থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়ের পাশ করেন ঢাকার বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজ হতে। অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন ইংল্যান্ডের School of Oriental and African Studies (SOAS) বিশ্ববিদ্যালয় হতে। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগ অর্জন করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন।

পেশাগত জীবন:
ইংল্যান্ডের বিবিসি (British Broadcasting Corporation) টেলিভিশনের ফ্লিম এডিটর পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস রেডিওতে বাংলা বিভাগের প্রযোজক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৯ সালে তিনি দেশে ফিরে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশের জনপ্রিয় চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের নিউজ প্রডিউসার এন্ড ব্রডকাস্টার হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন। ২০০১ সালে ছুটি নিয়ে তিনি কেনিয়া যান। পরবর্তিতে তিনি দেশে ফিরে তিনি এনটিভিতে যোগদান করেন। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭১ টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত।

চলচ্চিত্র প্রযোজনা:
ছোট বেলা থেকেই সিনেমার পেছনে ছুটেছেন সামিয়া জামান। ৮০ এর দশকে শর্ট ফ্লিম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন তিনি। ১৯৮৪ সালে এর উপর বিভিন্ন কোর্স করেন। এরপর থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আকৃষ্ট হন। ইংল্যান্ডে সরকারী চাকরির পাশাপাশি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্লিম এর উপর পড়াশোনা করেন।

ছাত্রীজীবনেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক মোর্সেদুল ইসলামের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০০৬ সালে সামিয়া জামান পরিচালিত ও এনটিভি প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রানী কুঠির বাকী ইতিহাস’ মুক্তি পায়। এটি একটি মনোস্তাত্ত্বিক ছবি ছিল। ফেরদৌস ও পপির মত মূল ধারার নায়ক নায়িকাকে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। গানগুলিও ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবকিছুর সমন্বয়ে ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ছবিটি, সেই সাথে সামিয়া জামানও দেশের মানুষের কাছে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নতুনভাবে পরিচিতি পান।

তিনি গড়ে তোলেন নিজেস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভার্সা মিডিয়া। এর মাধ্যমে নতুন একটি চলচ্চিত্র ‘আকাশ কত দূরে’ নির্মাণ করেন। ছবিটি মূলত বাচ্চাদের নিয়ে। এখানে ৩০/৪০টি শিশু অভিনয় করেছে। ২০০৯ সালে ছবিটি সরকারী অনুদান পেয়েছে।

টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও উপস্থাপনা:
নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভার্ষা মিডিয়া হতে এ পর্যন্ত ২৫/৩০টি নাটক তৈরী করেছেন যা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেশকিছু টক শো প্রযোজনা ও উস্থাপনা করেন সামিয়া জামান। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চ্যানেল আই এ ‘চলতি হাওয়া’, একুশে টিভিতে ‘২১এর সময়’, আরটিভিতে ‘একটেল প্রতিদিন’, বাংলা ভিশনে ‘রোড টু ডেমক্রেসি’ ইত্যাদি। ভার্সা মিডিয়াতে নাটক ও টক শো এর পাশাপাশি বিভিন্ন ডকুমেন্টরীও তৈরী করেছেন তিনি। এ সকল কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২০১২ সালে ৭১ টিভিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

সম্মাননা:
১৯৭৯ সালে জাতীয় শিশু বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জিয়াউর রহমান এর হাত থেকে পদক পেয়েছেন সামিয়া জামান। এটি তার জীবনের অন্যতম একটি স্মরণীয় ঘটনা। শৈলকুপার কৃতি এই মানুষটিকে নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

কৃতজ্ঞতা: যশোর ইনফো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button