জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখাশৈলকুপা

জেলার বাইরেও যাচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার জৈবসার

ঝিনাইদহের চোখ-
ক্রমাগত রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ব্যবহারে কৃষক যখন হাঁপিয়ে উঠছেন, আর সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় খাচ্ছেন বিষযুক্ত খাবার, ঠিক সে সময় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিস নিয়েছে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তারা কৃষকদের জৈবসার তৈরি ও তা প্রয়োগ করে নিরাপদ ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষকদের, প্রচার ও প্রসারে নিয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। উদ্যোক্তা তৈরি করে বাড়াচ্ছে জৈবসারের উৎপাদন। ফলে উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে শৈলকুপার জৈবসার এখন যাচ্ছে জেলার বাইরেও।

শৈলকুপার প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ রঘুনন্দনপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গড়ে উঠেছে কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট আর ট্রাইকোকেম্পাস্ট তৈরির কারখানা। সীমিত পরিসরে হলেও তারা জৈবসার তৈরি করে কমদামে বিক্রি করছেন স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। ওসব জৈবসার তৈরির ওই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে জেলার বাইরেও। আর তাই প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় যাচ্ছে সেসব সার।

রঘুনন্দনপুর গ্রামের কৃষক রুস্তম আলি জানালেন, তিনি পেঁয়াজ, বেগুন আর রোপাআমনের ক্ষেতে তার এলাকায় তৈরি জৈবসার ব্যবহার করে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন। প্রথমে বেশ সংশয়ের মধ্যে থাকলেও তিনি খুশি হয়েছেন সারের কার্যকারিতা দেখে। একই এলাকার আরেক কৃষক এবং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম জানালেন, তার এলাকার হারুন অর্গানিক অ্যার্গো ফার্মের জৈবসার কৌতুহলবশত ব্যবহার করে তিনি আস্থা পেয়েছেন। ওই দুই কৃষকের মতে, রাসায়নিক সারের তূলনায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ টাকা খরচ করেই ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, যা তাদের সার বাবদ ৭০ থেকে থেকে ৭৫ ভাগ খরচ কমিয়ে দেবে। আর উৎপাদন খরচ কমলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা লাভবান হবেন।

বাগুটিয়া বাজারের সার ব্যবসায়ি আসাদ বিশ্বাস জানালেন, পরীক্ষামূলক তিনি জৈবসার বিক্রির ডিলারশিপ নিয়েছেন। গত এক বছরে ওই সারের চাহিদা বেড়েছে। আশেপাশের গ্রাম থেকেও কৃষকরা সারের বায়না দিচ্ছেন।

হারুন অরগ্যানিক এর্গো ফার্মের তরুণ কর্ণধার মনিরুজ্জামান সজিব জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে প্রয়োগের জন্য তিনি জৈবসার উৎপাদনের কথা ভাবতেন। এব্যাপারে বড় পরিসরে চিন্তা করলে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিস তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়। তাদের সহযোগিতায় তিনি বাড়ির নিকটবর্তী শৈলকুপা-হাটফাজিলপুর সড়কের উত্তর দিকে একটি প্রকল্প হাতে নেন। তার কারখানায় নিয়মিত শ্রমিকসহ ৯-১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন কেঁচোকম্পোস্ট ও ট্রাইকোকম্পোস্ট উৎপাদনে। কেঁচোকম্পোস্ট উৎপাদনে গোবর মূল উপাদান হলেও ট্রাইকোকম্পোস্ট উৎপাদনে ১৫টির মত উপাদন প্রয়োজন, যা গোবর ছাড়াও চিনিকলের গাদ, ছাই, গবাদিপশুর হাড়ের গুড়ো, শামুক-ঝিনুক গুড়ো, কলাগাছ, চিনিকলের উচ্ছিষ্ট ছোবড়া ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। প্রতিমাসে ৩শ টনের মত সার তার কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, জমিতে ক্রমাগত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে জমিতে জৈব উপাদানের ঘাটটি রোধের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া, নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ি জৈবসার প্রয়োগ করা গেলে কৃষককের সারের খরচ একবারেই কমে যাবে, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তণ ঘটবে। এছাড়া, বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button