কালীগঞ্জ

ঝিনাইদহে ১৪ বছর পর মামলার রায়ে প্রমাণ হলো রাছুল বিউটি’র স্বামী

ঝিনাইদহের চোখ-
তিন বছর সংসার করার পর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন। পিতার বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে বসবাস করতে থাকেন বিউটি খাতুন। নিরুপায় হয়ে বিয়ের তিন বছর পর তলবী দেনমোহর দাবী করে ঝিনাইদহের একটি আদালতে মামলা করেন বিউটি। মামলার পর নিজে আসল স্বামী নয় প্রমান করতে আশ্রয় নেন নানা প্রতারণা ও তঞ্জকতার। কাবিনসহ বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষর করে প্রতারণার মহাজাল বিস্তার করেন রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন। এ নিয়ে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাবিন জালিয়াতি করার অভিযোগে মামলাও করেন। নিজে রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন নয় দাবী করে মামলায় তিনি গোলাম রছুল নাম ধারণ করেন। ১৪ বছর মামলা চলার পর রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন বিজ্ঞ আদালতের পর্যবেক্ষনে দোষি প্রমানিত হয়।

সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে পারিবারিক আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ ফরিদুজ্জামান বাদীর পক্ষে রায় ঘোষনা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাঢ়িপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের ইসমাইলের মেয়ে বিউটি বেগমের সঙ্গে ২০০৪ সালের ২৬ জুন একই উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। এই দম্পত্তি তিন বছর গাটছাড়া ভাবে সংসারও করেন। এখনো বিউটি বেগম তার স্ত্রী। এদিকে পিতার বাড়িতে ফেলে রেখে বিউটি বেগমের কাছে ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করেন রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন। স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইলেও যৌতুক দাবীর কারণে আর যাওয়া হয়নি বিউটির।

অবশেষে ২০০৭ সালের ৮ এপ্রিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পারিবারিক আদালতে মামলা করেন (মামলা নং ৩৪/২০০৭) বিউটি। বিজ্ঞ আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, মামলা দায়েরের পর থেকে রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন নিজেকে গোলাম রছুল হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করেন।

বাদী বিউটি বেগমের দাবী মিথ্যা প্রমানের জন্য বিবাদী যত রকমের আইনগত বিধান আছে তার সুযোগ নিয়ে মামলাটি নিষ্পতিত্তে বাধা প্রদান করেন। এ ভাবেই কেটে যায় ১৪ বছর। তা সত্বেও বাদী বিউটির লিখিত আরজিতে উল্লেখিত রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিন মামলায় প্রতিদ্বন্দিকারী গোলাম রসুল একই ব্যক্তি বলে রায় দেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে প্রমানের জন্য যেসব বিধান আছে তা বাদী বিউটি বেগম প্রতিপালন করেছেন। বিয়ের ইমাম, কাজী (নিকাহ রেজিষ্টার) ও বাদীর ভাই বিউটি বেগমের পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সার্বিক আলোচনা থেকে বিজ্ঞ আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, বাদী ও বিবাদীর মধ্যে বৈধভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তারা ঘরসংসার করেছেন এবং এখনো তাদের মধ্যে বৈবাহিক অবস্থা বহাল আছে। ফলে বাদী তার দেন মোহর বাবদ বিবাদীর বিরুদ্ধে এক লাখ এক টাকার ডিক্রি প্রাপ্তির অধিকারী। বাদী তার দেনমোহর ও ভরণপোষন বাবদ বিবাদীর বিরুদ্ধে সর্বমোট চার লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকার ডিগ্রি লাভ করেন।

রায় ঘোষনার (২৬ অক্টোবর ২০২১) ত্রিশ দিনের মধ্যে ডিক্রিকৃত সমুদয় অর্থ বাদীকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন আদালত। তাছাড়া বাদীর ভবিষ্যাত ভরণপোষনের অধিকার খর্ব হওয়া না পর্যন্ত প্রতি ইংরেজি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পুর্ববর্তী মাসের ভরণপোষন বাবদ দুই হাজার টাকা প্রদানের জন্য বিবাদীকে নির্দেশ দেন। ব্যার্থতায় বাদী আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ওই অর্থ আদায় করে নিতে পারবেন বলে পারিবারিক আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ ফরিদুজ্জামান রায়ে উল্লেখ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button