ধর্ম ও জীবন

হাদীসের আলোকে শবে-বরাত: ফজীলত, করণীয় ও বর্জনীয়

ঝিনাইদহের চোখঃ

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বছরের কোনো কোনো মাস, দিন ও রাত্রিকে বিভিন্ন ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে বরকতময় ও বৈশিষ্টমণ্ডিত করে দিয়েছেন৷ বরকতময় এ সময়গুলোতে সামান্য মেহনত ও প্রচেষ্টার ফলে বিশাল প্রতিদানের অধিকারী হওয়া যায়, যা অন্য সময় অধিক মেহনত করেও অর্জন করা সম্ভব নয়৷ সেই সময়গুলোর মধ্যে শবে-বরাত অন্যতম৷

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো মহান এ রাতটি বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার৷ কিছু ভাই এ রাতটির ফজীলতকে অস্বীকার করে বলছে শবে-বরাতের ফজীলত কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়৷

অপর দিকে কিছু লোক এ রাত উদযাপনে এমন কিছু মনগড়া পদ্ধতি ও কর্মসূচি পালন করছে যা শরীয়ত সম্মত নয়৷ তাই এ নিবন্ধটিতে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে প্রামাণ্য ও সঠিক দিকনির্দেশনা আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ৷

প্রথমেই জেনে নিই ‘শবে-বরাত’ এর শাব্দিক বিশ্লেষণ:

শবে-বরাত দু’টি শব্দের সমষ্টি৷ ‘শব’ শব্দটি ফার্সী, অর্থ- রাত, রজনী৷ ‘বরাত’ শব্দটিকে যদি ফার্সী ধরা হয় অর্থ হবে- সৌভাগ্য৷ শব্দ দু’টির একত্র অর্থ হবে- সৌভাগ্যের রাত বা ভাগ্য রজনী৷

আর যদি ‘বরাত’ শব্দটি আরবী ‘বারাআত’ (برائة) শব্দের অপভ্রংশ ধরা হয়, তাহলে অর্থ হবে- পরিত্রাণ বা মুক্তি৷ যেমনঃ এ অর্থে কুরআনুল কারীমে এসেছে-
أكفاركم خير من أوليائكم ام لكم برائة في الزبر
অর্থ: “তোমাদের মধ্যকার কাফেররা কি তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? না তোমাদের ‘মুক্তি’র সনদ রয়েছে কিতাব সমুহে?” (সূরা ক্বমার: ৪৩)

অতএব শব্দ দু’টিকে আরবীতে অনুবাদ করা হলে অর্থ হবে- “লাইলাতুল বারাআহ” (ليلة البرائة) যেমন ইমাম বাইহাকী রহিমাহুল্লাহ তাঁর “আদ-দা’ওয়াতুল কাবীর” গ্রন্থে একটি শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে- “বাবুল ক্বাওলী ওয়াদ-দোয়া লাইলাতাল বারাআহ” (باب القول و الدعاء ليلة البرائة) তবে হাদীসের ভাষায় বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ (ليلة النصف من شعبان) অর্থাৎ শা’বানের মধ্য রাত্রি বা অর্ধ শা’বানের রাত৷

শবে-বরাতের ফযীলত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি হাদীস:
১ম হাদীস-
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مساحن.

অর্থ: হযরত মু’আজ ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শবে-বরাতে) তাঁর সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্ধেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন৷ (সহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদীস: ৫৬৬৫, সুনানে ইবনে মাযাহ্, হাদীস: ১৩৯০, মুসান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস: ৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস: ৬২০৪)

হাদীসটির সনদ সম্পর্কে কিছু কথা:

হাদীসটির সনদ সহীহ্৷ এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান হাদীসটিকে “কিতাবুস সহীহ্” এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন৷ যদি শবে-বরাতের ফজীলত সম্বন্ধে দ্বিতীয় কোনো হাদীস না থাকতো, তবে এই একটি হাদীস-ই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হতো৷ অথচ হাদীসের কিতাব সমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরও একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে৷

ইমাম মুনযিরী, ইবনে রযব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাসতালানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদগণ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন৷

দেখুন- কিতাবুস্ সুন্নাহ্, ১/২২৪, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, ২/২৪১, ৪/২৩৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/৬৫, শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা, ১০/৫৬১

এছাড়া শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ “সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ” ৩/১৩৫-১৩৯- এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করে লিখেন-
و جملة القول أم الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث.
অর্থ: “এ সব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ্ প্রমাণিত হয় ৷ আর সহীহ্ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ তা মারাত্মক কোনো দূর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে, যেমন এই হাদীসটি৷”

শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহ এর উক্ত বিশ্লেষণ থেকেও নির্দ্বিধায় হাদীস দ্বারা শবে-বরাত প্রমাণিত হয়৷ সুতরাং এ কথা বলার কোনোই সুযোগ নেই যে- শবে বরাত কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়৷

২য় হাদীস-
عن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها و صوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا مسترزق فأرزق له ألا مبتلىً فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- অর্ধ শা’বানের রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত করে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখো৷ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে আসেন এবং বলতে থাকেন, আছে কী কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো৷ আছে কি কোনো রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিবো৷ আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব৷ আছে কি এমন, আছে কি এমন, – এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতে থাকেন৷ (সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদীস: ২৩৮৪, শু’আবুল ঈমান, হাদীস: ৩৮২২, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব: ২/১৩৩)

সনদ বিচারে হাদীসটির মান:

এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ৷ হাদীস বিশারদদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত হলো- ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য৷ তাছাড়া শা’বান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ্ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত৷

৩য় হাদীস-
হযরত আ’লা ইবনুল হারিস রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ সা. রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এতো দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে৷ আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম৷ যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বললেন, হে হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম- না ইয়া রসূলাল্লাহ৷ আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এ আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না! নবী কারীম সা. বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন৷ তিনি তখন বললেন-
هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز و جل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين و يرحم المسترحمين و يؤخر اهل الحقد كما هم.
অর্থ: “এটা হলো অর্ধ শা’বানের রাত৷ (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত) ৷ আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের উপর অনুগ্রহ করেন৷ আর বিদ্বেষ পেষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।”

ইমামা বাইহাকী রহিমাহুল্লাহ এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যপারে বলেছেন- هذا مرسل جيد [হাদীসটি মুরসাল তবে তার সনদ সেরা, উৎকৃষ্ট ৷]

এ রাতে করণীয় আমল সমূহ:

উপরোক্ত হাদীস সমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ রাতের জন্য স্বতন্ত্র কোনো ইবাদত নেই বরং এ রাতে এমন সব নেক আমল করা উচিত যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতপ্রাপ্তির উপযুক্ত হওয়া যায়৷ যেমন:
এক.
মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায যেনো অবশ্যই জামাআতের সাথে হয়৷
দুই.
সাধারণভাবে যে নিয়মে নফল নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়া অর্থাৎ দুই রাক’আত করে যতো রাক’আত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে৷
তিন.
তাওবা করা৷ তাওবা বলা হয় তিন জিনিসের সমষ্টিকে৷ ক. কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া৷ খ. সঙ্গে সঙ্গে এই পাপটি পরিহার করা৷ গ. পাপটি আর করবে না এই মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা৷
চার.
কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা, দুরূদ শরীফ পড়া, যিকির-আযকার করা ও ইস্তিগফার করা ইত্যাদি৷
ছয়.
সম্ভব হলে এ রাতে কিছু দান সদকা করে এবং নফল নামাজ পড়ে মৃতদের রূহে সাওয়াব পৌঁছানো৷
সাত.
পরদিন অর্থাৎ ১৫-ই শা’বান নফল রোযা রাখা৷ রোযা রাখার বিষয়টি উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত৷
আট.
সলাতুত্ তাসবীহ: যদি সলাতুত্ তাসবীহকে এই রাতের বিশেষ ইবাদত মনে না করে আদায় করতে চান, তাহলে করতে পারেন৷ এ ক্ষেত্রে এই নামাযের নিয়মটি কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নিবেন৷

এ রাতের নফল আমল সমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত

আল্লাহ তা’আলার সাথে একান্ত হয়ে একাকি সম্পর্ক গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো নফল ইবাদত৷ আর বিশুদ্ধতম মতানুসারে নফল ইবাদত দলবদ্ধভাবে নয় বরং একাকী করণীয়৷ ফরয নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে৷ এরপর যা কিছু নফল ইবাদত করার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী করবে এবং এটিই উত্তম পন্থা৷ কারণ ঘরকে ইবাদতশূণ্য করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন৷ সুতরাং বর্তমানে শবে-বরাত, শবে-ক্বদরকে কেন্দ্র করে যে প্রচলন দেখা যাচ্ছে যে, এই রাতে নফল ইবাদতের জন্য লোকজন দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হয়, কোথাও মিলাদ হয়, কোথাও এক সঙ্গে বসে জোরে জোরে জিকির হয়, যার দরুণ একাকী ইবাদতকারীর ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়৷ অথচ এ রাতে এগুলো করার কোনো প্রমাণ হাদীসে নেই এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাব্-য়ে তাবেঈনের যুগেও এর কোনো প্রচলন ছিলো না৷

তবে যদি বাসায় অলসতার কারণে ইবাদত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে মসজিদে এসে ইবাদত করতে দোষের কিছু নেই৷ তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যঘাত ঘটার কারণ হবে না৷
(-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১, মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২১৯)

সাধারণ ক্ষমার এ রাতে যারা বঞ্চিত থেকে যায়:

হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী কিছু লোক এমন রয়েছে যারা এই সাধারণ ক্ষমার রাতেও ক্ষমা পায় না৷ যতক্ষণ না তওবা করে ফিরে আসে৷ হাদীসে বর্ণিত এরা হলো:
১. আল্লাহ তা’আলার সাথে অংশীদার স্থাপনকারী মুশরিক৷
২. হিংসুক
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
৪. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়তে অভ্যস্ত৷
৫. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান৷
৬. মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি
৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী৷
আল্লাহ আমাদের সকলকে এসব গুণাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে দয়ার চাদরে জড়িয়ে নিন৷

শবে-বরাতে বর্জনীয় বিষয়:

শয়তান মানুষকে এই রাতে নেক আমল থেকে বিরত রাখার জন্য কিছু কুসংস্কারের প্রচলন ঘটিয়েছে৷ বিস্ময়ের ব্যপার হলো মানুষ এগুলোকে নেক কাজ মনে করে শুধু বিভ্রান্তই হচ্ছে এবং কবীরা গুণাহে লিপ্ত হচ্ছে৷ এ জাতীয় আপত্তিকর কাজগুলো হলো:
১. আতশবাজী, তারাবাতি, পটকা ইত্যাদি ফুটানো৷
২. মসজিদ, ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ও অন্যান্য জায়গায় আলোকসজ্জা করা। এসব অপচয়ের শামিল৷ তাছাড়া এটি হিন্দু দেওয়ালী উৎসব হতে গৃহীত৷ তাই এ ধরণের কর্মকান্ড বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার কারণে অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও বর্জনীয়৷ কারণ, হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তার হাশর-নাশর তাদের সাথেই হবে৷”
৩. খিচুড়ী বা হালুয়া-রুটি বানানো৷ এসবকে এ রাতের বিশেষ কাজ মনে করা হয়৷ মা-বোনদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়৷ মসজিদে হৈ চৈ ও গোলমাল বেধে যায়৷ ইবাদত করার পরিবেশ নষ্ট হয় এবং এ সবের পিছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তাওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হয়৷
এগুলো কুসংস্কার৷ পরিহার করা আবশ্যক৷ এক কথায় এ রাতে আনুষ্ঠানিকতা এবং অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করে একাকীভাবে নফল ইবাদতে আত্ম নিয়োগ করা উচিত, যাতে আমরা বরকতপূর্ণ রাতের বরকত লাভে ধন্য হয়ে আল্লাহর সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি৷
(-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম: ২/৬৩২, আল-মাদখাল লি-ইবনিল হাজ্জ: ১/২৯৯ ও ১/৩০৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৫/২৮৯)

আল্লাহ আমাদের সকলকে সমস্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি পরিহার করে এ রাতের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে একাগ্রতার সাথে তাঁর ইবাদত করার তাওফীক দান করুন৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button