ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

হুমকিতে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৬ জেলার গম চাষিরা

ঝিনাইদহের চোখঃ

ব্লাস্ট রোগ গম চাষের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে মেহেরপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এর কারণে মেহেরপুরে তিন বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার কবলে গম চাষ। চাষিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু চাষ করলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবত্ রয়েছে।

জানা গেছে, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে মেহেরপুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব (প্ল্যান্ট প্যাথলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বাহাদুর মিয়ার তত্ত্বাবধানে ১২ জন এমএস শিক্ষার্থী এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গার রেজাউল হকের ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে এ গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাকটির বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনাপরথি অরাইজি (পাইরিকুলারিয়া অরাইজি) প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। রোগটি ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা যায় এবং পরে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার হয়।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, বরিশাল ও ভোলা জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যা মোট গম আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। তবে রোগটি প্রথম শনাক্ত করা হয় মেহেরপুর জেলাতে। এ রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়।

এ দিকে বাংলাদেশে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনের জন্য মেক্সিকোতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটও বাংলাদেশের গম বিজ্ঞানীদের সাথে একসাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে প্রায় ১১টি পরীক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে গবেষণায় ৭টি কার্যকরী পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যে পদ্ধতিটি ব্লাস্ট প্রতিরোধ ভূমিকা রাখবে সেটিও গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে ধরা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গবেষক দল। কার্যকরী পদ্ধতিগুলো হচ্ছে— ছত্রাকনাশকের কার্যকারিতার পরীক্ষা, মাটিতে সার প্রয়োগ, পাতায় সার প্রয়োগ, বীজবাহিতের পরীক্ষা, বিভিন্ন জাতের গমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী পরিক্ষা, মিউটেশন পরীক্ষা, মসুরের সাথে শস্য পর্যায় অবলম্বন।

শামিমুল ইসলাম নামের মেহেরপুর শহরের এক গম চাষি জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দুই বিঘা জমি থেকে মাত্র ৭ মণ গম পেয়েছিলেন। তবে সেই গম খাওয়ার উপযোগী ছিল না। এ কারণে এ বছরে তিনি গমের চাষ করেননি।

গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য নাবেদ মাহমুদ জানান, আশা করছি গমের ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাস্ট রোগের কারণ উদঘাটনসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এর জন্য আরো দুই মাস সময় লাগবে।

অভিজ্ঞ প্রফেসর ড. বাহাদুর মিয়া উদ্ভিদের রোগতত্ত্ব নিয়ে তার নেতৃত্বে আমরা এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আশা করছি আমরা একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবো।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বাহাদুর মিয়া বলেন, ব্লাস্ট গমের চাষের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এক বছর ধরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবনের গবেষণা চালাচ্ছি। আরো দুই বছর সময় লাগতে পারে।

এ গবেষণাটি বাংলাদেশেই প্রথম হচ্ছে। তবে বালাইনাশক ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার আগে স্প্রে করলে প্রতিরোধ হতে পারে। এ ছাড়া প্রোভেক্স নামক এক ধরনের ওষুধ বীজে মিশিয়ে (প্রতিকেজি বীজে ৩ গ্রাম) বপন করলে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button