ধর্ম ও জীবন

যে কারণে ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করা ইসলামে নিষিদ্ধ

ঝিনাইদহের চোখঃ

অসুস্থ ও বিকৃত বিনোদনের অপর নাম ‘এপ্রিল ফুল’। মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া যে বিনোদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা এপ্রিল ফুল উদযাপনের মূল বিষয়ই হলো ‘মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো’। এ কাজে মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক আচরণই প্রধান ভূমিকা পালন করে।

বিশ্বব্যাপী ইংরেজি বছরের ১ এপ্রিল আনন্দ ও মজা করার লক্ষ্যে ‘মানুষকে বোকা বানানোর দিন’ হিসেবে ‘এপ্রিল ফুল’ নামে পালন করা হয়। এদিন একে অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে মজা করে।

সমাজে প্রচলিত এ ‘এপ্রিল ফুল’ কালচার বা সংস্কৃতি ইসলামে বিবেক বর্জিত আদর্শহীন অসুস্থ ও অসুন্দর সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিত। অন্য হিসেবে স্পেনে মুসলিম নিধন হিসেবে যদি কেউ ‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপন করে তবে তা হবে সর্বকালের সেরা নিষ্ঠুর সংস্কৃতি।

ইসলামের আলোকে ‘এপ্রিল ফুল’ সংস্কৃতি উদযাপনে তিনটি বড় অপরাধ তথা কবিরা গোনাহ সংঘটিত হয়। যে গোনাহগুলো এপ্রিল ফুল উদযাপনের মূল উপকরণ। তাহলো-

> মিথ্যা কথা বলা

‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপনের বড় উপাদান হলো মিথ্যা কথা বলা। মিথ্যা ছাড়া কোনোভাবেই এপ্রিল ফুল উদযাপন সম্ভব নয়। এ মিথ্যা হলো সব পাপের জননী। মিথ্যা শুধু ইসলামেই ঘৃণিত অপরাধ নয় বরং দুনিয়ার সব ধর্ম এবং সব সভ্যতায় এটি ঘৃণিত এবং জঘন্য অপরাধ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা সম্পর্কে হাদিসে পাকে ঘোষণা করেন-

‘তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ এ মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে এসেছে-

‘যখন কোনো ব্যক্তি বার বার মিথ্যা কথা বলতে থাকে, একটা পর্যায়ে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তির নাম মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’

অন্য হাদিসে প্রিয় নবি বলেন-

‘এ মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার কারণে একটা সময় মানুষের কথা, কাজই নয় বরং তার অন্তরে মিথ্যার ফাউন্ডেশন তৈরি হয়। মিথ্যা ছাড়া কোনো কিছুই সে কল্পনা করতে পারে না। এমনটি সে ব্যক্তির অন্তরে একটি সুঁইয়ের জায়গা পরিমাণ ভালো কাজও প্রবেশ করতে পারে না।’

এ কারণেই মিথ্যাবাদী সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন-

‘মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহর লানত তথা অভিশাপ।’ প্রিয়নবি মিথ্যা কথা মুনাফেকের চরিত্রের অন্যতম আলামত বা চিহ্ন বলেছেন।

সুতরাং মিথ্যা ছাড়া যে অনুষ্ঠান (এপ্রিল ফুল) উদযাপন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একজন সচেতন মুমিন মুসলমান কীভাবে এপ্রিল ফুল উদযাপনে বার বার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিথ্যা বলতে পারে, যা মুমিন মুসলমানের কাছে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আবার কেউ কেউ বলেন, আমরা সত্যিকারভাবে ‘মিথ্যা’ বলি না বরং মজা করার জন্য এপ্রিল ফুলে ‘মিথ্যা বক্তব্য’ পেশ করি। এ প্রসঙ্গেও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘সে ব্যক্তির জন্য ধ্বংস অনিবার্য যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা বলে দুষ্টুমি বা মজা করার জন্য।’ (আবু দাউদ) প্রিয়নবি অনিবার্য ধ্বংসের কথা তাগিদের জন্য তিনবার বলেছেন।

অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রাসাদ আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়ার ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণ করছি যে ব্যক্তি দুষ্টুমি বা মজার ছলেও মিথ্যা কথা বলবে না।’

সুতরাং হাদিসের আলো এ কথা প্রমাণিত যে, ইসলাম কোনোভাবেই মুমিন মুসলমানকে মিথ্যা বলার সমর্থন করে না। হোক তা ইচ্ছাকৃত কিংবা দুষ্টুমির ছলে।

> ধোঁকা দেয়া বা প্রতারণা করা

এপ্রিল ফুল পালনে একজন অন্যজনের সঙ্গে মিথ্যার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁকা বা প্রতারণামূলক কাজ করতে হয়, যা ইসলামে চরমভাবে ঘৃণিত ও দোষনীয় কাজ। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি কারো সঙ্গে প্রতরণা করল সে আমার উম্মত হতে পারে না।’ (মুসলিম)

আবার এপ্রিল ফুল পালনে যে ব্যক্তির সঙ্গে মানুষ প্রতারণা করে বা ধোঁকা দেয়, হতে পারে সে এ আচরণে আনন্দ না পেয়ে কষ্টও পেতে পারে। যদি এ প্রতারণা অন্যের কষ্টের কারণ হয়ে তবে তা আরেকটি অন্যায় বা অপরাধ হয়ে গেলো।

> ইসলাম বিদ্বেষীদের অনুকরণ

বিজাতীয় কালচার বা সংস্কৃতি অনুসরণ ও অনুকরণ ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। তা যদি হয় এপ্রিল ফুলের মতো মিথ্যা, ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে উদযাপন করা আনন্দ-উৎসব তবে তা পালন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য বিজাতীয় অন্যায় ও গোনাহের সংস্কৃতি ‘এপ্রিল ফুল’ প্রত্যাখ্যান করা, এপ্রিল ফুল থেকে নিজেদের বিরত রাখা এবং এপ্রিল ফুলকে না বলা ঈমানের একান্ত দাবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিজাতীয় ঘৃণ্য মিথ্যা ও ধোঁকার সংস্কৃতি এপ্রিল ফুল থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button