টপ লিডনির্বাচন ও রাজনীতি

তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদে ঝিনাইদহের খালেদা খানম

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খালেদা খানম। ১৯৮৭ সাল থেকে ছাত্রলীগ থেকে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজপথের মিছিল, মিটিং, পিকেটিং করেছেন। তিনি অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে রাজনৈতিক জীবনে সফল। ২০০১ ও ২০০৩ সালে তিনি জামাত বিএনপি কর্তৃক বিভিন্ন হয়রানিমূলক ষড়যন্ত্রের শিকার হন। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জনসাধারণের মন কেড়েছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী খালেদা খানম।

ঝিনাইদহ থেকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে খালেদা খানমকে মহিলা এমপি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে বিকেল ৫টার পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন। মনোনয়নপত্রই বৈধ হওয়ায় এবং তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। এমপিদের নির্বাচিত করে গেজেট এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৪৯ আসনের বিপরীতে ৪৯ জন প্রার্থী বৈধ ঘোষণা করে ইসি। কোনো প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে আজ তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। ভোটের দিন পর্যন্ত আপেক্ষা করতে হচ্ছে না ইসিকে।’

রাজনৈতিক জীবনে তিনি সৎ ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখে কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি সুনামের সাথে এ জেলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে চলেছেন। তার সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালে উদ্ভাবনী নার্সারির উপর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক প্রাপ্তি এবং গ্রিন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বর্তমান নার্সারীর উপর আধুনিক কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।

নার্সারি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে কৃষিখাতে বিভিন্ন কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন ঝিনাইদহ থেকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মহিলা এমপি খালেদা খানম। তিনি বলেন, ‘গ্রিন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাবো। সামাজিক কর্মকান্ডের দেশব্যাপি সবুজ বনায়নের কাজ করবো। নার্সারির উপর আধুনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবো। রাজনৈতিক কারণে নার্সারি নিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে তার নার্সারিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তারপরও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপেরণায় নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। বিশেষ করে নারী কল্যাণে করেছেন।

দেশের জন্য নারীদের নিয়ে কাজ করা আশা ব্যক্ত করেছেন খালেদা খানম। তিনি বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য নারীদের সাথে নিয়ে কাজ করবো। আগে ব্যাপকভাবে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পাইনি। যা করেছি নিজের থেকে কাজ করেছি। তবে কাজ করার মন মানসিকতা ছিল বলে সম্ভব হয়েছে। এবার কাজ করার সুযোগ পেলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।

খালেদা খানম বলেন, ‘আমার জীবনের কোন চাওয়া পাওয়া নেই। যদি আমার ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া থাকতো, তাহলে আমি তুণমূল থেকে কাজ করে আজকের জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি ধাপে ধাপে কাজ করে এসেছি। একবারে এখানে আছিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি সংগঠনিকভাবে দক্ষতার সাথে মহিলা আওয়ামী লীগ করেছি। পরিচালনা করেছি জাতীয় মহিলা সংস্থা। ৩০০ টাকার ভাতা ছাড়া মহিলা সংস্থায় আর কোন সুযোগ ছিলনা। তারপরও নিজের মনোবল দিয়ে অসহায় নারীদের বিভিন্ন সহায়তা ও উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। অনেক সময় নিজে না খেয়ে আসহায় নারীদের জন্য কাজ করেছি। আমার কাছে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নাই। বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম নিষ্ঠার সাথে করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমি যে সুযোগ পেলাম, তা আমি নিষ্ঠার সাথে দেশের জন্য, মানুয়ের জন্য কাজ করবো। আমার সেই আগ্রহ ও ইচ্ছা আছে।’

গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি অকৃষি খাত যেমন গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছে। গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতে কাজ করবেন খালেদা খানম। ঝিনাইদহ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ষোষিত, নির্যাজিত মানুষদের জন্য কাজ কারাই আমার প্রধান লক্ষ্য। কারণ, আমি একজন নির্যাজিত মানুষ। এছাড়া যারা সততার সাথে স্বনির্ভর হতে চায়, আমি তাদের নিয়ে কাজ করবো। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবো। এছাড়া যারা মূল আওয়ামী লীগ করে পিছিয়ে আছে, তাদেরকে সামনে আনতে চাই। আমি এধরণের পরিকল্পনা করে সংরক্ষিত আসকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে চাই।’

খালেদা খানম বলেন, ‘সবসময় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করছেন, আমি সারা জীবন তার অনুকরণ করে কাজ করছি। তিনি যেমন সংরক্ষিত আসনের জন্য আমাদের মতো যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করেছেন, তেমনিভাবে আমরাও যেন তার মতো দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারি। সে স্বপ্ন এখন দেখছি।’

মাদক, সন্ত্রাস ও দূর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক মানবতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অন্তরায়। আমার প্রধান কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে মাদক, সন্ত্রাস ও দূর্নীতি নিমূল করা। আমি ঝিনাইদহের মানুষ। আমি ঝিনাইদহকে মাদক, সন্ত্রাস ও দূর্নীতি নিমূল করবো। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক রোধকল্পে সাম্প্রদায়িকতা ও মাদকবিরোধী প্রতিবাদ, তৎপরতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

যুব উন্নয়নে অগ্রাধিকার যুবদের মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত যুবসমাজ গড়াতে বিশেষ কাজ করবেন খালেদা খানম। তিনি বলেন, ‘ঝিনাইদহে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের জন্য আমি বিশেষভাবে কাজ করবো। আমার মাধ্যমে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের জন্য যা যা করণীয় আমি তা করবো। প্রতি বছর যেসব ছেলেমেয়েরা পাস করে বের হচ্ছে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। যা তারা বিপদে চলে না যায় সেদিকে আমি খেয়াল রাখবো। আমার যতুটুকু সম্ভব আমি তা করবো।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি তা করার চেষ্টা করবো।

ঝিনাইদহবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খালেদা খানম বলেন, ‘গুটি কয়েক নেতা ব্যতিত পুরো ঝিনাইদহের জনগণের ভালোবাসা আর তাদের আন্তরিকতা কারণে আমি সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে পেরেছি। আমি ঝিনাইদহে জনগণের স্বপ্ন যাতে বাস্তবায়ন হয়, তার জন্য যা যা করণীয় আমি তা করবো। ঝিনাইদহের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকবে। আমি নিষ্ঠা আর সততা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতিহার বাস্তবায় করবো। ঝিনাইদহের মানুয়ে ভাগ্য পরিবর্তনে আমার জীবন উৎসর্গ করতে আমি সচেষ্ট থাকবো।

২০০৫ সাল থেকে ঝিনাইদহ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করে আসছেন। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা শাখার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভার্টিকে চরিত্রহীন বলে কলঙ্ককিত ও অপমানিত করায় ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে পাঁচশত কোটি টাকার একটি মানহানি মামলায় নিজে বাদি হয়ে মহিলাদের পাশে থেকে মামলা দায়ের করেন তিনি।

সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ায় তাকে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন। সংরক্ষিত আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর খালেদা খানম ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শৈলকুপা আসন থেকে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত এমপি আব্দুল হাইকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button