কালীগঞ্জক্যাম্পাসজানা-অজানাটপ লিড

কালীগঞ্জের জাহিদ-জিহাদ একই বাগানে ফুটন্ত দুই গোলাপ-কড়ি

সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ

বড় ভাই জাহিদ হাসান, আর ছোট জিহাদ হাসান যেন জোড়া নাম। তারা হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও মেধার দিক দিয়ে রাজা। অভাবী রিকসা চালক বাবা শাজাহান আলীর সংসারে তারা যেন সৌরভে ভরা গোলাপের কড়ি। যা ঠিকমত ফুটলেই হয়তোবা সৌরভ ছড়াবে চারিদিকে। অভাবকে মাড়িয়ে দুই বছর আগে জিপিএ ৫ পেয়েছিল জাহিদ আর এবছর পেয়েছে জিহাদ। অনন্য মেধার অধিকারী দুই ভাই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামের হতদরিদ্র শাজাহানের ছেলে এবং রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।

সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়,টিনের ছাউনির বাঁশ দিয়ে ঘেরা একটি ঘরে তাদের বসবাস। বসতবাড়ির মাত্র ৫ শতক ছাড়া মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি নেই।

জাহিদ এবং জিহাদের মা জাহানারা খাতুন জানান, ২ ছেলে ১ মেয়ে তার। স্বামী শাজাহান আলী রিকসা চালিয়ে যা রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালান। সংসারে অভাব সব সময় লেগেই থাকে। এরমধ্যে চলে ছেলেদের লেখাপড়া। তিনি আরও জানান, বড় ছেলে জাহিদ হাসান ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। বর্তমানে সে যশোরের কাজী নজরুল ইসলাম ডির্গ্রী কলেজে মানবিক বিভাগের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। সে কলেজের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৪’শ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছে। আর এ বছর ছোট ছেলে জিহাদ হাসান এস,এসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এতোদিন ১ ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে হতো। এখন ২ ছেলের কলেজে লেখাপড়ার খরচ কিভাবে জোগাড় করবেন সে চিন্তায় আছেন।

মেধাবী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান তুহিন জানায়, তাদের বাবা যশোর শহরে রিকসা চালান। সেখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়েই দুই ভাইয়ের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ চালান। আমরা টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারিনা। কিন্ত নিজেদেরকে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতে হয়।

ছোট ভাই জিহাদ হাসান জানায়, বাবার বেশ বয়স হয়ে গেছে। সারাদিন রিকসা ঠেলে কয় টাকায় বা আয় করেন। তারপরও সংংসারের সকল সদস্যের খাবারের যোগান দেয়াটাও কষ্টকর ব্যাপার। তারপরও অনেক সময় বাজার না করেও আমাদের লেখাপড়ার খরচ দেন। কিন্ত এখন দুই ভাইয়ের খরচ কিভাবে আসবে সে চিন্তায় জিপিএ ৫ পাওয়ার আনন্দ ¤øান হয়ে গেছে।

প্রতিবেশী রুহুল আমিন খোকন জানান, জাহিদ ও জিহাদ মেধাবী । শত অভাবের মধ্যদিয়েও অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র দুই ভাই ভালো ফলাফল করে সকলকে চমকে দিয়েছে।

রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, জাহিদ ও জিহাদ তার স্কুলেরই শিক্ষার্থী ছিল। অভাবী পরিবারের সন্তান তবে লেখাপড়ায় তারা খুব মনোযোগী ছিল। যে কষ্ট করে তাদের ভ্যানচালক বাবা লেখাপড়ার খরচ যোগান দেন সে জন্য তাদের বাবা মাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button