জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

বসন্ত আর ভালবাসা দিবসে সৌরভ ছড়াচ্ছে ঝিনাইদহের ফুল

ঝিনাইদহের চোখ-
ভালোবাসা প্রকাশের মহামূল্যবান ফুলটি দেশের অগনিত তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত ফুলচাষিরা। ভালবাসা দিবস, বসন্ত বরণ, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের বেশি চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে এই ঝিনাইদহ এলাকার ফুল চাষীরা।

জাতীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও সারাবছর এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফুল দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। যশোরের পরেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহ। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখানে ফুলের চাষ শুরু। বর্তমানে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ১৭০ হেক্টরের বেশি জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ফুলচাষ হয় কালীগঞ্জ উপজেলাতে। এলাকাটি ফুলনগরী হিসাবে খ্যাত।

ঝিনাইদহ সদরের গান্না একটি বড় ফুলবাজার। গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, থাই গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ হরেক রকমের ফুলের পশরা সাজিয়ে বসেছেন তারা।

এবার ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছে ব্যবসায়ীরা। করোনার থাবা আর আমফান ঝড়ে অনেক ফুলচাষী পথে বসলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকুলে থাকায় লাভের মুখ দেখার আশা করছে তারা। দেশীয় নানা জাতের ফুলের পাশাপাশি এখানে ক্রমেই বাড়ছে ইউরোপিয়ান জনপ্রিয় ফুল জারবেরার চাষ। ভালবাসা দিবসে এই জারবেরা ফুলের একটি স্টিক ১০ থেকে ১১/১২ টাকা দরে বিক্রি হবে। আর পাইকারী হিসাবে ৮ টাকা দরে ১০০টি জারবেরার স্টিক বিক্রি হবে ৮০০ টাকা ।

এক বিঘা জমিতে গাঁদাসহ সাধারণ জাতের ফুল চাষ করতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা লাগে। আর ৩ মাসে খরচ বাদে লাভ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় জারবেরা ফুলচাষী ও পাইকারী ফুল বিক্রেতা টিপু সুলতান জানান, তার ১৬ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছে। এসব জমিতে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা ও থাই গোলাপের চাষ করেছে। এক একটি বাগানে ২০ লাখ টাকার ফুল রয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা আর আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সবচেয়ে দামী লিলিয়াম ফুল চাষ করতে পারেননি।

বিদেশী চায়না ফুল ও আমদানী করা প্লাস্টিক ফুলে দেশের বাজার ছয়লাব হওয়ায় দেশের ফুল চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান, কালীগঞ্জ ফুলচাষী সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান।

ঝিনাইদহ জেলার সদরের গান্না, বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকুপ, গুটিয়ানী, কামালহাট, বিনোদপুর, দৌলতপুর, রাড়িপাড়া, মঙ্গলপৈতা, মনোহরপুর, সাইটবাড়িয়া, বেথুলী, রাখালগাছি, রঘুনাথপুর গ্রামে ফুলের চাষ হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর, বালিয়াট, পাতবিলা, গোপিনাথপুর, বালিয়াডাঙ্গাসহ ১৩ টি গ্রামের মাঠে আছে ফুলের চাষ । জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়।

কৃষকেরা জানায়, সারাবছরই ফুল চাষ হয়। আর শীত মৌসুমে ফুলের উৎপাদন ও বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। ভালবাসা দিবসে বিক্রির জন্যে এসব মাঠের ফুল রাজধানী ঢাকার শাহবাগ সহ চট্টগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে পৌছে গেছে। গত কয়েক দিনে ট্রাক ট্রাক ফুল গেছে দেশের বড় বড় বাজারগুলোতে।

এ অঞ্চলের কৃষকেরা গত কয়েকদিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ফুলের মাঠেই। প্রতিদিন ফুল বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ীরা ছুটে এসেছেন ফুল সংগ্রহ করতে। ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এখানকার চাষীদের ব্যস্ততাও ছিল তুঙ্গে। শহর-নগরের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিতে হিমশিম খান ফুল চাষীরা ।

বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসষ্ট্যান্ডে দেখা গেছে, ভালবাসা দিবস উপলক্ষে শেষদিনের শেষ মুহুর্তে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন পরিবহন যোগে স্থানীয় বাজারে নিতে। ফুল চাষীরা জানান, টাকা খরচ করে ফুল বিক্রির জন্য কোথাও যাওয়া লাগেনা। তারা তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগীতা অর্থাৎ মোবাইল বা ফোনালাপের মাধ্যমে বাজার দর ঠিকঠাক কওে দুর-দুরান্তে ফুল পাঠিয়ে থাকেন বলেও জানান ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, ফলন ভালো পেতে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের দেয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।

তবে দেশের অর্থনীতিতে ফুলচাষ নীরব ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল এ ফসল সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে কোনো হিমাগার নেই। ফলে যখন বাজারে যোগান বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ দাম কমে যায় তখন লোকসানে বিক্রি করা ছাড়া ফুলচাষীদের উপায় থাকে না। ফলে কৃষকেরা বঞ্চিত হন ন্যায্যমূল্য থেকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button