অন্যান্য

ঢাকার বাইরে ‘ফোরজি’ কেবল বিজ্ঞাপনেই

ঝিনাইদহের চোখ:

দেশের চারটি অঞ্চলে মোবাইল সেবার মান পরীক্ষা (ড্রাইভ টেস্ট) করে কোথাও কোনো অপারেটরের সেবাতেই ফোরজির নির্ধারিত গতি পায়নি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ১৮টি জেলায় পরীক্ষা চালিয়ে বিটিআরসি সম্প্রতি এই ফলাফল প্রকাশ করেছে।

দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বা ফোরজি সেবা চালু করে।

বিটিআরসির নীতিমালায় সে সময় ঠিক করে দেওয়া হয়, ফোরজি সেবায় ডাউনলোড স্পিড হতে হবে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ৭ মেগাবিট (Mbps)।

কিন্তু ঢাকার বাইরে চার বিভাগে পরীক্ষা করে রংপুরে গ্রামীণফোনের ফোরজি সেবায় সর্বোচ্চ ৬.৮৮ এমবিপিএস গতি পেয়েছে বিটিআরসি। আর বরিশালে ফোরজি সেবার মান সবচেয়ে খারাপ। সেখানে বাংলালিংকের ফোরজিতে গতি পাওয়া গেছে নির্ধারিত মানের অর্ধেক, ৩.৫৬ এমবিপিএস।

মোবাইল অ্যানালাইটিক্স কোম্পানি ওপেন সিগন্যালের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ফোরজি ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড ৪০ এমবিপিএস এর বেশি।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় এ সেবার গতি ১৩.৯৫ এমবিপিএস, পাকিস্তানে ১৩.৫৬ এমবিপিএস, মিয়ানমারে ১৫.৫৬ এমবিপিএস এবং ভারতে ৬ এমবিপিএস।

ঢাকার বাইরে ফোরজি সেবার গতি (এমবিপিএস)

বরিশাল

রংপুর

রাজশাহী

খুলনা

জিপি

৫.১

৬.৮৮

৬.৬৯

৪.৬৩

রবি

৪.৮৯

৬.৫১

৬.৭৫

৫.৩৯

বাংলা লিংক

৩.৫৬

৪.৬৮

৫.১০

৪.৯৬

বিটিআরসির হিসাবে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ৯ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে ৮ কোটি ৬২ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক ফোরজি সেবায় আসেনি। কিন্তু থ্রিজি সেবা দিতেও তাদের ধুঁকতে হচ্ছে। যে চার অঞ্চলে বিটিআরসি ‘ড্রাইভ টেস্ট’ চালিয়েছে, তার কোথাও টেলিটকের গতি নির্ধারিত ন্যূনতম মানে পৌঁছাতে পারেনি।

বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মান অনুযায়ী, থ্রিজি সেবায় ডাউনলোড স্পিড হতে হবে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২ মেগাবিট (Mbps)।

কিন্তু টেলিটক থ্রিজির নামে যে সেবা দিচ্ছে বরিশালে তাতে গতি পাওয়া গেছে ১.৫ এমবিপিএস, রংপুরে ১.৯৯ এমবিপিএস, রাজশাহীতে ১.৮৭ এমবিপিএস এবং খুলনায় ১.৩৪ এমবিপিএস।

খুলনা এলাকায় রবির থ্রিজি সেবার মানও নির্ধারিত গতির চেয়ে কম। তবে অন্যান্য এলাকায় টেলিটক বাদে সব অপারেটর বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মানে থ্রিজি সেবা দিচ্ছে।

বিটিআরসি যে মান বেঁধে দিয়েছে, তাতে কলড্রপের হার কোনোভাবেই ২ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় টেলিটকের কলড্রপ হার ওই সময়ে ২ শতাংশের বেশি ছিল।

অন্যান্য অপারেটরের কলড্রপ হার নিয়েও গ্রাহকদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। তবে চার বিভাগে গ্রামীণ ফোন, রবি ও বাংলা লিংকের কলড্রপ হার নির্ধারিত মাত্রার মধ্যেই ছিল এল প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিটিআরসি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমীক্ষায় সেবার মানের যে চিত্র উঠে এসেছে, সে বিষয়ে অপরেটরগুলোর মধ্যে কেবল বাংলালিংকের প্রতিক্রিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পেরেছে।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ নির্ণয়ের মাত্রা চূড়ান্ত করার আগে অপারেটররা বিটিআরসিকে জানিয়েছিল যে, ওয়্যারলেস সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কোনো প্রযুক্তির গতি সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না, এবং দেশে ফোর জির জন্য যে গতি নির্ধারণ করা হয়েছে তা স্পেক্ট্রামের মূল্য ও অপারেটরদের আয়ের সাপেক্ষে বাস্তবসম্মত নয়।

“এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই জরিপ করা স্থানগুলোতে অপারেটররা কিছু নির্ধারিত মাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সার্বিকভাবে এই সার্ভিসের মান শুধু মোবাইল অপারেটরদের ওপর নির্ভর করে না। এনটিটিএন, আইসিএক্স ও আইজিডব্লিউ-এর মত অন্যান্য পক্ষের ওপরও সার্ভিসের মান নির্ভরশীল।”

তাইমুর রহমান বলেন, “বাংলালিংক কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও নেটওয়ার্ক কাভারেজের আধুনিক সমাধানের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বাজারে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সব সময় গ্রাহকদের সেবা গ্রহণের সার্বিক অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এ জন্যই কিছু কিছু জায়গায় আমাদের থ্রিজির গতি অন্যদের ফোরজি-এর গতির চেয়ে বেশি। গত বছর সর্বোচ্চ স্পেক্ট্রাম কেনার ফলে আমাদের ডুয়াল ক্যারিয়ার থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে।”

বিটিআরসির প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেবার মান নিয়ে বিটিআরসির নির্ধারিত গাইডলাইন রয়েছে, গাইড লাইন অনুযায়ী বিটিআরসি নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।”

আর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক  বলেন, “বিষয়টি পুরোপুরি বিবেচনা করে পরে জানানো হবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button