জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখাহরিনাকুন্ডু

ভোর থেকে ব্যস্ত হরিণাকুণ্ডুর গাছিরা

এইচ মাহবুব মিলু, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত ঝিনিইদহের হরিণাকুণ্ডু অঞ্চলে শীতের আগমনী বার্তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে খেজুরের রস আহরণের লক্ষে গাছীরা পার করছে ব্যস্ত সময়।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখনই গাছের মাথায় বিশেষ পদ্ধতিতে ডাল ( বাগো)কেটে রস সংগ্রেহের পূর্ব প্রস্ততিপর্ব। আর কয়েকদিন পরই গাছে লাগানো হবে নল এবং মাটির পাতিল( কাড়ে)। সেই পাতিলে সংগ্রহ করা হবে সুমিষ্ট খেজুরের রস। যা দিয়ে তৈরি হবে লোভনীয় সুমিষ্ট নলানী পাটালী এবং মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর সুস্বাদু গুড়। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু অঞ্চলের প্রয়ই সর্বত্রই চোখে পড়ে খেজুর গাছ।

উপজেলা কৃষি অফিসার, হাফিজ হাসান জানান উপজেলাতে খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মত। বিভিন্ন রাস্তার আশে পাশে, অনাবাদী জমিসহ চাষযোগ্য জমির চৌহদ্দির সীমানার চতুর্দিকে খেজুর গাছের আবাদ করে থাকে গ্রামের কৃষকরা। বিশেষ করে উপজেলার নারায়নকান্দী, সিঙ্গা, বলরামপুর, কুলবাড়িয়া, তাহেরহুদা, কালাপাহাড়িয়া, গাড়াবাড়িয়া, শিতলী, পারদখলপুর, সোনাতনপুর, গাগেন্না, ভাতুড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে খেজুরের গাছের সংখ্যা অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানা যায়। শীত মৌসূমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এসব গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজে ব্যস্তথাকে গাছীরা ।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের চাঁন আলীর খেজুর গাছ রয়েছে ১৭০টি। নারায়নকান্দী গ্রামের জুলহাক আলীর ১২০টি এবং পারদখলপুর গোলজার হোসেন ভাগে গাছ কাটে ৮০টির মতো। রস সংগ্রহের জন্য তারা এখন খেজুর গাছের আগা অর্থাৎ বাগো ঝোড়া, চাঁছা ছোলা অর্থাত জিড়েন কাট , দো- কাট , উলা পুছা , নলি মারার কাজ চলমান রয়েছ। শীত মৌসুম জুড়ে প্রায় চার মাস গাছীরা তাদের বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করে মৌসূমী একটি ভাল উপার্জণ করে থাকে। জালানী হিসাব গাছীরা খেজুর গাছ পরিষ্কার করা ডাল বা বাগো শুখানো থড়ি ব্যবহার করে থাকে। এসময় তাদের( গাছি প্রতি) প্রতিদিনের আয় হয়ে থাকে এক থেকে দুই হাজার টাকার মত।

খেজুর গাছ কাটা গাছিদের দৈনন্দিন শ্রমিক হিসেবে পাওয়া যায় ৫’শ থেকে ৭০০’শ টাকা মজুরিতে। শীত মৌসুমের আগমনে গ্রামের অনেক শ্রমজীবী ব্যক্তি খেজুর গাছ কেটে বাড়তি উপার্জন করে থাকে । হরিণাকুণ্ডুর পারবর্তীপুর, ভবানীপুর, মান্দিয়া, জোড়াদহ এবং পাশ্বর্বতী ডাকবাংলা, দশমাইল ও সরোজগঞ্জ বাজারে পাটলি ও গুড়ের হাট বসে। ব্যবসায়ীরা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অধিক মূল্যে সরবরাহ করে থকে। অনেক সময় দেশের বাইরেও রফতানি করা হয় এসব লোভনীয় শখের মৌসূমী ভোগ্যপন্য।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ হাফিজ হাসান আরও জানান, হরিণাকুণ্ডুতে প্রায় দশ হাজরের মত খেজুর গাছ আছে। এ উপজেলার খেজুরের গুড় পাটালীর সুনাম দেশজুড়ে। বানিজ্যিক ভাবে খেজুর রস এবং গুড় পা্টালী উৎপাদন করার বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহনের উদ্যোগের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সেই সাথে নিপা ভাইরাস থেকে খেজুর রস মুক্ত রাখার লক্ষে প্লাস্টিকের স্থায়ী ঢাকনা ব্যবহারের বিষয়টি জনপ্রিয় করে তোলবার প্রচেষ্টা চালানো হবে বলে তিনি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button