ধর্ম ও জীবন

যে অপরাধ তাওবায় ক্ষমা হয় না

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাওবা ও ইসতেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা করেন। তবে এমন কিছু অন্যায় কাজ রয়েছে যে সব অন্যায়ের ক্ষমা তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে হয় না। এর মধ্যে অন্যতম হলো সৃষ্টির প্রতি অন্যায় করা।

আল্লাহ দুনিয়াতে যত বিধান দিয়েছেন, তা তাঁর নিজের জন্য নয় বরং সবই মানুষের কল্যাণে প্রণয়ন করেছেন। এ সব বিধান দুই ভাগে বিভক্ত। যার মধ্যে কিছু বিধান লঙ্ঘনের অপরাধ তাওবা-ইসতেগফারে আল্লাহ ক্ষমা করেন। আর কিছু বিধান লঙ্ঘনের অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

প্রথম প্রকার
প্রথম প্রকার বিধান মানুষের ব্যক্তিগত কল্যাণ ও উন্নতির সঙ্গে জড়িত। সাধারণত এগুলোকে বলা হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক। এ বিধান লঙ্ঘন করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।

দ্বিতীয় প্রকার
দ্বিতীয় প্রকারের বিধান মানুষের সামাজিক জীবনের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। এগুলোকে বলা হয় হক্কুল ইবাদ বা সৃষ্টির হক বা অধিকার।

যে বিধান লঙ্ঘন করলে ক্ষমা পাওয়া

প্রথম প্রকার বিধান তথা হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘন করলে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাগতিক, মানসিক, আত্মিক ও পারলৌকিক উন্নতির পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলো হলো-

> ফরজ সালাত বা নামাজ ত্যাগ করা
> ফরজ সিয়াম বা রোজা পালন না করা
> ফরজ হজ আদায় না করা
> জিকির>আজকারসহ ইত্যাদি নির্দেশিত ইবআদতে অবহেলা করা। আবার
> আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা
> মদপানে জড়ানোসহ হারাম কাজে অংশগ্রহণ করা। এ সব অপরাধের তাওবা-ইসতেগফারে আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে বান্দাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

যে বিধান লঙ্ঘন করলে ক্ষমা পাওয়া যায় না

দ্বিতীয় প্রকার বিধান লঙ্ঘন করলে মানুষ নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আশপাশের মানুষ, সৃষ্টি অন্যান্য প্রাণীও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর তাহলো-

> কোনো ব্যক্তিকে বিনা অপরাধে গালি দেয়া
> অন্যের গিবতে লিপ্ত হওয়া
> কারো অর্থ>সম্পদ কেড়ে নেয়া
> ভেজাল দ্রব্য প্রদানকারী
> কারো মান>সম্মানে আঘাত করা
> সমাজে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা
> কাউকে ধোঁকা কিংবা ফাঁকি দেয়া
> কারো কাছ থেকে সুদ খাওয়া কিংবা কাউকে সুদ দেয়ার অপরাধে জড়িত হওয়া
> কাউকে খুন করা
> কোনো নারীকে ধর্ষণ করা
> কোনো পুরুষকে হয়রানি তথা ব্লাকমেইল করা।
>কেউ যদি কাউকে নামাজ ত্যাগে বাধ্য করে কিংবা মদপানসহ যাবতীয় অন্যায় কাজে প্ররোচিত করে তবে তারাও এ অপরাধে অপরাধী হবে। এ সব অন্যায়কারীকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না।

বিশেষ দায়িত্বে অবহেলা

উপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় প্রকারের অপরাধে পাশাপাশি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দেয়া বিশেষ দায়িত্ব অবহেলা করে তাতেও আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করবেন না। আর তাহলো-

> স্বামী যদি স্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করে
> স্ত্রী যদি স্বামীর দায়িত্ব পালন না করে
> পিতামাতা যদি সন্তানের দায়িত্ব পালন না করে
> সন্তান যদি পিতামাতার দায়িত্ব পালন না করে
> এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে
> কর্মকর্তা তথা দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি তার অধিনস্তদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে
> অধিনস্থ যদি দায়িত্বশীলের অর্পিত কাজ যথাযথ না করে
> এক সহকর্মী অন্য সহকর্মীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে
> অসহায়>দরিদ্র মানুষের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে
> বিধবা ও ইয়াতিমদের প্রতি কর্তা ব্যক্তি দায়িত্ব পালন না করে
> পোষা পশু ও প্রাণির প্রতি মনিব দায়িত্বশীল আচরণ না করে

তবে হক্কুল ইবাদত তথা সৃষ্টির হক নষ্টের অপরাধে অপরাধী হতে হবে। আর আল্লাহ তাআলা এ সব অপরাধীকে ক্ষমা করবেন না।

প্রথম প্রকারের পাপ বা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনায় তাওবা-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন বলে কুরআন ও হাদিসে বারবার সুসংবাদ দিয়েছেন।

পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকারের পাপের মধ্যে দুটি দিক রয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো আল্লাহর বিধানের অবমাননা সেগুলোর ক্ষেত্রে অপরাধী ব্যক্তি যদি একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা-ইসতেগফার করে তবে আল্লাহ চাইলে তাঁর বিধান অবমাননার দিকটি ক্ষমা করতে পারেন।

কিন্তু চূড়ান্ত বিচারের দিনে মহান বিচারক আল্লাহ তাআলা তার কোনো সৃষ্টির প্রাপ্য বা অধিকার নষ্টের অপরাধ ততক্ষণ ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অন্যায়কারীকে ক্ষমা না করবে।

সুতরাং এ কথা সুস্পষ্ট যে, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, মদপান, হারাম ভক্ষণকারী কিংবা আল্লাহর অধিকার সংশ্লিষ্ট বিধানের লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা লাভ করা সহজ।

আবার ভেজাল দ্রব্য প্রদানকারী, ফাঁকি বা ধোঁকা প্রদানকারী, যৌতুকগ্রহণকারী, ইয়াতিম বা দুর্বল কিংবা বিধবার সম্পদ হরণকারী, ঘুষ ও সুদসহ জুলুমকারী চাঁদাবাজ ব্যক্তির ক্ষমা লাভ খুবই কষ্টকর।

উল্লেখিত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট নির্যাতিত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা না পেলে আল্লাহ এ সব অপরাধে দোষী ব্যক্তিকে কখনো ক্ষমা করবেন না।

সুতরাং প্রত্যেক ঈমানদারের উচিত সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করা। অন্যায় সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে নিজেদের ক্ষমা প্রাপ্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সৃষ্টির সঙ্গে করা অপরাধে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। যারা ইতিমধ্যে হক্কুল ইবাদ তথা সৃষ্টিজীবের অধিকারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাদের কৃত অপরাধে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব আল্লাহর অধিকার এবং সৃষ্টির অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রেখে যাবতীয় অপরাধ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। অন্যায় করে ফেললে নির্ধারিত ব্যক্তিকে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালের জবাবদিহিতায় নিজেকে মুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button