জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখাশৈলকুপা

ঝিনাইদহের পাখি গ্রাম খ্যাত আশুরহাট অতিথিরা ভালো নেই

মাজেদ রেজা বাঁধন, ঝিনাইদহের চোখ-

নিরাপত্তাহীনতার কারনে শান্তিতে নেই ঝিনাইদহের নির্জন নিবিড় পল্লিতে প্রজনন করতে আসা শীতের অতিথি পাখিরা। রাত হলেই অবাদে চলে বাচ্ছা পাখিসহ মা পাখি শিকার। নিজ উদ্দ্যোগে প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসিকে পড়তে হয জীবন শংকায়। দেশের অমূল্যবান এই অতিথি পাখি সংরক্ষণে নেই দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা। তবে নতুন করে আশ্বাস দিয়েছে জেলার প্রাণী রক্ষার দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা।

২০০৭ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া ইউনিয়নের আশুরহাট নামক গ্রামে শীতের শুরুতে হঠাৎ করেই দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব অতিথি পাখির। এরা আশ্রয় নেয় ব্যক্তি মালিকানাধীন রাজ্জাক ও গোপালের নির্জন শিমুল বাগানে। প্রজনন ও বসবাসের জন্য নিরাপদ স্থান ভেবে প্রায় দশ বিঘা জমিতে পুরাতন গাছের ডালে বাসা বেধে প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করে এই সব অতিথি পাখিরা। বর্তমানে এখানে প্রায় পনেরো হাজার পাখির বসবাস। সেই থেকে প্রায় ১৩ বছর ধরে একাধারে বাস করছে শামুখ খৈ, পান কৌড়ি ও বিভিন্ন জাতের বক। গাছের ডালে বাসা বেধে ডিম পাড়ে এবং বাচ্ছা তুলে এই সব অতিথি পাখিরা। অত্র এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে আসে। সেই থেকে আশুর হাটকে পাখির গ্রাম হিসেবে চেনে বিভিন্ন এলাকার লোকেরা।

নির্জন পল্লিতে পাখির কলরব, দলবেঁধে ওড়াওড়ি, গাছের ডালে ডানা ঝাপটানি, নিজ নিজ বাসা তৈরিতে ব্যস্ত পাখিরা। বাচ্ছা পাখির কিচিরমিচির কলকাকলিতে মুগ্ধ হয়ে ভীড় জমায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। উপভোগ করে প্রাকৃতিক এই দৃশ্য।

এলাকাবাসি জানায় প্রতিদিন সকালে মা পাখিরা খাবারের সন্ধানে দলবেধে চলে যায় আবার ফিরে আসে গোধুলি লগ্নে। এক সময় এই স্থানটা পাখিদের অভয় আশ্রম ছিলো। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। পাখি শিকারীদের কারনে এই নিরাপদ যায়গা এখন পাখিদের জন্য অনিরাপদ হয়ে গেছে। রাতের আধারে প্রভাবশালীদের পরিচয়ে চলছে নির্বিচারে চলছে পাখি নিধন। পাখির মাংশ খাওয়ার সখ শুধু নিজেরাই পূরণ করছে না ফ্রিজে সংরক্ষণ করে তা পাঠাচ্ছে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি। এখানকার পাখির মাংশ চলে যাচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকাতেও। পাশের ডুবায় ভেসে আছে নিধনকৃত পাখির বস্তা বস্তা ফোড় পাখনা।

ব্যক্তি উদ্দ্যোগে বাধা দিলে দেখানো হয় নানা ধরনের ভয়ভীতি। সংখ্যালঘু অধ্যসিত এলাকা হওয়ায় প্রায় বিনা বাধায় শিকার করছে পাখি।

ব্যক্তি মালিকানা জমি ও গাছে এইসব অতিথি পাখির অবাদ বিচরণ। নিজ প্রয়োজনে অনেক পুরাতন গাছ কেটে ফেলছে মালিকেরা। পাখি বসবাসকারী বাগানের মালিকদের মধ্যে কেও কেও গাছ কেটে জমি ফাকা করে বাড়ি তৈরি করছে। যার ফলে পাখির নিরাপদ আশ্রয় এখন আর নিরাপদ নেই। দিন দিন অনিরাপদ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় পাখির গ্রামে আর পাখির কলরব থাকবে না। দেখা মিলবে না পাখি দর্শনার্থীদের সমাগম। হারিয়ে যাবে এলাকার গর্ব অতিথি পাখি। তাই পাখি প্রেমিক ও এলাকাবাসির দাবি নিরাপদে পাখি বসবাসের সু ব্যবস্থা করে যাবতীয় ব্যবস্থা এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে সংশিষ্টরা।

এইসব পাখি সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার বন কর্মকর্ত জানান পাখি সংরক্ষণের জন্য বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাখি শিকার ঠেকাতে অচিরেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button