মাঠে-ময়দানে

জিম্বাবুয়ের সামনে পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল বাংলাদেশ

চতুর্থ দিন সকালে বাংলাদেশ দল ফলোঅন না করিয়ে আবারও ব্যাট করতে নামার পরই শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঞ্জন, কোথায় গিয়ে থামবে বাংলাদেশ? কত রানের লক্ষ্যকে নিরাপদ মনে করছে বাংলাদেশ? ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হলে এ প্রশ্ন আরও প্রকট হয় যে জিম্বাবুয়ের সামনে কত রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পারবে বাংলাদেশ?

তবে অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিঠুনের ফিফটি এবং অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে সফরকারীদের সামনে পাহাড়সম লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৪ রানের ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ জিততে জিম্বাবুয়েকে করতে হবে ৪৪৩ রান।

মাত্র ২৫ রানের মাথায় ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে চাপ সামাল দিয়ে মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ মিলে গড়েন ১১৮ রানের জুটি। ৬৭ রান করে মিঠুন ফিরে গেলেও একপ্রান্ত ধরে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। আরিফুলও ফিরে যান অল্পতেই।

তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গ দেন প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের সাথে ১৪৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়া মেহেদি হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৭৩ রান যোগ করেন এ দুজন।

৭০ বলে দুই চার এবং এক ছক্কার মারে নিজের ক্যারিয়ারের ১৬তম পঞ্চাশ পূরণ করেন মাহমুদউল্লাহ। পরে হাত খুলে খেলে মাত্র ৫২ বলে আরও দুটি চার এবং একটি ছক্কার মারে পরবর্তী পঞ্চাশ রান করে ফেলেন তিনি। তার সেঞ্চুরিতে ভর করে ২২৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ২৭ রান করে।

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে লিটন দাস ও ইমরুল কায়েসের সামনে সুযোগ ছিলো টেস্ট দলে নিজেদের জায়গা পাকা করার। কিন্তু দুজনের কেউই নিতে চাইলেন না সে সুযোগ। সিরিজের দুই ম্যাচের চার ইনিংসেই ব্যর্থ হলেন এ দুই ওপেনার।

সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুখ রক্ষা করা ৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ব্যতীত বলার মতো আর কিছুই নেই এই জুটির ভাণ্ডারে। ব্যর্থতার ধারা বজায় রেখে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রানেই সাজঘরে ফিরে গেছেন লিটন ও ইমরুল। তাদের দেখাদেখি আউট হয়ে যান প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ার মুমিনুল হকও। ২১৮ রানের বিশাল লিড থাকা সত্বেও চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে জিম্বাবুয়ে যখন ২১৮ রানে পিছিয়ে, তখন থেকেই সবার মনে চলছে একটি প্রশ্ন চতুর্থ দিন সকালে কি করবে বাংলাদেশ? সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি তাইজুল ইসলাম দিতে পারেননি এ প্রশ্নের সদুত্তর। তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে চতুর্থ দিন সকাল পর্যন্ত।

অবশেষে চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর মিনিট ১৫ আগে দলীয় সুত্রে জানা যায় ২১৮ রানে এগিয়ে থাকলেও জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করাবে না বাংলাদেশ। নিজেরাই ব্যাট করতে নামবে দ্বিতীয় ইনিংসে।

দলের পরিকল্পনা ছিলো অনেকটা এরকম যে, চতুর্থ দিন সকালে দেড়-দুই সেশন ব্যাট করে সফরকারীদের সামনে বড়-সড় একটি লক্ষ্য ছুঁড়ে দেবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এরপর ম্যাচের বাকি চার-সাড়ে চার সেশনে অলআউট করে ম্যাচ জিতে নেয়ার মাধ্যমে সমতায় সিরিজ শেষ করবে বাংলাদেশ।

কিন্তু এ পরিকল্পনায় শুরুতেই বাঁধ সাধেন জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জার্ভিস। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া জার্ভিস দ্বিতীয় ইনিংসে এক ওভারের মধ্যেই সাজঘরে পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে।

২১৮ রানের বিশাল লিড সাথে নিয়ে ব্যাট করতে নেমেও যেন স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইমরুল। শুরু থেকেই নড়বড় ব্যাটিং করতে করতে হুট করেই ইনিংসের পঞ্চম ওভারে খেলতে গেলেন বড় শট। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করে তিনি ধরা পড়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ৩ রান।

ইমরুল ফিরে যাওয়ার এক বল পরেই অগ্রজ ওপেনারের পথ ধরেন লিটনও। জার্ভিসের করা অফস্টাম্পের খানিক বাইরের বল লাইন বুঝে খেলতে না পারার মাশুল দিয়ে বোল্ড হয়ে যান লিটন। ১৪ বল খেলে ৪ রান করতে পেরেছেন তিনি।

এক ওভার পরেই ডোনাল্ড তিরিপানোর অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন মুমিনুল। মাত্র ৫ বলের ইনিংসে ১ রান করে সাজঘরে ফিরে যাওয়া মুমিনুল বাড়িয়ে দিয়ে যান বাংলাদেশের বিপদ।

প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে পড়েছিল তিন উইকেট। সেখান থেকে রেকর্ডগড়া জুটিতে দলকে রানপাহাড়ে বসিয়েছিলেন মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আর হয়নি এমন কিছু। ওপেনারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর এবার ব্যর্থ হন প্রথম ইনিংসের দুই নায়ক মুমিনুল ও মুশফিক।

মুমিনুলের বিদায়ে মাত্র দশম ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। চাপ সামাল দেয়ার মিশনে মুশফিকও টেকেননি বেশিক্ষণ। দলীয় ২৫ রানের মাথায় তিনিও বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের উইকেট। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানের বিশাল লিড থাকা সত্বেও স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছিল না বাংলাদেশ।

অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল লেগসাইডে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। এক চারের মারে ১৯ বলে ৭ রান করেন তিনি।

মাহমুদউল্লাহর আগে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুনও। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মিঠুন-মাহমুদউল্লাহ মিলে যোগ করেন ১১৮ রান। দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৬৭ রানে সাজঘরে ফিরেছেন মিঠুন। ৪টি চার ও ১ ছক্কার মারে এ রান করেন তিনি। মিঠুন ফিরে যাওয়ার পর অল্পতেই সাজঘরে ফিরে যান আরিফুলও।

বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর থেকে ১০ ইনিংস খেলেও কোনো ফিফটি করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।

অবশেষে প্রায় দশ মাস পরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চাশের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

দলের কঠিন চাপের মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহর এ ফিফটি স্বস্তি এনেছে বাংলাদেশ দলে। ৭০ বলে দুই চার এবং এক ছক্কার মারে নিজের ক্যারিয়ারের ১৬তম পঞ্চাশ পূরণ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button