ক্যাম্পাসজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

ঝিনাইদহের মিয়ার দালানে কিছুক্ষণ—-আজাহার ইসলাম

ঝিনাইদহের চোখ-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করেই বলেছিলেন, ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি?’ হাজারো ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে কার না মন চায়! তাইতো অনেকেই একটু অবসর পেলেই কোলাহল থেকে দূরে সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে ভ্রমণে সময় পার করে। ভ্রমণপিপাসু মন প্রতিনিয়তই নতুন কিছু জানার আগ্রহে থাকে।

ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুরারিদহ গ্রামে অবস্থিত ‘মিয়ার দালান।’ সব ব্যস্থতাতে ছুটি দিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেই জমিদার বাড়িতে। দিনটি ছিল ১৯ জানুয়ারি। তখনো মহামারি করোনা আমাদের মাতৃভূমিতে হানা দেয়নি।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে খুব বেশি টাকা গুণতে হয়নি মিয়ার দালান ভ্রমণে। দুপুরের ক্লাস শেষে হঠাৎ পরিকল্পনায় ঘুরতে গিয়েছিলাম মিয়ার দালান। ক্যাম্পাসের কাছে হওয়ায় চেপে বসলাম ক্যাম্পাসের বাসে। ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাস্তা চিড়ে সাঁই সাঁই করে ছুটি চললো বাস।

ঝিনাইদহের আরাপপুরে বাড়ি বান্ধবী অনন্যা রহমানের। সে ব্যতীত আমরা সবাই প্রথমবার যাচ্ছি সেখানে। অনন্যার সুবাদে পথ চিনতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। আমরা ঝিনাইদহের আরাপপুরে নেমে পড়লাম ক্যাম্পাসের বাস থেকে। তারপর ইজি বাইকে চেপে রওনা হলাম সেই স্মৃতিবিজরিত মিয়ার দালানের উদ্যেশ্যে। কিন্তু ইজিবাইক চালক পথ ভুলে প্রায় ২ কিমি বেশি দূরে নিয়ে গিয়েছিল। পরে অনন্যাই পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল দালানে।

বলা হয়ে থাকে, বাড়িটি থেকে নবগঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নিত করা যায়। নদীতে যেভাবে বাঁধ দিয়ে ইমারতটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেভাবে তৈরি আর কোনো পুরোনো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে নেই।

দালানটির ব্যাপক পরিচিতির প্রধান কারণ একটি বিশেষ খেজুরগাছ। যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল। প্রতিটি মাথা থেকেই রস আহরণ করা যেত। তবে এখন আর খেজুরগাছটি নেই। সেই গাছটি না থাকলেও দাঁড়িয়ে আছে অনেক খেজুর গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দালানটি দেখলে মনে হয় নদীগর্ভে দাঁড়িয়ে আছে। চুন-সুরকির সঙ্গে ইটের গাঁথুনির এ দালানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১৬টি কক্ষ।

দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর রয়েছে একটি চিলেকোঠা। শ্বেতপাথর দিয়ে আচ্ছাদিত এই চিলেকোঠা নামাজঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে সংরক্ষণ, পরিচর্যার তদারকির অভাবে বিলীন হওয়ার পথে প্রায় দুইশ’ বছর আগে নির্মিত এই দালান। খসে পড়েছে দালানটির বিভিন্ন যায়গার ইট পাথর। এছাড়াও আগাছা, শ্যাওলায় ভরে গেছে এটি। কয়েক বছর আগেও এ স্থাপত্য দেখতে দর্শনার্থীরা ভীড় করলেও এখন ভীড় দেখা যায়না।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো সেলফি আর ছবি তোলায় স্মৃতি ধরে রাখতে। বর্তমান যুগে মানুষ যতটা না ভ্রমণে যায় তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে ছবি তুলতে। দালানের বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখলাম ও ছবি তুললাম। এই পুরাতন দালানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মনমুগ্ধকর নবগঙ্গা নদীটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।

দালান দেখা শেষে হেটে রওনা হলাম আরাপপুরের পথে। এক বন্ধু বললো ভূমি অফিসের সামনে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। ইজিবাইকে চেপে গিয়ে দেখলাম মেলা শেষ হয়ে গেছে। তাই আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে ভূমি অফিস ঘুরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। সন্ধ্যায় ঝিনাইদের মালাই চা খেয়ে ফেরার অপেক্ষায়। বলা বাহুল্য, যেকোন চাপ্রেমিদের এই মালাই চা মুগ্ধ করতে সক্ষম।

এবার ফেরার পালা। ক্যাম্পাসের বাসের জন্য অপেক্ষা করছি আরাপপুর বাসস্টপে। অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে বাস আসলো। বাসে চেপে ফিরলাম চিরচেনা ক্যাম্পাসে। দিনটি জায়গা করে নিল ভ্রমণপিপাসু মনের মধ্যে। পৃথিবী সুস্থ হলে আবার ছুটে যাব প্রকৃতির সান্নিধ্যে নতুন জায়গায়, নতুনভাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button