পাঠকের কথা

মিউজিয়াম শহরের প্রত্যাশা, বাঁধা ও দৃষ্টি বিন্যাস—-গুলজার হোসেন গরিব

ঝিনাইদহের চোখ-

একটি মিউজিয়াম শহরের প্রত্যাশায় বহুদিন থেকে স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নরা হতাশাগ্রস্ত। হতাশাগ্রস্তের মধ্যেও স্বপ্নরা বেঁচে থাকে কিছু মানুষের জন্য, যাঁরা এই শহরকে আধুনিক শহরের রূপ দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং স্বপ্ন দেখেন। আমাদেরও উচিৎ সেইসব স্বপ্নদ্রষ্টাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য সহায়তা করা। তাহলেই কোনোদিন আমাদের শহর,আধুনিক থেকে ক্রমে ক্রমে অত্যাধুনিক তারপর মিউজিয়াম শহরে রূপান্তর হতো। আমাদের শহর হতো পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র। আমাদের শহর হতো বিজ্ঞানীদের আঁতুড়ঘর। মানুষকে মানুষ বানানোর কারখানা। স্বপ্নকে পূরণ করার মহা উদ্যান। বিশ্বকে পরিচালনার পরিচালক। দূরদর্শী দৃষ্টির লেন্স। নান্দনিকতার পটভূমি ইত্যাদি। আমাদের শহর হতো উজ্জ্বল নক্ষত্র।

দুঃখের বিষয় হলো আমি যে শহরে দাঁড়িয়ে এই চিন্তা-ভাবনা করছি, একটি মিউজিয়াম শহরের স্বপ্ন দেখছি, এর বিপরীত চিন্তাধারার মানুষও বাস করে এবং এদের সংখ্যাই বেশি।এদের উন্নত ও উন্নতি সম্পর্কে ধারণা নেই। এরা বোঝেই না, উন্নত স্বপ্নই উন্নতির চাবিকাঠি। এরা সপ্ন যে কী, এখনো জানে না। এরা মূলত দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন বলে এরা এখনো আধুনিক, অত্যাধুনিক পথে হাঁটেনি। আর মিউজিয়াম শহরের কল্পনা না তো কল্পনাতীত। এরা আধুনিক, অত্যাধুনিক দৃষ্টির মানুষ নয়। এরা উন্নত হয় না, কাউকে হতেও দেয় না। এককথায় এরা নীচ বা অনুন্নত দৃষ্টিজ্ঞানের মানুষ। এদের জন্যই আমার শহরটি আজো বেওয়ারিশ লাশ হয়ে ভাগাড়ে পড়ে আছে। প্রাণহীন জেনেও বেওয়ারিশকে প্রাণ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন কিছু স্বপ্নদ্রষ্টারা। এই স্বপ্নদ্রষ্টাদের উপর বর করেই প্রত্যাশা করি একটি মিউজিয়াম শহরের।

আসলে শহর কাকে বলে? উত্তর সহজ। গ্রাম্য জীবনধারা থেকে একটু উন্নত জীবনধারায় বাস করার জন্য যে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়, তাকেই শহর বলে। যেখানে হাতের কাছে থাকে দোকানপাট-হাটবাজার এবং বেশকিছু সুবিধে দেয়া স্থানের নামই শহর। আধুনিক শহর মানে একটু বেশি সুবিধের জায়গা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন অধিদপ্তর দিয়ে সাজানো শহুরে অবকাঠামো। জীবন-যাপনের মান সাধারণ শহরের চাইতে একটু উন্নতশীল। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান একটু চোখের পড়ার মতন। কয়েকশ গ্রামের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। অত্যাধুনিক শহর মানে আধুনিকের চেয়ে আরো অনেকগুন উন্নত শহর। বিশাল বিশাল চোখ ধাঁধানো শপিংমল। উন্নত চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষার সুব্যবস্থা, বড় শিল্প কল-কারখানা। ব্যাংকিং সুবিধা। আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা, দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিলাসবহুল হোটেল। চারদিকে কৃত্রিম আশ্চর্যজনক স্থাপত্য।উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা করার জন্য গবেষণাগার।যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ইত্যাদি সাজানো হয় অত্যাধুনিক শহর। মিউজিয়াম শহর মানে এসকল শহরের চাইতে কোটি কোটিগুণ উন্নত। এখানে মানবজীবন ও প্রকৃতিবান্ধব সকল ব্যবস্থাই থাকবে সুন্দর-নান্দনিক, টেকসই, মানসম্মত। মিউজিয়াম শহরে যে কোনো অমানুষকে ঢুকালে মানুষ হয়ে বেরোবে। দৃষ্টিহীনকে ঢুকালে দৃষ্টিপ্রসারী হয়ে বেরোবে। জ্ঞানপ্রতিবন্ধীদের ঢুকালে জ্ঞানী হয়ে বেরোবে। মিউজিয়াম শহরে কৃত্রিমতায় ফুটিয়ে তুলবে পৃথিবীর সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পৃথিবীর সকল বিদ্যার বিদ্যাঙ্গন হবে এই মিউজিয়াম শহর। গবেষণার উৎকৃষ্ট জায়গা হবে এই মিউজিয়াম শহর। পৃথিবীর সকল সেরা মানুষগুলো এই মিউজিয়াম শহর থেকেই তৈরি করা হবে। মিউজিয়াম শহর নির্মাণে আগে এই শহরের জরাজীর্ণতাকে ভেঙেচূড়ে বিনির্মাণ করতে হবে আধুনিক শহর। তারপর আধুনিক শহরকে ভেঙে অত্যাধুনিক শহর নির্মাণ করা। এরপর অত্যাধুনিকতাকে অনেকগুন পিছনে ফেলে মাথা উচু করে দাঁড়াবে প্রত্যাশিত সেই মিউজিয়াম শহর। আপাতত থাক মিউজিয়াম শহরের স্বপ্ন।আমরা প্রথমে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক শহরের স্বপ্ন আর একটু উন্নত হওয়ার চেষ্টা করি, এটাই হবে আমাদের জন্য পৃথিবী সেরা হওয়ার সুযোগ।

সময় এসেছে আধুনিক, অত্যাধুনিক হবার।পুরাতন শহর ভেঙে নতুন সজ্জায় সজ্জিত করার। কিন্তু কীভাবে করবেন? কারা করবে? আমরা জানি,পৃথিবীর সব আধুনিক, অত্যাধুনিক শহরগুলো গড়ে উঠেছে উন্নত চেতনাসম্পন্ন স্বপ্নদ্রষ্টাদের হাত ধরে।দুঃখের বিষয়, আমাদের এ শহর কয়েকশ বছরের পুরানা হলেও, কালে কালে কোনো কালেই এমন চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন স্বপ্নদ্রষ্টাদের সংখ্যা খুব পাওয়া যায় না। স্বপ্নদ্রষ্টা কম থাকার কারণে কয়েকশ বছরেও এই শহরটি যুগোপযোগী আধুনিক হয় নি। নান্দনিক হয় নি। বৈশ্বিক হয় নি। দিন দিন মরে যাচ্ছে জরাজীর্ণতায়। প্রশ্ন হলো, শহুরে পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানসম্মত মানের তৈরি করতে গেলে কী করতে হবে? নিশ্চই অনুন্নত শহরকে ভেঙে যুগোপযোগী, আধুনিক, অত্যাধুনিক পরিকাঠামোয় তৈরি করা। এসব কারা করবে? অবশ্যই তাঁরা করবে, যাঁরা অনুন্নতকে ভেঙে উন্নতশীল এবং বৈশ্বিক মানের অত্যাধুনিক শহর উপহার দেয়ার সক্ষমতা রাখে। তবে ভাঙতে যাওয়া মানেই পদে পদে বিপদ, হৈচৈ, আন্দোলন, মিছিল মিটিং হস্তাহস্তি, ধস্তাধস্তি,খুনখারাবি, কেসকাট্টা। তবুও আধুনিক স্বপ্নদ্রষ্টারা,এদের সাথে যুদ্ধ করেই শহরের কিছু না কিছু উন্নতি করে যান। উন্নতি করতে গিয়ে আবার ঠেলতে হয় এভারেস্ট পর্বতমালার মতন চরম বাঁধা। এই এভারেস্ট আসলে কিছু জ্ঞানান্ধ অনাধুনিক সুশীল। তারা ভেবেই নিয়েছে এই শহর যেমন আছে তার চেয়ে বেশি আর প্রয়োজন নেই। তাঁরা হয় তো মনে করেন শহর অত্যাধুনিক হলে তাঁদের সম্মান কমে যাবে। সুশীলদের সাথে আবার যোগ দেয় কিছু অর্ধমৃত অনুলিপি শিক্ষায় শিক্ষিত, এরা সুশীলদের চাইতেও কঠিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এরা শহরের আধুনিকতা চায় না। এরা আধুনিক স্বপ্নদ্রষ্টাদের বিপক্ষে প্রস্তুত করে কিছু জ্ঞানপ্রতিবন্ধীদের দিয়ে প্রতিবাদী দল। তারপর জ্ঞানপ্রতিবন্ধীরা প্রতিবাদের মাধ্যমে নষ্ট করতে চায় উন্নতির চাকা। এদের মগজে আধুনিক জ্ঞানের কোনো রেখা-চিহ্ন নেই। এরা আধুনিক কাকে বলে জানেই না। এরা খোঁজখবরও রাখে না, আজকের বিশ্ব কতটুকু আর কীভাবে আধুনিক হলো। এরা অনুন্নত, নোংরা, নর্দমাময় পরিবেশকে, জীবন উপযোগী মনে করেন আর সেখানেই তাদের জীবন কাটাতে বেশি পছন্দ করেন। এদের কাছে আধুনিক জীবন ব্যবস্থা চক্ষুশূল। এরা কখনো আধুনিক হতে চায় না। এরা জীবন ও শহরকে আধুনিক করতে দিতেও চায় না। কেউ যদি শহরের পরিবেশকে আধুনিক বা নান্দনিক করার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর আর রক্ষা নেই। অনুন্নত মানুষগুলো তাৎক্ষণিকভাবে, আধুনিক শহরের রূপকারদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘোর বিরোধীপনা করে এভারেস্ট হয়ে। কঠিন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এগোবার পথে। এরা বোঝেই না, এরা পিছিয়ে দিচ্ছে আধুনিক শহরের অগ্রগতি। এরা চায় শহর প্রাণবন্ত না হোক, বৈশ্বিক মানের না হোক। চায় সুন্দর জীবন অন্ধকারের নিমজ্জিত হোক। তবুও এদের সব বাঁধা অতিক্রম করে, সাহসী স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষগুলো শহরকে আধুনিক করার চেষ্টা করেন আপ্রাণ।

আমাদের একটি প্রবাদ আছে “তেলো মাথায় তেল দেয়” এটা একদম সত্যি এবং বাস্তবিক। কোনো শহরে যদি বিদ্যাগ্রহীদের জন্য বিদ্যা বিদ্যাঙ্গন না থাকে, গবেষকদের জন্য যদি গবেষণার সরঞ্জাম না থাকে, পর্যটকদের জন্য যদি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র না থাকে, বিনিয়োগকারীদের জন্য যদি পণ্য না থাকে, তাহলে কেনো সে শহরে মানুষ যাবে? না সারা পৃথিবী থেকে কেউই আসবে না আপনার শহরে, যতক্ষণ না আপনার শহর তাঁদের চাহিদা মেটাতে পারে। আশাকরি বুঝতে পেরেছি কেনো তেলো মাথাা তেল দেয়।

আমার শহরটি সকল শহরের কেন্দ্রবিন্দু হলে, যাচ্ছেতাই করে জীবন কাটাতে হতো না আমাদের। যদিও আমার শহরটি অনেক আগেই বিশাল শহরে রূপান্তর হতে পারতো। লালন সাঁই,পাগলা কানাই, দুদ্দু শাহ, পাঞ্জু শাহ এবং ইনাদের মতন আরো যাঁরা আছেন তাঁদের নিয়ে গড়ে উঠতে পারতো আধ্যাত্মবাদ, ভাববাদ, সহজিয়া-বাউল মতাদর্শের বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও গবেষণাগার। তাহলে এ শহরে সারা পৃথিবী থেকে এই মতাবলম্বী মানুষগুলো ছুটে আসতো মনানন্দে তাঁদের জ্ঞান অন্বেষণে। মহা-নায়ক বাঘাযতিনকে ঘিরে গড়ে উঠতো, রাজনীতিকে জানার জন্য রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রাজনীতিকে ধারণ করার জন্য ছুটে আসতো পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে দেশপ্রেমীরা, আমাদের শহর হতো রাজনীতি শেখানোর পটভূমি। গণিতবিদ কেপি বসুকে ঘিরে গড়ে উঠতো,গণিতশাস্ত্রের বিশ্ববিদ্যালয়।আমাদের শহর হতো গণিতশাস্ত্রের আঁতুড়ঘর।জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম সূত্রে গড়ে উঠতে পারতো, পদার্থ, গণিত, বিশ্বতত্ত্ব ও জ্যোতির্বিদ্যার কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের শহর হতো বিজ্ঞানীদের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারতো আকাশযান চালানোর বিশ্বসেরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আমাদের শহর হতো পাইলটদের আবাসভূমি। এবার আমি আমার শহরের নাম বলি, আমার শহরের নাম ঝিনাইদহ। ঝিনাইদহের ঐতিহ্যকে ঘিরে একটি স্লোগান আছে “ধান কলা, পান, ঝিনাইদহের প্রাণ” এই ধান,কলা পানকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারতো, পণ্যের বিশাল হাট-বাজার যেখানে আসতো দেশবিদেশ থেকে নানানরকম মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের শহরে আসলে আমরা বুঝতে পারতাম তাঁদের ভাষাসংস্কৃতি, আমরাও আমাদের ভাষাসংস্কৃতি তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারতাম আর আমাদের শহর হয়ে উঠতো পৃথিবীর একমাত্র আলোক উজ্জ্বল শহর। বড় দুঃখের বিষয়, আমাদের ঝিনাইদহের মাটিতে পৃথিবী অবলোকিত মহা মানুষের জন্ম হলেও আমরা তাঁদের উত্তরসূরি হয়ে কোনো কালেই হাঁটিনি বরং তাঁদের আবিষ্কারকে অবজ্ঞা অবহেলা করে এই শহরকে ক্রমান্বয়ে করেছি ঘোর অন্ধকার। তাঁদের গুণ, নাম, খ্যাতি এবং তাঁদের আবিষ্কারদ্বারা নিজেদেরকে সমৃদ্ধশালী করতে পারিনি, সমৃদ্ধশালী করার চেষ্টাও করি নি। চেষ্টা করলে আমাদের এ শহর হয়ে উঠতো, আমার সেই প্রত্যাশিত শহর (মিউজিয়াম শহর) আবার কেউ যদি এই শহরকে একটু আধুনিক করার চেষ্টা করে তাহলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেই অনুন্নত, অর্ধমৃত, অনাধুনিক, নোংরা চিন্তার মানুষেরা।

একটি দুঃখ ;সম্প্রতি ঝিনাইদহের পৌর শিশু পার্কটি ভেঙে অত্যাধুনিক পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু মার্কেটটি না করতে দেয়ার জন্য চলছে বিভিন্ন রকমে প্রচেষ্টা। এই পৌর শিশুপার্ক সম্পর্কে কিছু কথা বলা, প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এই পৌর শিশুপার্কে ছিলো একটি ছোট্ট শহীদমিনার, যেখানে ভাষা শহীদদের স্মরণে একসময় অল্পকিছু মানুষ সমবেত হতো। তারপর ছোট্ট শহীদমিনারটি সেখান থেকে স্থানান্তর করে, ঝিনাইদহ মুজিব চত্বরের পাশে নির্মাণ করলে, শিশুপার্কে থাকা ছোট্ট শহীদমিনারটির তখন একদমই গুরুত্ব কমে যায়। গুরুত্ব কমে যাওয়ারই কথা, কারণ যে কোনো মানুষই বটবৃক্ষের ছায়া থুয়ে ছায়াহীন বাবলাতলায় আশ্রয় নেবে না, নেয়ও না। তদ্রূপ ঝিনাইদহ জেলার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারটি। এই শহীদমিনার এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বিতীয় শহীদমিনার। পৌর শিশুপার্কে শিশুদের যাতায়াতও তেমন বেশি ছিলো না, এবিষয় সবারই জানা। শিশুরা গেলেও লজ্জায় বাবামার হাত ধরে বেরোয়ে আসতে বাধ্য হতো। না বেরোয়ে কী করবে? পার্কে গিয়ে দেখতো, পার্কে থাকা ছোট ছোট গাছগুলোর গোড়ায় বসে প্রেমিক প্রেমিকারা, একজন আরেকজনের ঠোঁট থেকে মধু বের করতো। এই মধু বের করা দেখে শিশুরা লজ্জা পেতো, সেই লজ্জায় ফিরে আসতো পার্ক থেকে। যার জন্য কখনোই শিশুদের সমাগম তেমন চোখে পড়ে নি। কখনো কখনো কিশোর কিশোরীদের বাবামার হাতে তুলে দিতেন, পার্কের মধ্যে অশ্লীল কর্মকাণ্ড রোধ করতে, ঝিনাইদহে দায়িত্বরত বাংলাদেশ পুলিশেরা। থাক সে কথা। ঝিনাইদহে ইতিমধ্যে বেশকটি চমৎকার পার্ক নির্মাণ হয়েছে, জোহান পার্ক তার মধ্যে অনন্য। নির্মিত হচ্ছে, নবগঙ্গা নদীর কূল ধরে বিশাল ওয়াকওয়ে।এই ওয়াকওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে, ঝিনাইদহ জেলা শহর হবে, অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি অনন্য, দৃষ্টিনন্দন। আমার দুঃখ হলো, যারা পৌর সুপার মার্কেটটি হতে না দেয়ার জন্য আন্দোলন করছে, তাদের জন্য।

দুঃখ তাদের জন্য, যারা এই আন্দোলনের মাধ্যমে শহরের মান পতিত করতে চাচ্ছে। দুঃখ তাদের জন্য, যারা এই আন্দোলন করে আধুনিক শহর বানানো থেকে এশহকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দুঃখ তাদের জন্য, যারা উন্নত আর উন্নয়নশীল আন্দোলন করা এখনো শেখেনি। দুঃখ তাদের জন্য, যারা এই শহরের সমৃদ্ধি করতে চায় না। দুঃখ তাদের জন্য, যারা জানেই না এ শহরকে আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করতে গেলে, জরাজীর্ণ সব কাঠামোকে ভেঙে ফেলতে হয়। দুঃখ তাদের জন্য, যারা এখনো যুগোপযোগী হতে পারেনি। আমি চাই এরা আন্দোলন করা শিখুক। আমি চাই এরা আধুনিকতা বুঝুক। আমি চাই এরা এ শহরের মান পৃথিবীর মধ্যে সেরা করে তুলুক। আমিও পৌর শিশুপার্কটি, পৌর সুপার মার্কেটে রূপান্তর না হোক। আমি চাই পৌর সুপার মার্কেটটি মার্কেট না হয়ে, মিউজিয়াম শহরে প্রথম স্থাপনা হোক।এই ভবনটিই আমাদের শহরকে করুক আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক আর অত্যাধুনিক থেকে মিউজিয়াম শহর।

আমি চাই ভবনটির প্রত্যেক তলা হোক, আলাদা আলাদা বিনোদন ও শিক্ষালাভের আঁতুড়ঘর। প্রত্যেক তলা সাজানো হোক, এখানে জন্মানো মহামানবদেরকে সম্মানী করার জন্য। আমি চাই শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য তৈরি করা হোক বিজ্ঞান ভিত্তিক, বৈশ্বিক মানের ইলেক্ট্রাসিটি পার্ক। তারপর হোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করার জন্য মুক্ত মঞ্চ এবং সেই মঞ্চটি তৈরি করা হোক পৃথিবীর সেরা করে। এরপর হোক রাজনীতি শেখানো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তৈরি করা হোক আন্তর্জাতিক সেমিনার উদ্যান।গণিতশাস্ত্রের পটভূমি। হোক বিশ্বতত্ত্ব গবেষণাগার। হোক আধ্যাত্মিক আর ভাববাদের কেন্দ্রবিন্দু। কয়েকতলা মিলে হোকপৃথিবী সেরা বিলাসবহুল হোটেল। ভবনটি হোক বহুতলা বিশিষ্ট। সবকিছু মিলে সম্পর্ণ ভবনটি হোক ঝিনাইদহের ঐতিহ্য। পরিশেষে বলবো, আমিও চাই পৌর পার্কের জায়গায়, পৌর সুপার মার্কেট না হোক। আমি চাই ভবনটি হোক, এ শহরের মান বৃদ্ধির এক অনন্য নজির। ভবনটি হোক আমাদেরকে কালজয়ী বানানোর শক্তি। আসুন আন্দোলন করা শিখি, আন্দোলন করি, আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের জীবন-যাপন, বোধবুদ্ধিকে,উন্নত উন্নয়নশীল করি এবং এ শহরকেও মিউজিয়াম শহর হিসেবে গড়ি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button