পাঠকের কথা

নানার ছেচল্লিশ—গুলজার হোসেন গরিব

ঝিনাইদহের চোখ-

আমার নানা যখন চৈতী রাতে বিবর্ণ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে
ছেচল্লিশের ভয়াবহতা বলতেন, গা শিউরে উঠতো।

গল্পে বুদ হয়ে দেখতাম
নৃশংসভাবে পিতামাতাকে ধর্মান্ধ কসাইরা মারছে
ছোট্ট শিশুদের সামনে।
পুড়িয়ে দিচ্ছে ঘরদোর ধর্মবিদ্বেষী আগুনে।
মনুষ্যত্ব উড়ে যাচ্ছে বুনোপাখির মতন।
স্বজাতিকে অজাতি করে দেখার লেন্স পরিয়ে দিচ্ছে
স্বার্থান্বেষী মাননীয়রা।

এখানে সেখানে, ঝোপঝাড়ে, রেললাইনের ধারে
নৌকায়, নদীর কূলে, রাস্তার দুপাশে
মানুষের ফুলে ওঠা বিশ্রী মরা লাশগুলো।
লাশ গলে পড়ছে আলকাতরা হয়ে
দুর্গন্ধে বাতাসের দৌড়ে পালানো দিক্বিদিক।
মাছিদের নাচাগানা পচাগলা লাশকে ঘিরে।

বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে
উদ্দেশ্যহীন যাযাবর পরিবারের পথচলা।
ঠোসাপড়া ক্লান্ত পায়ের প্রতিচ্ছবি
ফিরে ফিরে দেখা পরিচিত পাখপাখালি, আঙিনা, মাঠ…

চারদিক থেকে ভেসে আসে
বাঁচাও বাঁচাও বলে, নয় বছরের কল্যাণী
আর গোলাপজানের বেদনার্ত চিৎকার।
গণধর্ষণের পর ছুঁড়ে ফেলে দেয়া রক্তাক্ত শরীর।
সবুজ পাতায় লেগে থাকা তাজা রক্তের দাগ।

নানা আকাশের দিকে আঙুল তুলে ক্রমাগত বলতেন
ওই যে লাশগুলো হেঁটে হেঁটে আসছে
পচা দেহ খুলে খুলে পড়ছে।
কল্যাণী, গোলাপজান হাত বাড়িয়ে ডাকছে
বাঁচাও বাঁচাও….
শেয়ালেরা লাশের চোখগুলো তুলে তুলে খাচ্ছে।
জড়োসড়ো হয়ে আকাশের ডিসপ্লেতে দেখতাম
ভাগাভাগির নকশায় নানার ছেচল্লিশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button