অন্যান্য

দেশে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

ঝিনাইদহের চোখঃ

চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবের খাতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে নীট ৪০ হাজার ১০১ কোটি টাকা। এ ঋণ যোগ করলে দেশে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। সাম্প্রতিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত আরও চাপে পড়বে। যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এগুলো উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যায়।’

অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে তৎপরতা কম থাকে। ফলে এ সময়ে খেলাপিঋণ বেড়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার না করলে খেলাপি ঋণের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা কঠিন হবে।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। এটিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না। তবে এই রোগ নিরাময়ের চেস্টা অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান। ‘

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ কিছুটা কমিয়ে এনেছিল ব্যাংকগুলো। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা থাকলেও বছরের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা কমে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকায় নেমে আসে।

তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পুরনো চেহারায় ফিরেছে খেলাপি ঋণ। মার্চে এসে পুনঃতফসিলকৃত ঋণসহ নতুন ঋণও খেলাপি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিশেষ সুবিধায় ২০১৫ সালে পুনর্গঠন করা ঋণের বড় একটি অংশও এখন খেলাপি। সব মিলিয়ে মার্চ প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ব ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ।

অন্যদিকে বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়াও বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button