কালীগঞ্জ

মানুষের কল্যাণে পেনশন দানকারী কালীগঞ্জবাসীর রেজা ভাইয়ের নামে সড়কের নামকরণ

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-

বাবার অভাবের সংসারে চিকিৎসক হয়েছিলেন। চাকুরীর কারনে ডাক্তার রেজাকে সময় দিতে হয়েছে ঢাকাতে। কিন্ত মা মাটি মানুষকে তিনি ভুলে যাননি। কেননা ছাত্রজীবনের কষ্টের কথা সারাজীবনই বুকে ধারন করে তিনি পথ চলেছেন। এলাকার বেশিরভাগ গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের মত লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে আজ লেখাপড়া শেষ করে দেশের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদের কর্মকর্তা। এলাকায় লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়া বেশ কয়েকটি গ্রামে বাঁচার জন্য সংগ্রাম নামের পাঠাগার স্থাপন করে শিশুসহ সব বয়সী মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। নিজে জটিল রোগে আক্রান্ত থাকলেও কেউ চরম অসুস্থতা নিয়ে তার কাছে পৌছলে পরিবারের মানুষের মত সব ধরনের সাহায্য করেছেন তিনি। কল্যান নামের একটি কল্যানকর সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিবছর ৩ ইউনিয়নের অত্যন্ত গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে বাছাই করে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছে। নিজের এমন কর্মকান্ডের জন্য তিনি ছিলেন এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আত্মার আত্বীয়। চাকুরীর পেনশনের টাকাও দান করে গেছেন মানব কল্যানে। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে গরীবের ডাক্তার খ্যাত এ মানুষটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর থেকে এলাকার মানুষ তাদের একজন অভিভাবককে হারিয়েছেন। কিন্ত এ মানুষটির জন্য আজও তাদের ভালোবাসার ঘাটতি নেই। তারা চেয়েছিলেন ভালোবাসার মানুষটির স্মৃতি আগামী প্রজন্মের মাঝে যুগযুগ ধরে বয়ে যাক। তাদের সে চাওয়াটা আজ পাওয়ায় পরিণত হয়েছে। গুণী এ মানুষটির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে চাপরাইল হতে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটি প্রফেসর ডাঃ রেজাউল ইসলাম সড়ক নামকরন করা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার শুক্রবার চাপরাইল বাজারে এ সড়কের ফলক উন্সোচন করেন। প্রফেসর ডাঃ রেজাউল ইসলাম রেজা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের চাপরাইল গ্রামের মৃত আবুল কাশেম মালিতার পুত্র।

কল্যানকামী সংগঠন কল্যানের সাধারন সম্পাদক মাষ্টার দলিলুর রহমান জানান,এক সময় এলাকার মানুষ তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। এটি ছিল ডাক্তার রেজার দৃষ্টিতে নিজেদেরকে ধবংসের সামিল। এ অবস্থা থেকে বাঁচাতে তিনি নিজের গাঁটের টাকা দিয়ে এলাকার কয়েকটি গ্রামে পাঠাগার নির্মান করে নাম দিয়েছিলেন বাঁচার জন্য সংগ্রাম। যে পাঠাগার গুলোর কর্মকান্ড এখনও চলমান রয়েছে। এখানে সুন্দর পরিবেশে বসে শিক্ষার্থীসহ এলাকার সব বয়সী মানুষ আজ জ্ঞান অর্জন করছেন। শিক্ষার্থীরাও সময় পেলেই এ লাইব্রেরীতে বসে জ্ঞান চর্চা করে থাকে। আর্থিকভাবে ডাক্তার রেজার তেমন একটা স্বচ্ছলতা না থাকলেও সারাটা জীবন রোজগারের বেশির ভাগই ব্যয় করেছেন জনকল্যানে। তাই ডাঃ রেজাউল ইসলাম রেজা এলাকার সকলের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। সব শ্রেণীর মানুষই ছিলেন তার অন্ধভক্ত।

ডাঃ রেজাউল ইসলাম রেজা সর্বশেষ আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর ছিলেন। তার সহধর্মিনী জাকিয়া রেজা ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বড় ছেলে শোভন রেজা একজন একজন মেডিকেল অফিসার ও ছোট ছেলে সুমন রেজা প্রকৌশলী। ডাঃ রেজা তার চাকুরী জীবনের পেনশনের টাকা দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক কল্যামুখী প্রতিষ্টান।

এলাকাবাসীর মধ্যে শিক্ষক স্বপন কুমার ভট্রাচার্য্য বলেন,রেজা ভাই ছিলেন এলাকাবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধারপাত্র। তিনি সকলকে নিজের পরিবারের মানুষ ভাবতেন। এটা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে ডাক্তার রেজার স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার নামের সাথে সড়কের নামকরন করায় তারা খুশি।

স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, প্রফেসর ডাক্তার রেজাউল ইসলাম রেজা ছিলেন সত্যিকারের একজন সমাজসেবক। তিনি এলাকার সব শ্রেণীর মানুষের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তার নামানুসারে সড়কের নামকরন করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button