ক্যাম্পাসজানা-অজানাটপ লিডশৈলকুপা

শৈলকুপায় কলেজছাত্র সুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর মিলছে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য

মনিরুজ্জামান সুমন, ঝিনাইদহের চোখ-
নিখোঁজের ৪দিনপর ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কলেজ ছাত্র সুজনের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে পৌর এলাকার হাজামপাড়া গ্রামের ধান ক্ষেতের বরিং ঘরের ভিতরে মাটির নিচ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত রবিবার বিকাল থেকে উপজেলার আউশিয়া গমের মালয়েশিয়া প্রবাসী জিল্লুর রহমানের ছেলে সুজন ৪ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলো। সুজন শৈলকুপা সিটি ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিল ।

৫ দিনের মাথায় সুজনের অর্ধগলিত মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তাকে কুপিয়ে হত্যা করে মাটির নিচে পুতে রাখা হয়েছিলো ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাওনা টাকা আনতে গিয়ে সে আর বাড়ি না ফেরায় নিহতের চাচা থানায় গত ২১/০৯/২০ তারিখে একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ২৩/০৯/২০ ইং তারিখে একটি মিচিং মামলা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাকিব ও নাজমুল নামে দুই জনকে আটক করে । সাকিবকে আটক করা হলে তার ভাই রাকিব এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা গা ঢাঁকা দিয়েছে। পরে হৃদয় নামে আরো একজন কে আটক করে। হৃদয় এর দেয়া তথ্যে মতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার।

এদিকে সুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর মিলছে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক সবতথ্য । খুনীরা ভয়ঙ্কর সব পরিকল্পনা করে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে । হত্যা করা হবে তাই খুনীরা দু’দিন আগেই মাঠের ধানক্ষেতে নির্জন সেচ পাম্বের ঘরে গর্ত খুঁড়ে রেখেছিল। পাকা গাঁথুনী দিয়ে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এমনটি জানিয়েছে আটক সাকিব। তবে জিডির পরপরই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অব্যহত তৎপরতায় খুনীদের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সক্ষম হয়নি।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায, গত রবিবার শেষ বিকালের দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে সার কিনতে নিজ গ্রামে আউশিয়ায় সার দোকানীর কাছে যায় সুজন । এসময় পাওনা ৮’শ টাকা নেয়ার জন্য পাশ্ববর্তী হাজামপাড়া গ্রামের বাবলু শেখের ছেলে রাকিব তাকে ফোন দেয়। ফোন পেয়ে রাকিবের ছোট ভাই সাবিকের সাথে শহরের সিনেমা হল রোডে এসে সুজন নিখোঁজ হয়। এরপর সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সুজন কে মোটরসাইকেলে রাকিব-সাকিবের বাড়ির দিকে নেয়া হচ্ছে । ফুটেজ ধরে পুলিশ অনুসন্ধানে নামে। এরপর রাত ৮টা সাড়ে আটার দিকে বাড়ির পার্শ্বে হাজামপাড়া মাঠের মেহগুনী বাগানে তাকে নিয়ে যায় । এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে সুজনের ঘাড়ে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দেয় রাকিব। এক কোপেই কলেজছাত্র সুজন ঢলে পড়ে মাটিতে। তারপর লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় পানিতে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার ১০/১৫ মিনিট পর সেখান থেকে টেনে তুলে ঘাড়ে করে ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় মাঠে একাধিকবার পড়ে গেলে আবার টেনে তুলে টিনসেড নির্জন বোরিং (সেচপাম্প) ঘর এর ভেতরে নেই । সেখানে আগেই খুঁড়ে রাখা গর্তে সুজন কে ফেলে মাটিচাপা দেয়া হয় । পরিকল্পনা ছিল মরদেহ গুম করে দিবে তাই সেই গর্ত ইট-বালি দিয়ে পাকা করার সিদ্ধান্ত ছিল।

তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নিহত সুজন এর বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী জিল্লুর রহমানের পাঠানো টাকায় সুদে-কারবারের সাথে জড়িত ছিল রাকিব-সাকিবরা। ধারণা করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের জন্যই সুজন কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং তাকে গুমের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ।

পুলিশের হাতে রাকিবের ছোটভাই সাকিব ধরা পড়লেও এখনো খুনীদের অন্যতম রাকিব পলাতক রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, এই কিশোরদের সবাই মাদকাশক্ত এবং নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ছত্রছায়াতে বে-পরোয়া হয়ে উঠেছিল । পৌরসভার হাজামপাড়া, সাতগাছি সহ আশপাশের এলাকার অসংখ্য কিশোর-তরুণ মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এরা ঘটাচ্ছে নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড।
শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, আটক ৩জনের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, সুজন কে ডেকে নেয়ার পরপরই ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কি কারনে তাকে হত্যা করে গুম করা হয়েছিল স্পষ্টভাবে জানতে তদন্ত চলমান রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button