জানা-অজানা

বালির না বলা কথা

ঝিনাইদহের চোখঃ

বালিতে আমাদের প্রথম সকাল শুরু হয়েছিল লাখ লাখ রুপিয়া খরচ করে বানরদর্শনে। ইন্দোনেশিয়ার উবুদ অঞ্চলের এই বনটির নাম মানকি ফরেস্ট বা বানর বন। আক্ষরিক অর্থেই এ এক বানররাজ্য! যেখানে বানরের দল চাইলেই গপ করে এসে আপনার হাতের মোবাইল, চোখের চশমা, মাথার টুপিসহ যেকোনো কিছু ছোঁ মেরে নির্ভয়ে নিয়ে আস্তানায় চলে যাবে। তাই বানররাজ্যে নিজের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হলো!

বাঁদর দেখতে লাখ রুপিয়া খরচের বিষয়টি অনেকের মনে খচখচ করতে পারে। তাই বলে নিই, বাংলাদেশি ১ টাকায় ইন্দোনেশিয়ান প্রায় ১৭১ রুপিয়া মেলে! তাই কোনো জিনিসের দাম শুনে বা দেখে আমাদের মতো যে কেউ প্রথম প্রথম একটু ভিরমি খাবেন। আমাদের বলতে আমি আর আমার স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমীন। দুজনে মিলে বেশ সময় নিয়েই বালি ভ্রমণের পরিকল্পনা এঁটেছি। কোথায় থাকব আর কোথায় যাব—এসব পইপই করে অঙ্ক কষা ছিল। যেমন প্রায় এক মাস আগে বিমানের টিকিট কেটেছি, বুকিং ডটকম থেকে সাধ্যের মধ্যে সেরা হোটেল আর রিসোর্টগুলো বুক করেছি।

অনেক সাধের বালির সেই ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল বানর দেখে! সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল বালির বিখ্যাত রাইস টেরাসের গ্রাম তেগালালাং। এখানে মূলত উঁচু পাহাড়ে সিঁড়ির মতো ধাপ কেটে ধান চাষ করা হয়। তবে রোদ–ছায়ার খেলা আর চারপাশে সারি সারি নারকেলগাছ মিলে সে এক স্বর্গীয় পরিবেশ। এই রাইস টেরাসগুলোতে আছে ‘বালি সুইং’ আর ‘বালি নেস্ট’। এই দোলনা আর অতিকায় পাখির বাসা যুগলদের ছবি তোলার জন্য বিখ্যাত। সেখানে ছবি তুলতে তুলতেই মনে হলো বালিতে এসে সুনসান গাছপালা ঘেরা নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে উবুদ জুতসই জায়গা।

বালিকে বলা হয় তাবৎ দুনিয়ার যুগলদের জন্য মধুচন্দ্রিমার স্বর্গরাজ্য। তবে প্রতিবছর অগণিত একাকী ভ্রমণপিয়াসি মানুষ ছাড়াও দল বেঁধে পর্যটকেরা আসেন বালিসহ আশপাশের দ্বীপগুলোতে। পরদিনের নুসা দুয়ায় যাওয়ার আগে এমন অনেক দলের দেখা মিলেছিল। আমরা নুসা দুয়া ঘুরেটুরে গেলাম উলুয়াতু টেম্পল। সমুদ্রের তীরের বিশাল উঁচু পাথরের পাহাড়ের ওপর তৈরি এই মন্দির। মন্দির থেকে দেখা সাগরের বিশালতা আর স্বচ্ছ নীল জল আছড়ে পড়ার শব্দ কিছুক্ষণের জন্য হলেও মোহগ্রস্ত করে ফেলে। এই মন্দির পেছনে ফেলে আমরা দেখলাম সূর্যাস্ত উপভোগের এখানকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জিমরান বিচ আর তানাহ লট। তবে রোমাঞ্চকর ছিল নুসা দুয়ায় আসরার পথের অনিন্দ্যসুন্দর ‘বালি মান্দারা টোল রোড’। ২০১৩ সালে ১২ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৃষ্টিনন্দন টোল সড়কটি নির্মিত হয়েছে সমুদ্রের ওপরে। যা মূলত নুসা দুয়া এবং কুটাকে সংযুক্ত করেছে।

বালি ভ্রমণের কোন স্মৃতি রেখে কোনটা লিখব, এই নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়েছিল। যেমন বালির সুন্দরতম দ্বীপ গিলির কথা না বললে অপরাধী হয়ে যাব! সৈকত থেকে আড়াই ঘণ্টার উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে আমরা পৌঁছেছিলাম ওয়ালপেপার দ্বীপ গিলিতে। গিলি খুবই ছোট্ট একটা দ্বীপ, চলাচলের জন্য এখানে শুধু রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি ও সাইকেল। গিলির কোল ঘেঁষে রয়েছে আরও অনেক ছোট–বড় অনেক দ্বীপ, যেখানে আপনি স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সির বিভিন্ন প্যাকেজে ঘুরতে পারেন। আমরা দুই রাত গিলিতে কাটিয়ে বালির আরেক দর্শনীয় জায়গা নুসা পেনিদা আর নুসা লম্বোগানে গিয়েছিলাম। আবার নুসা পেনিদাতে গিয়ে স্কুটারের ব্যবস্থা করে সোজা চলে গিয়েছিলাম ক্লিংকিং নামের একটা পর্যটন স্থানে। বিশাল উঁচু পর্বতের ওপর থেকে নীল পানির সমুদ্র ছুঁয়ে দেখতে চাইলে খাড়া পাহাড়ের গা কেটে বানানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে পারেন সৈকতে। আমরা সৈকতে ঘণ্টাখানেক আয়েশ করে পথ ধরলাম ব্রোকেন বিচ আর অ্যাঞ্জেলস বিলাবং দেখার জন্য। তবে আমরা যেহেতু ছিলাম নুসা লেম্বগানে তাই ছিল ফেরার তাড়া। আরেকটা সুন্দর রাতের পর আমরা পরদিন আবার কুটার পথে। কুটা আর লেগিয়ানের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খাওয়া আর শপিং করে কেটে গেল আরও দুটো দিন। এর মধ্যেই বেজে গেছে ফেরার ঘণ্টা।

যা খেয়াল রাখবেন
ঢাকা থেকে বালি যাওয়ার সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। ট্রানজিট থাকে মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে। এই ট্রানজিটে অপেক্ষার সময় আর এয়ারলাইনসের ওপরই টিকিটের খরচ নির্ভর করে। যাত্রার কমপক্ষে এক মাস আগে টিকিট করতে পারলে এয়ারলাইনস এবং ট্রানজিট ভেদে ২৬ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ফিরতি বিমান টিকিট পেয়ে যাবেন। যাত্রার তারিখ যত নিকটে হবে বিমান টিকিটের দাম তত বাড়বে। বালিতে তিন তারকা থেকে চার তারকা মানের হোটেল প্রতি রাতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। বিভিন্ন পর্যটন স্থান ঘুরতে চার আসনের প্রাইভেট কার পাওয়া যায় ৩ হাজার ২০০ টাকায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button