জানা-অজানাদেখা-অদেখাশৈলকুপা

মৌ চাষে সফল শৈলকুপার মনিরুল

ঝিনাইদহের চোখঃ

“মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” মধুকবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতার এই লাইনগুলোর সাথে একেবারেই মিলে যায় মৌয়ালদের জীবন। এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেলো মৌচাষী মনিরুলের খামারে।

ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে শৈলকুপা উপজেলা শহর। এই শহরতলীতেই কবীরপুর এলাকায় মনিরুল হকের বাস। নিজের বাড়িটিকেই মনিরুল বেছে নিয়েছেন মৌ চাষের জন্য। তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন মৌ খামার। নাম দিয়েছেন মামনি মৌ খামার।

এই মামনি খামর থেকেই এবার মনিরুল উৎপাদন করেছেন প্রায় শত মন মধু। উপার্জন করেছেন কয়েক লক্ষ টাকা। হতাশ জীবনে পেয়েছেন সফলতা।

প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে সিঙ্গাপুর পাড়ি দেন মনিরুল হক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রবাস জীবনের মায়া কাটিয়ে বছর পাচেক আগে দেশে ফিরে আসেন মনিরুল। এতোদিন পর বাড়ি কী করা যায়, খুজে পাচ্ছিলেন না তিনি। হতাশা তাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে। মাথার মধ্যে হঠাৎ করে মৌমাছির গুনগুন গান বেজে উঠলো। যেই ভাবা সেই কাজ। কোনোরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই চারটি মৌ বাক্স যোগাড় করে শুরু করে দিলেন মৌ চাষ। আস্তে ধীরে অন্য খামারিদের কাছ থেকে একটু একটু করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করলেন বড় আকারের খামার।

মনিরুলের বাড়িতে ঢুকতেই এক পাশে দেখা গেলো সারি সারি মৌ চাষের বাক্স। বাক্সগুলো পরিচর্যায় মহাব্যস্ত তিনি।ঘুরে ঘুরে বাক্স খুলে মৌচাকগুলো দেখালেন আমাদের।

কোথা থেকে এতো মধু পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে মনিরুল আমাদের জানালেন,
বিভিন্ন স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মধু সংগ্রহ করতে হয়। টাঙ্গাইল,সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ থেকে নভেম্বর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি, এই তিন মাস শুধু সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হয়। আবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শরিয়তপুর ও মাদারিপুর থেকে রাই সরিষা,কালোজিরা ও তিল ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হয়। আর মার্চ মাসে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করেন তিনি নাটোর,পাবনাসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকে।

কেমন আছেন এখন? এমন প্রশ্নের জবাবে আজকের বাজারকে মনিরুল বলেন, “মৌ চাষ করে আল্লাহর রহমতে পরিবারের সবার সাথে ভালভাবে জীবন যাপন করছি। মৌ বাক্স যতো বাড়াতে পারবো, আমার আয় ততো বেশি হবে। তবে করোনাকালীন সময়ে মধুর তীব্র সংকট দেখা যায়। তাই এ বছর আর হলো না। আগামী বছর থেকে মৌ বাক্স বাড়াতে পারবো ইনশাল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তেমন কোনো ফুলের সমারোহ থাকে না। তাই মৌমাছি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এসময় তাদের চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button