কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

কালীগঞ্জের বামনের বিল বর্ষায় যেন টাঙ্গুয়ার হাওড়

মিশন আলী, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-

ভরা বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর, চারদিকে পানি আর পানি। তার মাঝে শুধু সবুজ আর সবুজ। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের জামাল ইউনিয়নের নাটোপাড়ার বামনের বিলে।

নাটোপাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের শেষ গ্রাম। এ গ্রামের অপর প্রান্তে রয়েছে মাগুরার শালিখা উপজেলার মশাখালী গ্রাম। এ বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে ফটকি ও বেগবতি নদীর মিলন। দুপুরের পর থেকে সব বিনোদন প্রামি মানুষ আসতে থাকে এখানে। বিলটির নাম বামনাইল হলেও ভ্রমণপিপাসুরা এর নাম দিয়েছেন রাতারগুল বা টাঙ্গুয়ার হাওর। বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য মানুষের ভিড় দিনদিন বাড়ছে।

গত ৫ জুলাই সকালে কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রæপের দুই সদস্য প্রথম এই বিল ঘুরে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে। এরপর থেকেই সেখানে ভ্রমণ পিপাসুদের ভীড় বাড়তে থাকে। গ্রামের পথ ধরে প্রায় ৪৫ মিনিট পর নাটোপাড়া বাজারে পৌঁছাই। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে ভ্রমণপিপাসু মানুষ। বিশেষ করে এবার ঈদ মৌসুমে মানুষের ঢল নামে বিলের পাড়ে।

খুব কাছাকাছি দুটি (ফটকি ও বেগবতি) নদীপ্রবাহ থাকায় বৃষ্টির পানি জমে এখানে ভরা বর্ষায় মৌসুমী প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে। ঢেউহীন এক পানির রাজ্য এ বামনাইল বিল। টলটলে জল-জঙ্গলে মাথাচাড়া দেয় শাপলা ও কচুরি ফুল। কোথাও কোথাও দেখা যাবে সাদা ধবধবে কাশফুল। সবুজের সমারোহে বুদ হয়ে পড়বে চোখজোড়া। নীলচে পানিতে স্পষ্ট হওয়া সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে যে কেউ মায়াবী জগতের ভাবনায় ডুবে যাবে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস বিলের চারপাশ থৈ থৈ করে পানিতে। পানিতে নিমজ্জিত বড় বড় গাছ। বিলের পাশের লোকজন এক বাড়ী থেকে অন্য বাড়ী, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া ও বাজারে যাওয়ার জন্য ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করে থাকে।

বিলের মাঝখানে গিয়ে চারপাশটায় একবার চোখ বোলালে দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। স্বচ্ছ নীল জলের ওপর ছোট ছোট ঢেউর খেলায়। এমন বিশালতা দেখে আপনার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করবে, এটা বিল না হাওর। এত বিশালতা যার, সে হাওর না হয়ে পারে না। এ বিলের স্বচ্ছ জল কোথাও গভীর কোথাও অগভীর। কোথাও কোথাও পানির নিচে মাটি বা বৈচিত্র্যময় জলজ উদ্ভিদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্পষ্ট দেখা যাবে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে কচুরিপানা আর কলমিই বেশি চোখে পড়বে। কোথাও কোথাও পাবেন কাশফুলও।

বামনাইল বিলে বেড়ানোর উত্তম সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় বামনাইল বিল বেড়াতে হলে যেতে হবে কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া বাজারে। নাটোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত সেতুর পাশ থেকে ট্রলার বা নৌকা নিয়ে বামনাইল বিলে প্রবেশ করতে হবে। দেশের যেকোনো স্থান থেকে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরে পৌঁছে ইজিবাইক বা শ্যালো ইঞ্জিন চালিত যানবাহনে যেতে পারবেন নাটোপাড়া বাজারে। নাটোপাড়া বাজারের সেতুর পাশ থেকে পাবেন প্রযোজনীয় ট্রলার বা নৌকা। দলবেঁধে গেলে একজন আগে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে আসতে পারেন। ঘণ্টা চুক্তিতে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া নিতে পারেন।

বর্ষাকালে কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি। তাই বামনাইল বিল ভ্রমণের সময় অবশ্যই ছাতা, রোদ টুপি সঙ্গে নেবেন। বিলের ভেতর কোথাও দোকানপাট নেই। তাই সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনা খাবার নিতে ভুলবেন না। অপচনশীল বর্জ্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল বিলে ফেলে পরিবেশ ধ্বংসের অংশীদার হবেন না।

ফেরার পথে বিলের পানিতে দেখলাম আগুনরঙা সূর্য। কয়েক মিনিটের মধ্যে যা ঢিমে আঁচের মতো করে তলিয়ে গেল অন্ধকারে। পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি চলচ্চিত্রের মতোই যেন নাটকীয় সমাপ্তি হলো। বিলের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। বিলটি রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। যাতে ভ্রমণপিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো জায়গা খুঁজে পায়। আগামী প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারে।

নাটোপাড়া গ্রামের যুবক ও নৌকার মাঝি কুবাদ আলী জানান, নৌকায় আগে তেমন ভাড়া হতো না। জুলাই মাসের প্রথম থেকে দিন দিন ভাড়া বাড়তে থাকে। বর্তমানে এখানে তিনটি নৌকা আছে। যেভাবে মানুষ আসছে তাতে আরও নৌকা বাড়াতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button