ঝিনাইদহ সদরশৈলকুপা

ঝিনাইদহের মাঠে বারিপেয়াজ প্রদর্শণি প্লটে ফলেছে লালতীর/তদন্ত নেই

ঝিনাইদহের চোখ-

সরকার যখন কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, কৃষকদের প্রনোদনা প্রদান এবং প্রধানতম রাসায়নিক সার ডাই এমোনিয়াম ফনসফেট (ডিএপি)-র দাম কমিয়ে কৃষিখাতকে স্বয়ম্ভরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বীজের জাত পাল্টে একটি বেসরকারি বীজ সরবরাহকারি কোম্পাণির বীজ মাঠেঁ সরবরাহ করছে গবেষণার বীজ হিসাবে। ৬ মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি  অধিদপ্তর।

জানা যায়, দেশীয় উন্নতমানের জাত প্রসারের জন্য বারী-১ (তাহেরপুরী) পেঁয়াজ বরাদ্দ হলেও প্রদর্শনীপ্লটে উৎপাদন হয়েছে লাল তীর পেঁয়াজ। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরকারের বীজ উৎপাদন গবেষণাকে বিতর্কিত করতেই বারী ১-র বদলে লালতীর বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এবাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শৈলকুপা উপজেলা, ঝিনাইদহ জেলা বা যশোরস্থ অতিরিক্ত পরিচালককে ব্যক্তিগত ও ফোনের মাধ্যমে অবহিত করা হলে উপজেলা কৃষি অফিসের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যায় ।

উল্লেখ্য, শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামের মাঠে উন্নত বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে গত অর্থবছরে কৃষি অফিস ১ একর জমিতে বারী পেঁয়াজ-১ প্রদর্শনী প্লট তৈরি করে।

চাষী মনিরুল ইসলাম জানান, এসএএও কনোজ কুমার তাকে চাষাবাদে নানাভাবে সহযোগিতা করার আশ^াস দিয়ে বারী পেঁয়াজ-১ বীজ উৎপাদনে উৎসাহিত করেন। কিন্তু সেসময় তথ্য গোঁপন করে বারী পেঁয়াজ-১ এর পরিবর্তে ৩৫ মন লালতীরের বীজ সরবরাহ করেন উক্ত কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্রে জানা যায়, বারী পেঁয়াজ-১ এর প্রদর্শনী প্লট করে কৃষি বিভাগের একান্ত নজরে আসতে চেয়েছিল কনোজ কুমার। কিন্তুু চাষী মনিরুল ইসলাম বারী পেঁয়াজ-১ প্লট তৈরিতে আগ্রহ না দেখালে তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে প্লটের জমি নির্দিষ্ট করে লালতীরের বীজ লাগিয়ে দেওয়া হয়।

উক্ত প্রদর্শনী প্লট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে নিয়ে আসতে সাধুহাটি এলাকাবাসীর নিয়ে চাষীপর্যায়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে। সেসময় বীজপ্লটের বাড়ন্ত গাছ দেখলেও কর্মকর্তাগণ লালতীরের বিষয়টি অনুধাবন করেননি, দিনে দিনে বিষয়টি প্রকাশ পায় এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সহ অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।

একপর্যায়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগে অফিসকার্য সীমিত হওয়ার ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধুহাটি গ্রামের চাষী বাচ্চু মন্ডল জানান, প্রদর্শনী প্লটে লাল তীরের বীজ আবাদ হয়েছে সবাই জানে তবে কি কারণে বারী-১ এর সাইনবোর্ড তা সাধারণ চাষীদের বোধগম্য নয়। বিল্লাল সেখ নামে অন্য চাষী বলেন তারা ভেবেছেন হয়তো লালতীরের বৈজ্ঞানিক নাম বারী পেঁয়াজ-১ সে কারণে বিষয়টি কেউ আমলে নেয়নি।

একই এলাকার চাষী নজরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, আবাদ হয়েছে লালতীর বীজ অথচ কর্মকর্তাগণ বারী-১ (তাহেরপুরী) পেঁয়াজ বীজ ক্রয়ে উৎসাহ দেওয়ার নেপথ্য কি ?

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মী (এসএএও) কনোজ কুমার জানান, অফিস থেকে সরবরাকৃত বীজই কৃষক মনিরুল ইসলামের প্লটে রোপন করা হয়েছিল। তবে কিভাবে উক্ত প্লটে লালতীর উৎপাদন হয়েছে সে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু জানান, বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ কৃষি বিভাগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন ব্যক্তির স্থুল কর্মকান্ডের জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের বীজ গবেষণাগার বির্তকিত হবে এমন দায়ভার অফিস বহন করবেনা।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সনজয় কুমার কুন্ডু, ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস এবং যশোরস্থ অঞ্চলিক অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থপ্রতীম সাহাকে তথ্যপ্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্রদান ও সংবাদ মাধ্যমে বারী পেঁয়াজ-১ এর পরিবতে প্রদর্শনী প্লটে লাল তীরের বীজ আবাদ বিষয়ে অবগত করা হলে তারা বিষয়টি দেখব, দেখব করে আজও দেখেননি। ফলে বড় ধরণের এ দুর্নীতি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। আগামী পেয়াজ মৌসুমে এ অঞ্চলে বারীপেয়াজ-১ চাষে আগ্রহী চাষীরা অবারও বীজ প্রতারণার শিকার হতে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে। বীজ গবেষণার সাথে ভয়ঙ্কর এ প্রতারণার যথাযথ তদন্তসহ উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শৈলকুপার সুধীজন ও চাষীরা।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। যে কোন সময় তদন্ত রিপোর্ট জানা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button