পাঠকের কথাশৈলকুপা

প্রান্তিক মানুষকে সচেতন করছে ‘করোনাট্য’

মামুন সোহাগ, ঝিনাইদহের চোখ-

দিনে দিনে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। সতর্কতা আর সচেতনাই যেখানে প্রতিষেধক হবার ফলে বারবার সাধারণ মানুষকে সচেতন হবার জন্য বলা হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার বালাই নেই। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাবস বা পিপিই কোনোকিছুরই ব্যবহার মফস্বল গ্রামে/শহরে নেই।

খুব কাছ থেকে মানুষের এ অবচেতনা অনুভব করে করোনার এ দুঃসময়ে প্রান্তিক মানুষকে চার মাস ধরে সচেতন ও সহযোগিতা করতে ঝিনাইদহের গ্রামাঞ্চলের পথে পথে কাজ করছে একঝাঁক স্থানীয় যুবক, নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নিজের দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঝিনাইদহের নাট্যশিক্ষক হীরক মুশফিক। ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের এই শিক্ষকের উদ্যোগে শৈলকূপার ভাটই বাজার কেন্দ্রীক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের একঝাঁক শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনা দূর্গতদের সচেতনায়ন ও সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয় “করোনা স্কোয়াড এক” নামে স্বেচ্ছাসেবী দল।

গ্রামাঞ্চলের অসচেতন মানুষকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণকে সহায়তা করা, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন সম্পর্কিত ধারণা প্রদানে বিশেষ একটি নাট্য প্রয়োগ করছেন হীরক মুশফিক এবং তার দল। তাৎক্ষণিক অভিনয় বা ইম্প্রোভাইজেশনের মাধ্যমে যার অবতারণা করা হয়। এতে অভিনয় করেন দুই থেকে পাঁচজন অভিনেতা। স্থানীয় বাজার, চা বা সবজি দোকান কিংবা জনাকীর্ণ স্থানে প্রদর্শিত হয় এই পরিবেশনা। করোনা বিষয়ে অসচেতন গ্রামের সাধারণ মানুষ এই নাট্যের দর্শক। কেননা এর উদ্ভাবকের দাবি “সচেতন মানুষেরা করোনাকালে প্রয়োজন ছাড়া কখনই বাইরে থাকার কথা নয়” ফলে মূলত অসচেতন জনসমষ্টিকে উদ্দেশ্য করেই এ ধরণের নাট্যপ্রক্রিয়া।

প্রাথমিক পর্যায়ে পূর্বনির্ধারিত দুটি চরিত্রের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ, পরিণতি, প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কিত অভিনয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে সচেতন করবার কাজটি। যা যথেষ্ট কার্যকরী হচ্ছে বলেও জানা গেছে। নতুন এই নাট্যপদ্ধতির সমসাময়িকতা বিচারে এর উদ্ভাবক ও নির্দেশক হীরক মুশফিক এটির নাম দিয়েছেন ‘করোনাট্য’। নামকরণের ক্ষেত্রে প্রথমত প্রাধান্য পেয়েছে করোনা কালের নাট্য বিষয়টি, এছাড়া ‘সব সংকটে নাটকের প্রয়োগ হোক’ এমন আহবান থেকেও এ নামকরণ হয়েছে বলে জানা যায়।

সাধ্যমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে, এই নাট্যপ্রক্রিয়াটি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার চেষ্টা করছেন বলে জানান হীরক মুশফিক। তিনি বলেন ‘নাট্যের এমন প্রয়োগ নানা সময়ে নানা ভাবে হয়েছে, যেহেতু নাটক একটি সম্মিলিত শিল্প, ফলে এই করোনাকালে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এটির পরিবেশনা সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বে করোনার সময়ে করোনা স্কোয়াড এর আগে আর কেউ এভাবে সরাসরি নাট্য পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে বলে আমার জানা নেই।

এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আরও বলেন, পূর্বে বিভিন্ন দেশে প্রসেনিয়াম মঞ্চভিত্তিক নাট্য চর্চার বাইরে সাধারণ, নিম্নবিত্ত, অসচেতন মানুষের স্বার্থে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নাট্য প্রয়োগের যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। এক্ষেত্রে ফরাসি নাট্যকার রম্যাঁ রলাঁ, ব্রাজিলের পাওলো ফ্রেইরে বা অগাস্তো বোয়ালের কথা হয়তো অনেকেই জানেন। এছাড়া, আধুনিক সময়ে নানা ধরনের পারফর্মেন্স আর্ট এর নজিরও রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গেলো ২৭ মার্চ নাট্যদিবস থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সরাসরি স্থানীয় পর্যায়ে পাঁচশোর অধিক অসহায় পরিবারকে সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। করোনাকালে গড়ে ওঠা এ সংগঠনের আরো একটা চমকপ্রদ কাজ হচ্ছে ‘সেবার গাড়ি’। সেবার গাড়িতে রয়েছে শাক সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী। দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি বাজার নিয়ে গ্রামের নিম্নবিত্তের বাড়ির সামনে পৌঁছে যাচ্ছে এ গাড়ি।

তরুণদের সমন্বয়ে এধরণের ব্যতিক্রম কর্মকান্ডে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় প্রান্তিক মানুষেরা।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ ঢাকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button