অন্যান্য

অর্থনীতিতে যেভাবে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ

ঝিনাইদহের চোখঃ

বাংলাদেশ স্বর্গের মতো কোনো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নয়। কিছুদিন আগেও দেশটি ছিল দরিদ্র ও জনবহুল। তাছাড়া দেশটিতে শিক্ষার হারও ছিল অনেক কম আর দুর্নীতির পরিমাণও ছিল অনকে বেশি। মাঝে মাধ্যেই দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসবাদ ও গণতান্ত্রিক অবস্থা ছিল প্রহসনমূলক। কিন্তু দেশটি অনেক বছর ধরে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বাংলাদেশই হবে আগামীর ‘এশিয়ান টাইগার।

গত বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক আট শতাংশ। যা নিয়ে টক্কর দিচ্ছে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতকে। যেখানে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক নিচে পাকিস্তান।

তাছাড়া বাংলাদেশের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ যেখানে ৪৩৪ ডলার সেখানে পাকিস্তানের ৯৭৪ ডলার। আর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের তা চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার।

আর দেশটির প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগটাই হয়েছে রফতানি থেকে। ১৯৭১ সালে শূন্য থেকে শুরু করলেও এখন যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তানের সেখানে মাত্র ২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন। সুতা উৎপাদন না করেও পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, যেখানে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড আইএমএফ তাদের হিসাব অনুযায়ী অনুমান করছে, বাংলাদেশের বর্তমানে ১৮০ বিলিয়ন ডলারের ক্রম অগ্রসরমান অর্থনীতি ২০২১ সালের মধ্যে ৩২২ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। তার মানে এটা দাঁড়ায় বর্তমানে গড়ে বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে বিত্তবান।

শুধু অর্থনৈতিক নয় অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসাধারণ উন্নতি করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ২০ লাখ আর পশ্চিম পাকিস্তানের ৩ কোটি ৩৭ লাখ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫০ লাখ হলেও পাকিস্তানের তা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটিতে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রত্যাশিত গড় আয়ু যেখানে ৭২ দশমিক ৫ বছর সেখানে পাকিস্তানের ৬৬ দশমিক ৫ বছর। জাতিসংঘের শ্রম বিষয় আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও’র দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ নারী কাজের সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তানে তা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ।

কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের দরিদ্র এই অংশটি কীভাবে এত উন্নতি করছে সেটাই দেখবার বিষয়। কেননা স্বাধীনতা লাভের মাত্র অল্প সময়ে তারা বেশ উন্নতি করেছে। কারণ তাদের এমন কোনো ভূ-কৌশলগত সম্পদ নেই যা যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করা যায়। তাদের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। তাছাড়া তাদের সেনাবাহিনীর উল্লেখ করার মতো কিছু নেই। আর এমন কোনো বিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা নেই যার ছায়াতলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই তাদের উন্নতির কারণ।

যদি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয় তাহলে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান এখন দুটো ভিন্ন দেশ। কেননা দুই দেশের জাতীয় আগ্রহ সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশ তাদের ভবিষ্যত দেখছে ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য রেখে। তারা রফতানি বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কিন্তু পাকিস্তানের এসব নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।

পাকিস্তানের জন্য এসব বিষয় শিক্ষনীয় হতে পারে। ভারতের সঙ্গে ট্যাংক আর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিজেদের মেলালে চলবে না। এখনই সময় বাস্তববাদী হওয়ার। শুধু ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর সৌদি আরবের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার দিন শেষ করতে হবে। কেননা তারা আমাদের শেষ পর্যন্ত কিছেই দেবে না। পাকিস্তানের অবশ্যই যুদ্ধভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সরে এসে একটা শন্তিপূর্ণ অর্থনীতির দিকে মনোযোগী হতে হবে। আর তা নাহলে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।

দৈনিক ডনে প্রকাশিত একটি কলামের আংশিক অনুবাদ। কলামটি লিখেছেন পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পারভেজ হুদভয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button