কালীগঞ্জ

মাদার তেঁরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঝিনাইদহের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

শিক্ষা বিস্তারে ও মানব কল্যানে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মাদার তেরেসা সম্মাননা পদক অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আসাদুজ্জামান-হোস্নিন কেয়াবাগান আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট সমাজসেবক, দানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মোঃ রেজাউল করিম।

সে কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক, দানশীল ও শিক্ষানুরাগী মৃত বাহার আলী বিশ^াস ও মাতা মৃত রহিমা খাতুনের ছোট ছেলে।
গত (৮ মার্চ-২০১৯) শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সোসাইটির উদ্যোগে ঢাকার তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশু কল্যান পরিষদ মিলনাতনে বিশ^ নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে ”শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নের বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভা, গুনীজন সম্মামনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ সম্মামনা প্রদান করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও গন তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি সামছুল হুদা। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন সাবেক তথ্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত্। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অর্থ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক ও মূখপাত্র অরুন সরকার রানা। এ ছাড়া সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবধিকার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আমার সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও সংগঠনের উপদেষ্ঠা লায়ন মুহাঃ মীযানুর রহমান।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সোসাইটি সংগঠনের উপদেষ্ঠা মন্ডলী ও জুরি বোর্ড কর্তৃক শিক্ষা বিস্তার ও মানব কল্যানে বিশেষ আবদানের জন্য তাকে গুনীজন হিসেবে মনোনীত করা হয়।

এক জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিচারপতি সামছুল হুদার তাকে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।

মাদার তেঁরেসার নামাঙ্কিত এ পুরস্কার পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন বলে জানান অধ্যক্ষ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তবে এ আনন্দ শুধু আমার একার নয় কালীগঞ্জ উপজেলাসহ গোটা ঝিনাইদহ বাসীর। কারণ আমি চেষ্টা করি শিক্ষা বিস্তারে ও মানব কল্যানে কাজ করতে। আমি মনে করি এ পুরস্কার আমাকে এবং এলাকার আরো অনেকের দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করতে আরও বেশি উৎসাহিত করবে। কালীগঞ্জ উপজেলার আসাদুজ্জামান-হোস্নিন কেয়াবাগান আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ‘মাদার তেঁরেসার অনেক আগেই সন্তু হওয়া উচিত ছিল। তবুও আমরা খুশি দেরিতে হলেও তিনি তার উপযুক্ত উপাধি পেয়েছেন। তিনি বলেন, মাদার তেরেসার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে আমার এলাকায় নিজের মতো করেই সামাজিক উন্নয়নে যথাসাধ্য কাজ করে আসছি এবং ভবিশ্যতে করতে চাই।

অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, মাদার তেঁরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী আমি পড়েছি। তিনি জানান, মাদার তেঁরেসা মানব কল্যানে কাজ করে ভ্যাটিকান সিটিতে “সন্তু” উপাধি পান। ‘মাদারের নিজ হাতে লেখা চিঠি পড়ে আজও সবাই আবেগতাড়িত হয়।

বিশ্বের এত শহর থাকতেও মাদার কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তাকে এ কাজ করতে প্রচন্ড বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। তাকে গ্রামে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। আজ সেই মহীয়সী সিস্টার থেকে মাদার আর মাদার থেকে সন্তু হয়েছেন।

অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জানান, আমি ১৯৮৯ সালে বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া গ্রামে বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি যা পরবর্তিতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের প্রচেষ্ঠায় জাতীয় করন করা হয়েছে। এলাকার সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে গ্রামবাসীদের সহযোগীতায় ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার বিএইচএবি মুন্দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। পরের বছরে নিজ গ্রাম বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়ায় শাখা পোষ্ট অফিস স্থাপন করা হয়েছে। নিজ পরিবারের জমিতে ১৯৯৫ সালে ধর্মপ্রাণ মুসলামদের নামাজ আদায়ের জন্য কেয়াবাগান বাসষ্ট্যান্ডে জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০০১ সালে কেয়াবাগান বাসষ্ট্যান্ডের নামে হাট-স্থানীয় বাজার বসানো হয়। এই বাজারে সপ্তাহে ২ দিন হাট বসানো হয়। ২০০২ সালে যাত্রীদের সুবিধার্থে কেয়াবাগান বাসষ্ট্যান্ডে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের আর্থিক সহযোগীতায় যাত্রী চাউনি স্থাপন করা হয়। এর আগে গ্রামের সাধারন মানুষের খেলাধুলা ও সময় কাটানোর জন্য গ্রামবাসীর সাথে অংশগ্রহন করে এএন্ডবি মুন্দিয়া প্রগতি যুব সংঘ নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। ২০০৪ সালে কেয়াবাগান আদর্শ কলেজ প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করি যা পরবর্তিতে আসাদুজ্জামান-হোসনিন আদর্শ কলেজ নাম করন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া ও আগমুন্দিয়া আদর্শ এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই এতিমখানায় ২ জন হাফেজ শিক্ষক ও বর্তমানে ২০ জন এতিম ছাত্রসহ মোট ৫০ জন ছাত্র দীনি শিক্ষায় অধ্যায়ররত। গ্রামে বিদ্যুতায়ন, রাস্থাসহ আরো অন্যান্য উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করেন বলে জানান এই অধ্যক্ষ।

তিনি আরো বলেন, মাদার তেরেসা বিংশ শতাব্দীর মানবতার সেরা মুখ। কলকাতায় যারা মাদারকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা সত্যিই ভাগ্যবান। মাদার তেঁরেসা মানুষের জন্য যে সেবার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে বিশ্বের ১৩০ দেশে প্রায় সাড়ে চারশ শাখা তৈরি করেছেন। সেখানে আগনিত মানুষের মাঝে সেবার মহিমা ছড়িয়ে গেছেন মাদার। যাদের নিয়ে মানুষ কখনো ভাবেনি, যারা রাস্তার পাশে পড়ে থাকতেন, রোগে ভুগতেন সে সব মানুষকে নিয়ে যিনি শুধু ভাবতেন তাই নয়, বরং এগিয়ে গিয়ে নিজের হাতে সেবা করেছন যিনি তিনি মাদার তেরেসা। তিনি আরো বলেন, আজ আমি সত্যিই আনন্দিত যে আমি সামান্য মানুষ হয়ে মাদার তেঁরেসা স্বর্ণপদক পেয়েছি। আর আমাকে মাদার তেঁরেসা সম্মাননা প্রদান করায় আমি বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সোসাইটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button