ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহে জি-কে প্রকল্প বেহাল অবস্থা, লুট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

ঝিনাইদহের চোখঃ

প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এক কালের দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ (জি-কে) প্রকল্পের বেহাল দশা চলছে। সংকুচিত হয়ে পড়েছে সেচ ব্যবস্থা। বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত অফিস বাসাবাড়ি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। দেখার কেউ নেই। দিনে দিনে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ, হারাচ্ছে কার্যকারিতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেচ সুবিধা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বহুমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫৪ সালে জি-কে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে তত্কালীন ওয়াপদা। ১৯৭০ সালে প্রথম পর্যায় ও ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়। সে সময় এ বৃহত্ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল ৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রকল্পের প্রধান সেচ পাম্প হাউজ নির্মাণ করা হয়। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান সেচ খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা সেচ খাল, ৮৯৫ কিলোমিটার উপ-শাখা সেচ খাল ও ৯৭১ কিলোমিটার পানি নিষ্কাশন খাল খনন করা হয়। নির্মাণ করা হয় অফিস, বাসাবাড়ি, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, সড়কসহ বিশাল স্থাপনা।

১৯৮৩ সালে এ প্রকল্পের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৪ সালে পুনর্বাসন কাজ শেষ হয়। এরপর শুরু অফিসাদি গুটানোর পালা।

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলায় জি-কে প্রকল্প বিস্তৃত। ১৯৬২ সালে এ প্রকল্পে প্রথম সেচ দিয়ে ধান চাষ শুরু হয়। প্রচলন হয় উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ। এতে বেড়ে যায় উত্পাদন। চাষিদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে।

১৯৯৮ সালের পর থেকে জি-কে প্রকল্পের মরণদশা শুরু হয়। বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত স্থাপনাগুলোতে লুটপাট চলতে থাকে। অফিস ও বাড়ি থেকে দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যেতে থাকে দুর্বৃত্তরা। অফিস ভবন, বাসাবাড়ি অবৈধভাবে দখল হতে থাকে। ভ

বনগুলোর শুধু অবকাঠামো খাড়া আছে, ধ্বংস হচ্ছে। রাস্তার ইট পর্যন্ত চুরি হয়ে যাচ্ছে। খালের পাড়ের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেচ খাল দখল করে তার ওপর বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। লোকবলের অভাবে দেখার কেউ নেই। একেবারেই নাজুক অবস্থা।

ভাটি এলাকায় সেচ খালগুলোতে পানি নেই। বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া হয়নি। চাষিরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে কর্মরতরা নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হন না।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের চাষি আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, এখন জি-কে প্রকল্প ঠিকমতো সেচের পানি সরবরাহ করে না। অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বোরো মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যায়নি। আউশ মৌসুম শুরু হয়েছে। খালে পানি নেই।

জি-কে প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্প এলকায় লোকবলের অভাব রয়েছে। ২০১৪ সালে দু’শ’ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। এবছরের জুনে শেষ হচ্ছে। এ টাকায় কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা গেছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি কিভাবে ফের জীবন্ত করা যায়, সে ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে স্টাডি করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button