ধর্ম ও জীবন

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ

গত পর্বের পর-

৩- যারা হজ্বে যায়নি, তাদের জন্য জিলহজ মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত এবং আরাফার দিনের একটি বিশেষ দোয়া।

ফজিলত-

হযরত আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭৪০)

তবে যারা হজে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৮১৭২,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল,হাদীস নং-২৩৯২৩, আল মুজামুল আওসাত, হাদীসনং-২৫৫৬)

হযরত উম্মুল ফযল রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- লোকেরা আরাফার দিন নবী কারীম (সা.) রোযা রেখেছেন কী না? তা নিয়ে সন্দেহে পতিত হলে আমি রাসূল (সা.) এর পানীয় প্রেরণ করলাম, আর নবীজী (সা.) তা পান করলেন। (ফলে সবাই নিশ্চিত হলেন যে, রাসূল (সা.) রোযা রাখেননি।) (সহীহমুসলিম, হাদীস নং- ২৬৫১)

নোট- উলামাদের মতে, এই রোজার দিন হল যার যার দেশের ৯ই জিলহজ যখন আসে তখন অর্থাৎ সৌদি আরবের ৯ই জিলহজের সাথে মিলিয়ে নয়।

আরাফার দিনের দোয়া-

ইখলাছ ও বিশ্বাসের সাথে এ দিনে নিম্নোক্ত কালিমাটি বেশী বেশী পড়া উচিত। নবীজী আরাফার দিন এ কালিমাটি খুব বেশী পড়তেন। (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯২২ )

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلٰى كُلَّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ

বাংলা উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুলহামদু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্কদির।

৪- তাকবীরে তাশরিক বলা

জিলহজ মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে,আর মহিলাদের জন্য নিরবে।

তাকবীরে তাশরিক হচ্ছে :

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبرو الله اكبر ولله الحمد

উচ্চারণ- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”

নামায জামাতের সাথে হোক বা একাকি, পুরুষ মহিলা সবার জন্য প্রতি ফরয নামাযের পর এ তাকবীরটি একবার বলা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে বলবে আর মহিলারা অনুচ্চস্বরে। নামায কাযা হয়ে গেলে তা আদায়ের পরও তাকবীর বলবে। কাযা নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে গেলে পরে তা কাযা করার কোন বিধান নাই। (ফাতওয়া শামী-তৃতীয়খন্ড,৬১ পৃষ্ঠা,সালাত অধ্যায়,ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)

ফজিলত-

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরিকের শেষদিন পর্যন্ত পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ [আসর নামায] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন। (সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং-৫৬৮১)

৫- ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে কুরবানী করা।

১০, ১১ বা ১২ জিলহজের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, (বর্তমান বাজার মূল্যে যা ৮৪,০০০/= প্রায়) তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য। (ফাতওয়াশামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭, ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২)

ফজিলত-

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয়। কুরবানীর পশু সকল শিং, তাদের পশম ও তাদের খুরসহ কেয়ামতের দিন (কুরবানীদাতার পাল্লায়) এসে হাজির হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানী করবে। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৯৩,মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীসনং-৭৫২৩, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২১৫৩)

যায়েদ বিন আরকাম রাঃ বলেন-রাসূল (সা.) এর সাহাবাগণ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফজিলত কী? উত্তরে তিনি বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা পুণরায় আবার বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন- কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়) তিনি বললেন- ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদীস নং-৩১২৭)

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে ইবাদাত করে আখিরাতের সম্বল হাসিল করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : রাসেল আহমাদ বিন জাকির

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button