কালীগঞ্জটপ লিড

প্রেমে ব্যার্থ হয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম \ লোমহর্ষক কেয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দাদপুর গ্রামে ৩ বন্ধু মিলে ধর্ষণ করে নববধু কেয়ার লাশ মাটিচাপা দেয় ব্যার্থ প্রেমিক মিলন ও তার সহযোগিরা। লাশ উদ্ধারের ৩ মাস পর হত্যার মুল রহস্য উদঘাটন করলো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যাকারী ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-কালীগঞ্জের ত্রীলোচনপুর গ্রামের সলেমান হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (২৬), একই গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে ইসরাফিল (২৫) ও আজগর আলীর ছেলে আজিম (২৬)।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাদপুর গ্রামের একটি রাস্তার পাশ থেকে চুলের ক্লীপ, মাথার চুল ও একটি স্যান্ডেল পাওয়া যায়। যার সুত্র ধরে ওই গ্রামের মাঠের মধ্যে থেকে কলাগাছ ও গাছের পাতার নিচে মাটিতে পুঁতে রাখা গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশটি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রীলোচনপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে কেয়া খাতুনের বলে পরিচয় শনাক্ত করে নিহতের স্বজনরা। যিনি ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান বলেন, লাশ উদ্ধারের পর হত্যার মোটিভ উদ্ধার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকারীদের কোনপ্রকার আলামত না পেয়ে ক্লু-লেস এ মামলার তদন্তে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরে কেয়ার বিয়ের আগে ও পরে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করা হয়। এতে জানা যায়, নিহত কেয়ার সাথে ৩ বছর আগে থেকে একই গ্রামের সলেমানের ছেলে মিলন হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিবার থেকে একই উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাইক্রো চালক সাবজাল হোসেনের সাথে কেয়াকে বিয়ে দেয়। কেয়ার বিয়ে দেওয়ার পর মিলন হোসেন প্রেমে ব্যার্থ হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে এমন সন্দেহে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর এলাকায় ছদ্দবেশে অভিযান শুরু করে পুলিশ।

কয়েকদিনের অভিযানের এক পর্যায়ে ১৬ মার্চ জীবননগরের হাসাদাহ এলাকা থেকে মিলনকে আটক করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশ্নবানের এক পর্যায়ে মিলন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী প্রদাণ করে এবং তার সাথে ইসরাফিল ও আজিম জড়িত এমন তথ্য প্রদাণ করে। মিলন গ্রেফতার হওয়ার পর আসামী ইসরাফিল ও আজিম গা ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরাফিলকে ২৭ মার্চ গ্রেফতার করলে সেও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে ২ জনের বক্তব্য একই রকম হওয়ায় ইসরাফিল হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেই সাথে আজিমও জড়িত সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায়। ২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ৩য় আসামী আজিমকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। দীর্ঘ প্রায় ৩ মাসের চেষ্টায় গত মঙ্গলবার (০২ জুন) কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে আজিমকে গ্রেফতার করা হয়। সেও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দিয়েছে।

হত্যার দিনের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামীদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২৬ ফেব্রæয়ারি রাত ৮ টার দিকে কেয়া খাতুনকে ব্যার্থ প্রেমিক মিলন তার বাবার বাড়ী থেকে ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়ী থেকে ২ কিলোমিটার দুরের মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মিলন তাকে ধর্ষণ করে। পরে একে একে আজিম ও ইসরাফিল তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর মিলন বাশের লাঠি দিয়ে কেয়ার মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। সেখানে পাশের বাড়ি থেকে একটি কোদাল এনে রাস্তার পাশে মাটি চাপা দিয়ে কলাগাছ ও কলাগাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যায়। প্রেমে ব্যার্থ হয়েই মিলন অন্যসহযোগিদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

দ্রæততম সময়ে লোমহর্ষক কেয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান ও জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button