অন্যান্য

দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ বাড়লো

#ঝিনাইদহের চোখঃ

বহু আলোচিত দ্রুত বিচার আইন আরও পাঁচ বছর চালু রাখতে সংসদে বিল পাস হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুতবিচার) (সংশোধন) বিল- ২০১৯’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। তা কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। তবে দেড় দশক আগে বিএনপি আমলে আইনটি প্রণয়নের সময় বিরোধিতা ছিল যাদের, সেই আওয়ামী লীগই আইনটির মেয়াদ আরও বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সেই বিএনপি এবার আইনটি পাসের সময় আপত্তি দিয়েছে।

জানা যায়, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য বিদ্যমান আইনের মেয়াদ আরো ৫ বছর বৃদ্ধির বিধান করে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার)(সংশোধন) বিল,২০১৯ সংসদে পাস করা হয়েছে। বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা ১ এর উপধারা (২) এ উল্লেখিত ‘সতরো বৎসর’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘বাইশ বৎসর’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

২০০২ সালে ২ বছর মেয়াদ রেখে এই আইন প্রথম প্রণয়ন করা হয়। এরপর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ৬ বার আইনটি কার্যকারিতার মেয়াদ ১৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল আইনটির মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়েছিল। এর মেয়াদ গত ৯ এপ্রিল শেষ হয়ে যায়।

এ জন্য আইনটির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এ আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিধান করা হয়েছে। বিলে উল্লেখিত মেয়াদ চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার বিধান করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২৫ জুন বিলটি সংসদে তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তখন বিলটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

এ আইনে দোষী প্রমাণিত হলে দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। প্রতি জেলায় গঠিত এক বা একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ আইনের মামলার বিচার চলে।

দ্রুত বিচার আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার বিধান আছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় প্রস্তাবিত আইনকে ‘নিপীড়নকারী আইন’ আখ্যায়িত করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, যেসব উদ্দেশ্যে এই আইনটি হয়েছে, তার সবগুলো অপরাধের সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত। কিন্তু গত ১০ বছরে তাদের নামে এই আইনে একটি মামলা হয়েছে, এমন কোনো নজির নেই। উল্টো এ সময় বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নতুন করে এই আইন পাস হলে সেটাও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার এই আইনটিতে মজা পেয়ে ২০১৪ সালে একবার বাড়িয়েছে। এখন আবার বাড়াচ্ছে। সরকার আইনটিকে স্থায়ী না করে যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে ততদিনের জন্য এর মেয়াদ বাড়াচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে তারা বিরোধী দলকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই তারা এটা করছে।

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, আইনটি প্রণয়নের পর থেকে এটি প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগ বেশি হয়েছে। বিরোধী দল ও জোটকে দমনে এটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণ মানুষ কখনো এই আইনের সুফল পায়নি।

তিনি আরো বলেন, ২০০২ সালে এই আইনটি যখন প্রথমে পাস হয় তখন বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। তারা আইনটিকে কালো আইন আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করে বলেছিল, এটি আওয়ামী লীগ নিধনের আইন। কিন্তু এখন তাদের দেখছি ভিন্ন সুর।”

বিএনপির অভিযোগের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আইনটি ২০০২ সালে প্রণীত হয়েছিল এবং ওই সময় আমাদের (আওয়ামী লীগ) নামে শত শত মামলা করেছিল। তাদের নেতাকর্মীরা আমাদের বাড়িঘর লুট করেছিল। সেই সময় তাদের নামে এ আইনে কোন মামলা হয়নি। উনারা কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়েছেন বলেই আজ এটা আমি বললাম।

হারুনুর রশীদের কথার জবাবে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তাদের নামে এই আইনে কয়টি মামলা হয়েছে, এই সংসদের মাধ্যমে আমরা তা জানতে চাই। তারা যে ধ্বংস এবং অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য অপরাধ করেছে, তার জন্য ধ্বংসের মামলা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের অধীনে দু’একটির বেশি বোধহয় হয়নি। উনারা যদি শত শত মামলা হয়েছে তার প্রমাণ করতে পারেন, তা আমরা দেখতে চাই।

যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ করে তিনি বলেন, কেবল সময় বাড়ানোর জন্যই এই আইনটির সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এজন্য জনমত যাচাইয়ের নোটিশ যুক্তিসংগত নয়।

এদিকে আইনটির সংশোধনী প্রস্তাবের উপর বক্তব্যে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই সংসদে শুনলাম ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এই বিলটি গৃহীত হয়। এখন বিএনপি দোষারোপ করল, আওয়ামী লীগ এই আইনের স্বাদ গ্রহণ করছে। আবার মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বললেন ওই সময় (২০০২) আওয়ামী লীগকে ওই আইনের মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছিল। আপনারা দুইপক্ষই এই কালো আইনকে স্পর্শ করেছেন। তার একটা প্রমাণ এই সংসদে দিয়ে গেলেন। তবে, আমরা জাতীয় পার্টি এ থেকে অনেক দূরে আছি। দোয়া করবেন আমরা যেন জনগণের জন্য কাজ করতে পারি। কোনো কালো আইন যেন আমাদের স্পর্শ করতে না পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button