ঝিনাইদহের চোখঃ
১২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শৈলকূপা উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্মসুত্র খুঁজতে গেলে দৃষ্টি দিতে হবে আজ থেকে ১ শত ২৫ বছর আগে বাংলার প্রেক্ষাপটে। ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এদেশে তখন ইংরেজদের প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। শাসন কার্যের সুবিধার জন্য শুরু হয়েছে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার। নবাবী আমলের দরবারি ভাষা ফার্সি হারিয়েছে তার গৌরব। এই যুগসন্ধিক্ষণে শৈলকূপার এক সাধারণ বস্ত্র ব্যবসায়ী রামলাল সাহা অনুধাবন করেছিলেন তাঁর সন্তানদের দিতে হবে যথোপযোগী শিক্ষা।
কিন্তু সেই শিক্ষা তখন সীমাবদ্ধ ছিল ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে। ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে বাংলায় এসেছে তথাকথিত নব্য রেঁনেসাস- এর হাত ধরে।সেই রেনেসাস এর যুগে ইংরেজি শিক্ষা সীমিত ছিল কলকাতার কিছু জেলা শহরে। একশত পঁচিশ বছর আগে তখন প্রায় অগম্য স্থান শৈলকূপায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি কোন অাধুনিক বিদ্যালয়।
এই প্রেক্ষাপটে রামলাল বাবু তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র কিশোর মতিলালকে পাঠালেন নবদ্বীপের এক স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। নবদ্বীপে স্কুলের পাঠ শেষ করে যুবক মতিলাল কলকাতায় সওদাগরী অফিসে আকর্ষণীয় বেতনে চাকুরীতে যোগদান করেন।
জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলেও মতিলালবাবু মনে শান্তি পান না। তিনি বুঝেছিলেন, তাঁর পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য তাঁর পক্ষে শৈলকুপার বাইরে গিয়ে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা অর্জন সম্ভব হলেও সাধারণ ঘরের ছেলেদের পক্ষে সেই সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি প্রতিনিয়ত দংশন করতো যুবক মতিলালকে।
তিনি স্থির করলেন কলকাতায় সওদাগরী অফিসের আকর্ষণীয় চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে শৈলকূপায় ফিরে গিয়ে আধুনিক শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করবেন।
শৈলকূপায় ফিরে কতিপয় বিদ্বোৎসাহী যুবককে সংগে নিয়ে শৈলকূপা ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগঞ্জ থেকে সামান্য দান গ্রহণ করে মতিলাল সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠা করেন শৈলকূপা হাই স্কুল ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে। সে-দিনের সেই আত্মত্যাগ ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের মধ্য দিয়েই তিনি আজ ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের মনে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন ও থাকবেন।