পাঠকের কথা

শপিং নয়, বিপন্ন মানুষের সেবায় কাটুক এবারের ঈদ—মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু

ঝিনাইদহের চোখঃ

মহামারি করোনাভাইরাসের কারনে এক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে বিশ্ব। বিগত একশ বছরে বিশ্ব এত বড় সংকটে পড়েনি। করনোর ভয়াল থাবা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। ফলে সংকটে পড়েছে দেশ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের হাজার হাজার মানুষ। তবুও এই সংকট নিরসনে মানুষ নিরলসভাবে কাজ যাচ্ছে। নির্দ্বিধায় গরীব, অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়েছে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান।

বিভিন্নভাবে সমাজের বিত্তবান শ্রেণীর মানুষ সাহায্য সহযোগিতা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের ক্রীড়া জগতের খেলোয়াড়রাও এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এছাড়া অনেক বাড়িওয়ালা তাদের ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করেছেন। যা এই করোনাযুদ্ধে মহৎ কাজ হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

চলছে পবিত্র রমজান মাস। যেই মাসকে ইসলাম খুবই ফজিলতের মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলাম বলছে, এই মাসে দান করলে অন্য মাসের চেয়ে সাত থেকে সাতশোগুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসের বেশ কয়েকটা দিন শেষ হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সরকার সীমিত আকারে দোকানপাট, শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে অধিকাংশ শপিংমলের কর্তৃপক্ষ, দোকানপাট সমিতির নেতৃবৃন্দ করোনা ঝুঁকি বিবেচনায় দোকানপাট, শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

মানুষ ঈদ উপলক্ষে শপিং বাবদ হাজার হাজার টাকা বাজেট রাখে। নতুন পোশাক ও অনুষঙ্গ কেনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এবারে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলা অত্যন্ত জরুরি। ফলে এমন পরিস্থিতিতে নিজেরও পরিবারের জন্য অযথা ঝুঁকি না নিয়ে সবাই এবারের ঈদ ঘরে বসেই উদযাপন করাই হবে মঙ্গল। একইসঙ্গে যদি আমরা আমাদের শপিং বাজেটের কিছু অর্থ দিয়ে আর্তমানবতার সেবায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে পরম করুণাময় খুশি হবেন।

করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে পরবর্তী ঈদে আরো বেশি আনন্দ উৎসব করতে পারব সেটাই আমাদের লক্ষ্য হোক। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সভা ডেকে মুজিববর্ষের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটির আওতায় নিয়ে আসেন।

যা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। স্থগিত আছে গণপরিবহন, রেল ও বিমান চলাচল। অন্যদিকে করোনাভাইরাস দুর্যোগে সারাদেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া চার কোটি মানুষকে ত্রাণ দিয়েছে সরকার।

৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে পর্যন্ত চাল বরাদ্দ করা হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ আট হাজার মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার ৯৪ লাখ ১ হাজার ৭৫৪টি এবং লোকসংখ্যা চার কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৮ জন।

ত্রাণ হিসেবে নগদ বরাদ্দকৃত প্রায় ৭৪ কোটি টাকার মধ্যে ৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৫৫ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার ৫৬ লাখ ১২ হাজার ৩২৮টি এবং লোকসংখ্যা ২ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার ৯০ জন।

শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দকৃত ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬১২টি এবং লোকসংখ্যা ৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৭ জন। সরকারের পাশাপাশি সারাদেশে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গরিব মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দলের পক্ষে সারাদেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।

এছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যার সেবা এখনো চলমান।

সেই সাথে সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি পালন করে আসছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ইফতার, সেহরি ও বিনামূল্যে সবজি বিতরণ এবং টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

করোনা সংকটকালে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের মধ্যে রংপুর বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার ৫২৬ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ৩৯ লাখ টাকা।

রাজশাহী বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৪ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। খুলনা বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪২ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ৯৮ লাখ
২০ হাজার টাকা।

বরিশাল বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৪৩৫ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ৯৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ঢাকা বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৮ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ময়মনসিংহ বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ১২৫ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সিলেট বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৩ লাখ ৭৮৭ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৪১০ পরিবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ও আওয়ামী লীগ মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। গরীব, অসহায় মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। এর বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো কাজ করছে। নিজেদের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। যা এই সংকটে একটু হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শেরপুরের ভিক্ষুক নজিম উদ্দিন তার জমানো ১০ হাজার টাকা ইউএনও এর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়ে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিল। তার এই মহৎ কাজের জন্য সবাই বাহবা দিয়েছেন। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার এই মহৎ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাড়ি, দোকান ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। নিজের দেশের অসহায় মানুষের একটু কষ্ট লাঘব করতে আমরা কি পারি না এই বছর ঈদের শপিংয়ের অর্থ দান করে দিতে? দেশের সব মানুষ যদি তাদের শপিং করার অর্থ নির্দ্বিধায় অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন তাহলে করোনা যুদ্ধে বিজয়ীর পথে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে যাব। সংকট কেটে যাবে। দেশ একদিন করোনার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তখন আমরা আবার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবো। তাই আসুন আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে সরকারকে সহযোগিতা করি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button