অন্যান্য

পাঁচগুণ মুনাফায় বিক্রি হচ্ছে ‘ভালোবাসা’

 

ঝিনাইদহের চোখ:
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মনের মানুষকে গোলাপ উপহার না দিলে যেন ভালোবাসার জানান দেয়া যায় না। তাইতো ভালোবাসা (গোলাপ) কিনতে ফুলের দোকানে ছুটছে তরুণ-তরুণীরা। আর এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাঁচগুণেরও বেশি মুনাফায় গোলাপ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে প্রেয়সীকে ভালোবাসা জানান দিতে চড়া দামে গোলাপ কিনতেও কার্পণ্য করছেন না তরুণ-তরুণীরা।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরের তিনটি দিন সব থেকে বেশি ফুল বিক্রি হয়। এর মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস) একটি। অন্য দুইদিন হলো- পহেলা ফাগুন (১৩ ফেব্রুয়ারি) এবং একুশে ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস)।

আরও পড়ুন : ভালোবাসার ফুল ফুটেছে শাহবাগে

ব্যবসায়ীদের মতে, সারা বছর যে ফুল বিক্রি হয়, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রায় তার সমান বিক্রি হয়। ১৩, ১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরাও ভালো মুনাফা করার সুযোগ পান। যে কারণে ফেব্রুয়ারি মাসটির জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীতে ফুলের সব থেকে বড় বাজার শাহবাগ। এখানকার বিভিন্ন ফুল ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যবসায়ীরা সম্মিলিত ভাবে ৫-৭ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন। এর মধ্যে ভালোবাসা দিবসে সব থেকে বেশি বিক্রি হয় গোলাপ। যে কারণে অন্য ফুলের তুলনায় এদিন গোলাপের দাম বেশি থাকে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। সাধারণ সময়ে যেটি পাঁচ টাকায় পাওয়া যায়।

গোলাপের পাশাপাশি বেড়েছে অন্য ফুলের দামও। রজনীগান্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। গাঁদা ফুলের একটি মালা ৩০-৫০, অর্কিট ৬০-৮০, লিলি ২৫০-৩০০, জারবেলা ৩০-৪০, কেলোনজরা ১০-১৫, ফুলের তোড়া ১০০-২০০, মাথার রিং ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাহবাগ থেকে গোলাপ কেনা রোমেল বলেন, গোলাপটির দাম নিয়েছে ৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এখানে একটি গোলাপ পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে দেখেছি। তবে আজ ৩০ টাকায় গোলাপ কিনতে পেরেছি-এতেই খুশি। কারণ ধারণা ছিল ৫০ টাকার নিচে গোলাপ পাওয়া যাবে না। টাকা একটু বেশি গেল তাতে কি, ‘ওকে’ তো গোলাপ উপহার দিতে পারব। আজকের দিনে গোলাপ না দিলে যে ভালবাসায় থাকে না।

শাহবাগে আনিকা পুষ্প বিতানের প্রোপাইটার মো. আবুল কালাম বলেন, পহেলা ফাগুনে বেশ ভালো ব্যবসা হয়েছে। গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) সব থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে ফুলের তোড়া ও মাথার রিং। পাশাপাশি রজনীগান্ধার মালা, রক্তজবা ও চন্দ্রমল্লিকার সমন্বয়ে মালাও ভালো বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ফুলের ব্যবসা করছি। বরাবরই ১৪ ফেব্রুয়ারি গোলাপ ফুল সব থেকে বেশি বিক্রি হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ভোর থেকেই বিক্রি শুরু হয়েছে। আমার ধারণা ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি এই দুই দিনে শাহবাগ থেকে চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

‘এ দুই দিনে শাহবাগের প্রায় ৫০টি দোকানের প্রতিটিই কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করবে। তবে যাদের দোকান বড় এবং মাল বেশি তাদের বিক্রিও বেশি। আমার ধারণ শাহবাগের সব ব্যবসায়ী মিলে এ দুই দিনে প্রায় কোটি টাকা মুনাফা করবেন’-বলেন মো. আবুল কালাম।
গোলাপের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি গোলাপের প্রচুর চাহিদা থাকে। যে কারণে ফুল চাষিরাও দাম বাড়িয়ে দেন। বেশি দামে কেনার কারণে আমাদেরও বিক্রি করতে হয় বেশি দামে।

নিউ লাভ লাইন পুষ্পালয়ের মো. রবেন বলেন, শাহবাগে সব থেকে বেশি ফুল বিক্রি হয় পহেলা ফাগুনে, বসন্ত উৎসবে। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশি বিক্রি হয় গোলাপ। এ দুই দিনে এখানকার দোকানগুলোতে ৫-৭ লাখ টাকার ওপরে ব্যবসা হয়।

তিনি বলেন, আমরা যারা ফুলের ব্যবসা করি তাদের ভালোবাসা হলো ফুল। ব্যবসা ভালো হলে আমরা ভালো থাকি। তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে গোলাপ দিয়ে ভালবাসার জানান দেয়। আর বিক্রি করে মুনাফা করতে পারলে ফুলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বেড়ে যায়। পহেলা ফাগুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রি করে মুনাফা করলে সবার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। সাধারণত বছরের প্রায় প্রতিদিন অনেক ফুল ক্রেতার অভাবে নষ্ট হয়। সে সময় কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button