ধর্ম ও জীবন

জান্নাতিদের জীবন-যাপন যেমন হবে

ঝিনাইদহের চোখঃ

মানুষের দুনিয়ার চাকচিক্য ও ধন-সম্পদের ঐশ্বর্য এবং নারীসহ আকর্ষণীয় বস্তুর মোহের বর্ণনার পর জান্নাতের সুখ-শান্তি ও নেয়ামতের বর্ণনা করেছেন। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে জান্নাতের ও জান্নাতবাসীদের নেয়ামত, পারস্পরিক সাক্ষাত এবং জান্নাতের জীবনাচরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

মুমিন বান্দা জান্নাতে যা চাইবে তা-ই পাবে। জান্নাতে যেমন জীবন-যাপন করার ইচ্ছা পোষণ করবে তাদের জীবনাচার তেমনিই হবে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে জান্নাতবাসীদের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখা-সাক্ষাৎ ও জীবনাচার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-

– হজরত শফি ইবনে মানে’ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের নেয়ামতের মধ্যে এটি একটি নেয়ামত যে, জান্নাতবাসীগণ পরস্পর উট ও ঘোড়ার ওপর আরোহন করে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবে। বিশেষ করে জুমআর দিন লাগাম ও জিনসহ ঘোড়া হাজির করা হবে। আর এ ঘোড়াগুলো মলমূত্র ত্যাগ করবে না। জান্নাতবাসীরা এসব ঘোরার ওপর আরোহন করে আল্লাহর ইচ্ছায় যেখানে মন চায় সেখানে যাবে।’

– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের একটি বিশাল গাছ রয়েছে, যার ওপরের অংশ থেকে জান্নাতিদের পরিধানের জন্য পোশাক বের হবে এবং নিচের দিক থেকে সোনার ধূসর রঙের ঘোড়া বের হবে।

আর ঘোড়াগুলোর লাগাম ও জিন হবে ইয়াকুত ও মুক্তার। এ ঘোড়াগুলোর থাকবে ডানা। এ ডানাগুলো ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে যতদূর দৃষ্টি যায়। এ ঘোড়াগুলো মলমূত্র ত্যাগ করবে না।

আল্লাহর বন্ধুগণ এ ঘোড়াগুলোতে আরোহন করবেন। জান্নাতিরা যেখানে যেতে চাইবেন, সেখানে উড়ে চলে যাবেন।
উড়ন্ত অবস্থায় নিচ থেকে যারা তাদেরকে দেখবেন তারা বলবেন এরা আমাদের আলোকে নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন।
তখন তাদেরকে জবাব দেয়া হবে যে, তারা দুনিয়াতে আল্লাহর পথে দান করতো আর তোমরা কার্পণ্য করতে, তারা জেহাদ করতো আর তোমরা বসে থাকতে।’ (তাফসিরে মাজহারি)

– হজরত রাবিয়া হারসি বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে স্বপ্নে বলা হয়েছে যে, একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি একটি বড় বাড়ি নির্মাণ করেছেন। অতঃপর সে বাড়িতে দস্তরখান বিছিয়েছেন। আর লোকজনকে একত্রিত করার জন্য একজন ঘোষক নিয়োগ দেন। সে ঘোষকের আহ্বানে যারা সাড়া দিয়ে দস্তরখানে খাবার গ্রহণ করেছেন; সে মহান ব্যক্তি তার (অংশগ্রহণকারীদের) প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।

পক্ষান্তরে যারা এ দাওয়াত কবুল করেনি এবং সে ঘরে আসেনি, খাবার গ্রহণ করেনি; সে ব্যক্তির প্রতি বাড়ির মালিক নারাজ হয়।

অতঃপর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, বাড়ির মালিক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। আর সে ঘোষক হলেন হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বাড়ির দস্তরখান হলো আল্লাহ তাআলা ঘোষিত চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাত।’ (দারেমি)

কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা, জান্নাতবাসীদের পারস্পরিক সম্পর্ক, জীবনাচরণসহ বিশদ আলোচনা করার কারণ হলো মানুষ দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের ধন-সম্পদ, চাকচিক্য, আরাম-আয়েশের পেছনে না ছুটে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রতি মোহ তৈরি করা। কুরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আখেরাতের সাফল্য লাভে নিজেকে এগিয়ে নেয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জান্নাতের অনূভূতি হৃদয়ে পোষণ করে পরকালের সফলতায় নিজেকে তৈরির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button