কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল কালীগঞ্জের প্রিন্স

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

১৩ ফুট প্রস্থ্যের গোলাকার আর সাড়ে তিন ফুট গভীর হাউজে করা হচ্ছে মাছ চাষ। পাশাপাশি এরকম চারটি পানি ভর্তি হাউজ রয়েছে। প্রতিটি হাউজে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি। প্রতিটি হাউজে একাধিক পাইপের মাধ্যমে এয়ার অক্সিজেন সর্বরাহ করা হচ্ছে। এসব হাউজে জিরো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের পোনা রাখা হয়েছে। প্রতিটি হাউজে এরকম মাছ চাষ পদ্ধতিকে বায়োফ্লক পদ্ধতি বলে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের তানভীর হোসেন প্রিন্স নামে এক সফল উদ্দ্যোক্তা। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব বলে উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে। তার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১৪ টি হাউজে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ চাষ করা হচ্ছে।

এর আগে মুরগী পালনের পাশাপাশি গাভীর খামার করে ভাগ্য বদলেছে শিক্ষিত যুবক তানভীর হোসেন প্রিন্স। বাবা মা দু’জনেই শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে গেছেন। ছোটভাই তানজির হোসেন পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ব্যবসা করছেন। একমাত্র বোন শামিমা হোসেন রিপা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। প্রিন্স নিজেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স শেষে এখন গ্রামের বাড়ির পৈত্রিক ৩৫ বিঘা জমির উপর দেশি ও সোনালী মুরগীর ফার্ম করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার ফার্মে চার হাজারের অধিক মুরগি রয়েছে। মুরগী পালনের পাশাপাশি চলছে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর কাজ। রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপরাইল হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে প্রিন্স। উপজেলার বেথুলী গ্রামের তাদের বাড়ি।

তানভীর হোসেন প্রিন্স জানান, ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ হতে মাস্টার্স শেষ করে সেলস্ রিপ্রেজেনটেটিভের চাকরি নেন ওষুধ কোম্পানিতে। সেখান থেকে দুই বছর পরে যোগদান করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। আড়াই বছর পর চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। ২০০০ সালে নিজের কাছে থাকা ও বাবা-মায়ের দেয়া মোট ৭ লাখ টাকা নিয়ে শুরু করেন ফার্মেও কাজ। প্রথমে গরু কিনে পালন শুরু করেন। সেখানে প্রথম দুই বছরে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা লাভ করেন। ২০০৪ সালে গরু পালনের ওই ঘরেই শুরু করেন বয়লার মুরগী পালন। এতে প্রথম দুই বছর তিন লক্ষাধিক টাকা লাভ করেন। এখান থেকে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের কাছাকাছি ডিম পেয়েছেন।

সফল উদ্দ্যোক্তা প্রিন্স আরো জানান, গরু ও মুরগীর পাশাপাশি এবছর থেকে বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৎস্য অফিসারসহ অনেকে তার মাছ চাষ পদ্ধতি দেখে গেছেন। তার আশা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এছাড়া বেকার যুবকরা অল্প পুজিতে এ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে আশা করেন এই সফল উদ্দ্যোক্তা। তিনি জানান, তার ফার্মে ৬ জন নিয়মিত বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া দৈনিক মুজুরীতে ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। দেশের উন্নয়নে নিজ উদ্যোগে আরো কিছু করার আত্মপ্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান প্রিন্স।

কালীগঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান রেজা জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প খরচে অল্প জাগায় অধিক লাভবান হওয়া যায়। তবে, আমাদের অঞ্চলে নতুন শুরু হয়েছে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ। এখনো এর রেজাল্ট পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক মাস পরে জানা যাবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে হাউজে মাছ চাষের ফলাফল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button